এগুলো আসলে ছেলেমানুষী কাজকর্ম। মানুষ যখন প্রথম শুরু করেছে তখন এর মাঝে সময় দিয়েছে। সময় নষ্ট করেছে। এখন এর মাঝে কোনো নতুনত্ব নেই, তাই কেউ চেষ্টা করে না! তুমি প্রথমবার এসেছ বলে করছ। কয়দিন পর তুমিও আর করবে না।
কিন্তু এখন আমার কাছে এর অনেক নতুনত্ব আছে।
থাকুক। আমার কথা বিশ্বাস কর। একটা কোয়ান্টাম নেটওয়ার্ককে মানুষের চেহারায় দেখে মানুষের কণ্ঠে কথা বলিয়ে কোনো লাভ নেই। কোয়ান্টাম নেটওয়ার্ক মানুষ না। তার অনুভূতি মানুষের অনুভূতির নয়। তার ইন্দ্রিয় মানুষের ইন্দ্রিয় নয়।
য়ুহা বলল, কিন্তু আমি তোমার সাথে মানুষের ভাষায় কথা বাজে চাই।
কেন?
আমি তোমার বুদ্ধির একটা পরিমাপ করতে চাই।
কোয়ান্টাম নেটওয়ার্ক একটা হাসির মতো শব্দ করল, বলল, আমার জানামতে সে রকম কোনো গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি নেই।
আমার কোনো গ্রহণযোগ্য পদ্ধতির প্রয়োজন নেই। আমি আমার নিজের পদ্ধতি ব্যবহার করব।
তোমার নিজের পদ্ধতি কী?
একটা প্রাণীর বুদ্ধিমত্তা যখন খুব উপরে উঠে যায় তখন সে যুক্তির বাইরের কাজ করতে পারে।
সেটা কী?
যেমন, মনে করো সে কবিতা লিখতে পারে।
কোয়ান্টাম নেটওয়ার্ক কোনো কথা না বলে চুপ করে রইল। য়ুহা বলল, আমি তোমাকে কবিতার একটা লাইন বলব। তুমি। তার পরের লাইনটা বলবে। ঠিক আছে?
ঠিক নেই।
য়ুহা অবাক হয়ে বলল, ঠিক নেই?
না। ঠিক নেই। আসলে আমি তোমার সাথে এই প্রতিযোগিতায় যেতে চাই না।
এটা প্রতিযোগিতা না। এটা একটা পরীক্ষা।
আমি এই পরীক্ষা দিতে চাই না।
চেষ্টা কর। দেখি তুমি কতটুকু পার।
আমি একটুও পারব না। আমি আসলে এ ধরনের কাজের জন্যে তৈরি হইনি। আমি এই মহাকাশযানটাকে নিখুঁতভাবে মহাকাশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে নিয়ে যেতে পারব কিন্তু কবিতার একটা লাইনের পিঠাপিঠি আরেকটা লাইন বসাতে পারব না।
য়ুহা মাথা নেড়ে বলল, তুমি চেষ্টা করে দেখ।
তুমি যদি জোর কর, তাহলে চেষ্টা করব।
হ্যাঁ। আমি জোর করছি।
বেশ।
য়ুহা বলল, আকাশের পথে দেখ নক্ষত্রের ঘর–
আকাশের পথে? কিন্তু আকাশ ব্যাপারটা তো একটা কাল্পনিক ধারণা। আকাশ বলে তো কিছু নেই। সেই আকাশের পথ–
য়ুহা বলল, আমি তোমার সাথে এটা নিয়ে তর্ক করতে চাই না। আমি একটা কবিতার লাইন বলেছি, তুমি এর পরের লাইন বল।
কিন্তু সে জন্যে এটা তো একটু বিশ্লেষণ করতে হবে। নক্ষত্র হচ্ছে মহাজাগতিক বিষয়। কিন্তু ঘর শব্দটি অত্যন্ত জাগতিক। মহাজাগতিক নক্ষত্রকে তুমি একটা জাগতিক শব্দ দিয়ে প্রদর্শন করছ
য়ুহা বলল, থাক। আমার মনে হয় তোমার বলার ইচ্ছে নেই।
ইচ্ছের ব্যাপার নয়—এটা হচ্ছে—
থাক তোমার আর চেষ্টা করতে হবে না।
তুমি তুমি কী আমার ওপর ক্রুদ্ধ হয়েছ?
