সে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে বলল, কম্পিউটার শেফ কি আছে? আমি কথা বলতে চাচ্ছি। আমি খুব অস্থির বোধ করছি। এই মুহূর্তে আমার কারো সঙ্গে কথা বলা দরকার।
কম্পিউটার শেফ্ এর গলা শোনা গেল। মিষ্টি চাপা গলা। মানুষের গলার স্বর এবং কম্পিউটারের গলার স্বরে একটু তফাত আছে। মানুষের গলার স্বর কথা বলা বন্ধ করার পরেও কিছুক্ষণ বাতাসে ভেসে থাকে। কম্পিউটারের গলার স্বর থাকে না।
আমি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কম্পিউটার শেফ্। তুমি অস্থির বোধ করছ কেন?
আমাকে একটা ছোট্ট ঘরে আটকে রাখা হয়েছে। অস্থির বোধ করার জন্যে এই কারণটাই কি যথেষ্ট না।
ছোট ঘর কেন বলছ। বারান্দার দৈর্ঘ্য একুশ মিটার। তুমি চাইলে এই দৈর্ঘ্য আরো বাড়ানো যাবে। আরো দশ মিটার বাড়িয়ে দেই? তুমি কি চাও?
না আমি চাই না। বারান্দার দৈর্ঘ্য একশ মিটার হলেও আমার কিছু যায়আসে না। কারণ আমি বারান্দায় আটকা পড়ে আছি। বন্দি হয়ে থাকার ব্যাপারটা তোমরা বুঝবে না। কারণ তোমরা জন্ম থেকেই বন্দি।
আমি একেবারেই যে বুঝতে পারি না, তা না। তুমি প্রায়ই ভুলে যাও যে আমি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন কম্পিউটার।
মানবিক আবেগ কি তোমার আছে?
বুদ্ধির সঙ্গে আবেগের কোন সম্পর্ক নেই।
তুমি আমার প্রশ্নের জবাব দিচ্ছ না। মানবিক আবেগ কি তোমার আছে?
নেই।
কাজেই আমার কষ্ট অনুভব করার কোন কারণ তোমার নেই।
তা অবশ্যি নেই।
এই অবস্থা থেকে আমার মুক্তির কোন উপায় কি আছে?
গত চার বছরে অসংখ্যবার তুমি আমাকে এই প্রশ্ন করেছ। আমি একই। উত্তর দিয়েছি। আবারও প্রশ্ন করছ কেন?
প্রতিবারই প্রশ্ন করার পর মনে হয় হয়ত এ বারের উত্তর অন্যরকম হবে।
না উত্তর অন্যরকম হবে না। বন্দিদশা থেকে তোমার মুক্তির কোন আশা নেই। তোমাকে ঘিরে যে রহস্য তৈরি হয়েছে সেই রহস্য ভেদ না হওয়া পর্যন্ত বিজ্ঞান কাউন্সিল তোমাকে মুক্তি দেবে না। তোমার রহস্যভেদ হবার আশা নেই। বললেই হয়।
অর্থাৎ বাকি জীবন আমাকে এখানে থাকতে হবে? নকল সমুদ্র, নকল। বাগান দেখে কাটাতে হবে?
হ্যাঁ তাই। সমুদ্র দেখে দেখে তুমি যদি ক্লান্ত হয়ে থাক তাহলে সমুদ্রের দৃশ্য বদলাবার ব্যবস্থা আমি করতে পারি। যদিও আমি জানি সমুদ্র ছাড়া অন্য কোন দৃশ্য তোমার ভাল লাগবে না। তোমার সাইকোলজিক্যাল প্রফাইল তাই বলে।
রে ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে বলল, আমি বাতাসের সঙ্গে কথা বলছি বলে মনে হচ্ছে। কথা বলে আরাম পাচ্ছি না। আমার ভাল লাগছে না।
তুমি চাইলে সামনে আসতে পারি। তখন তো তুমি বলবে যন্ত্রের সঙ্গে কথা বলতে ভাল লাগছে না।
বাতাসের সঙ্গে কথা বলার চেয়ে যন্ত্রের সঙ্গে কথা বলা ভাল।
রোবট শেকে বারান্দায় আসতে দেখা গেল। কে বলবে সে রোবট। হাসিখুশি কিশোরী মেয়েদের মত মুখ। ছটফটে ভঙ্গি। সে বারান্দায় এসেই প্রায় চেঁচিয়ে ওঠার ভঙ্গিতে বলল, রেফ কেমন আছ।
ভাল। চেঁচামেচি করার দরকার নেই, সহজভাবে কথা বল। তুমি মানুষের মত হবার যত অভিনয়ই কর আমার মাথা থেকে কখনো যাবে না যে তুমি রোবট ছাড়া কিছু না। তুমি খুব ভেবেচিন্তে বল, আমি কি বিশেষ কেউ?
