তুমি এত উত্তেজিত হয়ো না। তুমি আগে মাথা ঠান্ডা করে বস।
কিন্তু তুমি আগে বোঝাও। কেন এটা তোমাদের কিছু না জানিয়ে দিক পরিবর্তন করছে? কোথায় চলে যাচ্ছে মহাকাশযানটা?
ক্যাপ্টেন ত্রুব নরম গলায় বলল, তুমি শুধু শুধু উত্তেজিত হচ্ছ য়ুহা। এই মহাকাশযানটা কোথাও চলে যাচ্ছে না। যেখানে যাবার কথা ঠিক সেখানেই যাচ্ছে।
কিন্তু তাহলে এটা দিক পরিবর্তন করছে কেন?
এটা দিক পরিবর্তন করছে না। ওপরে তাকিয়ে দেখ–এখানে একটা মনিটর আছে। এই মনিটরে এটা দেখাচ্ছে যে এটা তার কো-অর্ডিনেট একেবারেই পরিবর্তন করেনি। মহাকাশযানটার যেদিকে যাবার কথা এটা সেদিকেই যাচ্ছে।
কিন্তু কিন্তু এই কোয়ার্টজ গোলক?
আমি ঠিক জানি না তোমার কোয়ার্টজ গোলকটা কী করেছে।
আমি যতবার টেবিলে রেখেছি ততবার বাম দিকে গড়িয়ে গেছে।
ক্যাপ্টেন ত্রুব বলল, তুমি নিশ্চয়ই ঠিক করে রাখনি।
আমার কথা বিশ্বাস না করলে তুমি রাখ টেবিলের ওপর।
ক্যাপ্টেন ক্রব হা হা করে হেসে বলল, তুমি আমাকে বলছ আমি যেন কোয়ান্টাম নেটওয়ার্ককে বিশ্বাস না করে তোমাকে বিশ্বাস করি। কিন্তু আসলে আমি কোয়ান্টাম নেটওয়ার্ককেই বেশি বিশ্বাস করি। কাজেই কোয়ার্টজ গোলকটা টেবিলের ওপর রাখার কোনো প্রয়োজন দেখি না?
য়ুহা মুখ শক্ত করে বলল, ঠিক আছে আমি নিজেই রাখছি। এই দেখ।
য়ুহা কোয়ার্টজের গোলকটা টেবিলের মাঝখানে রাখল এবং সেটা একটুও না নড়ে স্থির হয়ে রইল। ক্যাপ্টেন ক্ৰব কৌতুকের ভঙ্গিতে বলল, কবি য়ুহা, তোমার গোলক তত মোটেও গড়িয়ে যাচ্ছে না।
য়ুহা বিব্রত মুখে বলল, কী আশ্চর্য! এখন নড়ছে না। কিন্তু বিশ্বাস কর আমার ঘরের টেবিলের ওপর যতবার রেখেছি ততবার বাম দিকে গড়িয়ে গেছে!
সম্ভবত তোমার টেবিলে কোনো সমস্যা আছে!
টেবিলে বসে থাকা মধ্যবয়স্ক একজন মানুষ বলল, কোয়ান্টাম নেটওয়ার্কে একটা সমস্যা হওয়া থেকে তোমার টেবিলে সমস্যা হওয়া অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য!
বসে থাকা সবাই শব্দ করে হেসে উঠল।
য়ুহা তার ঘরে চুপচাপ বসে আছে। পাশে বড় টেবিলের ঠিক মাঝখানে সে তার স্বচ্ছ কোয়ার্টজের গোলকটা রেখেছে, সেটা সেখানে স্থির হয়ে আছে। তার টেবিলে কোনো সমস্যা নেই, তাহলে গোলকটা সেখানে এভাবে স্থির হয়ে থাকত না। এই মহাকাশযালে কিছু একটা ঘটছে যেটা সে বুঝতে পারছে না। সে মহাকাশযানের দায়িত্বে নেই—তার এটা নিয়ে মাথা ঘামানোর কথা নয় কিন্তু ভেতরে কিছু একটা খচখচ করছে। কেউ যদি তাকে পুরো বিষয়টা ঠিক করে বুঝিয়ে দিত তাহলে ভেতরের অস্থিরতাটা একটু কমত। বিষয়টা হয়তো খুবই সহজ-খুবই ছেলেমানুষী, সে যেটা বুঝতে পারছে না। যুহ অনেকটা অন্যমনস্কভাবে কোয়ার্টজের গোলকটার দিকে তাকিয়ে থাকে, হঠাৎ সে আবার চমকে উঠল, গোলকট। আবার ধীরে ধীরে বামদিকে গড়িয়ে যেতে শুরু করেছে। য়ুহা গোলকটির দিকে তাকিয়ে থাকেসেটা গড়িয়ে গড়িয়ে টেবিলের কিনারায় পৌঁছানোর পর সে সেটাকে আবার টেবিলের মাঝখানে বসিয়ে দেয়, গোলকটি আবার গড়াতে শুরু করে। এর অর্থ কী? মহাকাশযানটা কি আবার দিক পরিবর্তন করতে শুরু করেছে?