না। হা মাথা নাড়ল, মানুষ কখনো যন্ত্রের ওপর ক্রুদ্ধ হয় না।
শুনে একটু স্বস্তি পেলাম।
ঠিক আছে তাহলে, বিদায়।
য়ুহা চলে যেতে গিয়ে হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেল। বলল, কোয়ান্টাম নেটওয়ার্ক। তোমাকে আরেকটা প্রশ্ন করতে পারি।
কর।
তুমি কী কখনো মিথ্যা কথা বলেছ?
মিথ্যা কথা?
হ্যাঁ।
না। আমি কেন মিথ্যা কথা বলব। আমাদের কখনো মিথ্যা কথা বলার প্রয়োজন হয় না। এটা তোমাদের ব্যাপার। মানুষকে প্রয়োজনে এবং কখনো কখলো অপ্রয়োজনে মিথ্যা কথা বলতে হয়। শুধু মানুষকে। আমাদের নয়।
কোয়ান্টাম নেটওয়ার্ক, বিদায়।
বিদায়।
য়ুহা তার ঘরে ঘুমানোর আগে টেবিলের পাশে এসে দাঁড়ায়। বড় টেবিলের ঠিক মাঝখানে স্বচ্ছ কোয়ার্টজের গোলকটি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এক চুল নড়েনি। কোয়ান্টাম নেটওয়ার্ক অবিশ্বাস্য নিখুঁত গতিতে এই মহাকাশযানটিকে মহাকাশে উড়িয়ে নিতে পারে কিন্তু একটা সহজ কবিতা। লাইন তৈরি করতে পারে না!
য়ুহার ঘুম হলো ছাড়া ছাড়া। ঘুম থেকে উঠে সে কিছুক্ষণ তার বিছানায় বসে রইল। ঠিক কী কারণ জানা নেই সে নিজের ভেতরে এক ধরনের বিষণতা অনুভব করে। সে বিছানা থেকে নেমে টেবিলটার দিকে তাকালোসাথে সাথে তার চোখ বিস্ফারিত হয়ে যায়, স্বচ্ছ কোয়ার্টজের গোলকটি খুব ধীরে ধীরে বাম দিকে গড়িয়ে যাচ্ছে।
পুরো এক মাস মহাকাশযানটির এক দিকে যাবার কথা। কিন্তু মহাকাশযানটি দিক পরিবর্তন করছে। কেন?
য়ুহা যখন তার হাতে কোয়ার্টজের গোলকটা নিয়ে ছুটে এসেছে তখন খাবার টেবিলে ক্যাপ্টেন ক্ৰবের সাথে তার কমান্ডের আরো চারজন বসে আছে। য়ুহাকে দেখে ক্যাপ্টেন ত্রুব একটু অবাক হয়ে বলল, কী ব্যাপার হা? তুমি এভাবে ছুটে আসছ কেন?
তোমরা বলেছ এই মহাকাশযান সোজা সামনের দিকে। দি পরিবর্তন করবে না। ঠিক কী না?
হ্যাঁ ঠিক। বলেছি।
কিন্তু মহাকাশযানটি দিক পরিবর্তন করছে।
ক্যাপ্টেন ক্ৰবের মুখে একটা হাসি ফুটে উঠল, হাসি হাসি মুখেই বলল, তুমি কেমন করে জান?
য়ুহা তার হাতের কোয়ার্টজ গোলকটা দেখিয়ে বলল, এই গোলকটা আমার টেবিলে রাখা ছিল, এটা বাম দিকে গড়িয়ে যেতে শুরু করেছে।
হয়তো তোমার হাতে টোকা লেগে গড়িয়ে গেছে।
না। য়ুহা মাথা নেড়ে বলল, আমি অনেকবার পরীক্ষা করে দেখেছি। হাতের কোয়ার্টজ গোলকটা ক্যাপ্টেন ক্ৰবের দিকে এগিয়ে দিও বলল, আমার কথা বিশ্বাস না করলে তুমি নিজে পরীক্ষা করে দেখ।
ক্যাপ্টেন ক্রব কোয়ার্টজ গোলকটা নেয়ার চেষ্টা করল না, হাত ও বলল, য়ুহা তুমি বস।
হ্যাঁ, বসব। কিন্তু তুমি আমাকে আগে বোঝাও। আসলে মহাকাশযানটার সোজা সামনের দিকে যাবার কথা, কিন্তু এটা কি পরিবর্তন করছে। কেন করছে?