অবশ্যই।
কারণ কি?
কারণ একই সঙ্গে তুমি দুটি ভিন্ন সময়ে বাস করছ বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিভাবে এটা সম্ভব হচ্ছে তা ধরা যাচ্ছে না বলেই বিজ্ঞানীদের ভুরু কুঁচকে যাচ্ছে।
কোন থিওরি দাড় করানো যায় নি?
না। তুমি টাইম প্যারাডক্স তৈরি করেছ। এই টাইম প্যারাডক্সে অতীত, বর্তমান বা ভবিষ্যৎ বলে কিছু নেই।
হাস্যকর কথা নয় কি?
বিজ্ঞান এর চেয়ে অনেক হাস্যকর ব্যাপার স্বীকার করে নিয়েছে। আধুনিক বিজ্ঞান একই সঙ্গে যুক্তি এবং যুক্তিহীনতার বিজ্ঞান। আপাতদৃষ্টিতে খুবই হাস্যকর মনে হয় এমন সব ব্যাপার বিজ্ঞান স্বীকার করে নিয়েছে।
বিজ্ঞান কাউন্সিল আমাকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত কি করবে?
খুব সম্ভব মেরে ফেলবে। তাদের ধারণা হতে পারে তোমাকে বাঁচিয়ে রাখা পরবর্তীতে অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে।
তোমার ধারণা তারা আমাকে মেরে ফেলবে?
হ্যাঁ আমার তাই ধারণা। তোমাকে নিয়ে যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হয়েছে। কাজেই…।
কবে নাগাদ তারা আমাকে মেরে ফেলতে পারে বলে তুমি মনে কর?
যে-কোন সময় পারে। ঘটনা আজও ঘটতে পারে। তবে কাউকে মেরে ফেলতে হলে বিজ্ঞান কাউন্সিলের অনুমোদন লাগে। তোমার ব্যাপারে অনুমোদন জোগাড় করা কঠিন হবে না।
ভাল।
তোমার জন্যে অবশ্যই ভাল। তুমি বন্দি অবস্থা থেকে মুক্তি চাচ্ছিলে। এছাড়া তোমার মুক্তির আর কোন পথ নেই।
রে কঠিন গলায় বলল, তোমাকে খুব আনন্দিত মনে হচ্ছে। আমি জানি অষ্টম ধারার রোবটদের মাথায় মানবিক আবেগসম্পন্ন কম্পিউটার বসানো আছে। মানবিক আবেগসম্পন্ন কেউ আমার পরিণতি জেনে আনন্দিত হতে পারে না।
সরি।
আচ্ছা শোন, যখন আমি সুস্থ ছিলাম অর্থাৎ স্বপ্নপর্ব শুরু হবার আগে আমার পেশা কি ছিল।
তুমি ছিলে প্রবলেম সলভার।
তার মানে কি?
তোমাকে নানান ধরনের সমস্যার সমাধান করতে দেয়া হত। তুমি তোমার ঘরে বসে বসে সেইসব সমস্যার সমাধান করতে।
কি ধরনের সমস্যার সমাধান করতাম।
এটা বলা যাবে না। এটা ক্লাসিফায়েড ইনফরমেশন।
এই বিষয়ে আমার মাথায় কোন স্মৃতি নেই কেন?
এই বিষয়ের স্মৃতি খুব যত্ন করে মুছে ফেলা হয়েছে।
তুমি কি জান?
আমি অবশ্যই জানি।