য়ুহা উঠে দাঁড়াল, তাকে ব্যাপারটা বুঝতেই হবে। গোলকটা হাতে নিয়ে ঘর থেকে বের হতেই সে দেখে মিটিয়া হেঁটে যাচ্ছে–য়ুহা গলা উঁচিয়ে
তাকে ডাকল, মিটিয়া।
কী ব্যাপার য়ুহা।
তুমি এক সেকেন্ডের জন্যে আমার ঘরে আসতে পারবে?
অবশ্যই। কী হয়েছে?
সে রকম কিছু না। আমি তোমাকে একটা জিনিস দেখাতে চাই।
কী জিনিস? এই যে এই গোলকটা, দেখ।
য়ুহা গোলকটাকে টেবিলের ওপর রাখল এবং সেটা স্থির হয়ে রইল। মিটিয়া জিজ্ঞেস করল, কী দেখব?
য়ুহা ব্ৰিতভাবে বলল, না, একটু আগেই এটা বাম দিকে গড়িয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু এখন যাচ্ছে না।
মিটিয়া হেসে বলল, তুমি এই গোলকের কথা ভুলে যাও য়ুহা। এটা মনে হয় তোমাকে খুব চিন্তার মাঝে ফেলে দিচ্ছে।
না, চিন্তার মাঝে ফেলেনি। আমি শুধু এটা বুঝতে চাইছি।
এত কিছু বুঝে কী হবে? আমাদের কাছে মহাকাশ ভ্রমণের কিছু মজার অভিজ্ঞতার হলোগ্রাফিক ক্লিপ আছে। বসে বসে দেখ-
য়ুহা বলল, হ্যাঁ। ঠিক আছে। দেখব।
মিটিয়া ঘর থেকে বের হয়ে যাবার সাথে সাথে গোলকটা আবার গড়িয়ে যেতে শুরু করে। য়ুহা ছুটে গিয়ে মিটিয়াকে ডাকতে গিয়ে থেমে গেল, হঠাৎ করে সে বুঝতে পারে মিটিয়াকে ঘরে আনা মাত্রই গোলকটা আবার থেমে যাবে, কেউ একজন তাকে নিয়ে খেলছে। কেন খেলছে?
য়ুহা চিন্তিত মুখে ঘর থেকে বের হয়ে এলো। কন্ট্রোল প্যানেলে হিসান একটা ভিডিও মডিউল খুলে কিছু একটা দেখছিল। য়ুহা তার কাছে গিয়ে বলল, তোমাকে একটা জিনিস জিজ্ঞেস করতে পারি?
কী জিনিস?
যদি মনে কর এই মহাকাশযানের কোয়ান্টাম নেটওয়ার্ক ঠিক করে আমাদের সবাইকে যেখানে নেয়ার কথা সেখানে না নিয়ে অন্য কোথাও নিয়ে যাবে তাহলে কি তোমরা সেটা কোনোভাবে বুঝতে পারবে?
হিসান হেসে ফেলল, কোয়ান্টাম কম্পিউটার কেন সেটা করবে?
য়ুহা বলল, যদি করে?
করবে না।
মনে কর এটা কাল্পনিক একটা প্রশ্ন। যদি করে—
হিসান এক মুহূর্ত চিন্তা করে বলল, না আমরা সেটা বুঝতে পারব। এই মহাকাশযানে আমরা যেটা দেখি, যেটা শুনি তার সবকিছু আসে কোয়ান্টাম নেটওয়ার্ক থেকে। কোয়ান্টাম নেটওয়ার্ক আমাদের হাত-পা, আমাদের চোখ-কান, আমরা আমাদের নিজেদের চোখ-কানকে অবিশ্বাস করব কেমন করে? তবে–