আমাকে রোবট হিসেবে ধরে নিলে আপনার কি সুবিধা হয় বলুন।
চট করে হিসেব মেলে। ওমেগা পয়েন্ট তোমাকে তৈরি করেছে। বিশেষ একটা দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছে।
বিশেষ দায়িত্বটা কি?
তোমার জানার কথা। ওরা তোমার কাছে কি চায়?
জানি না কি চায়?
তোমার কি মনে হয় ওরা তোমাকে দিয়ে কি করতে চাচ্ছে? যে-সব উত্তর মনে আসে। সব বল।
ওরা চাচ্ছে আমি যেন বেঁচে থাকি। আমাকে সমস্ত বিপদ থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আর তারা চাচ্ছে শেফা নামের মেয়েটির প্রতি আমি যেন আবেগ অনুভব করি।
আর কিছু?
না, আর কিছু মনে হচ্ছে না।
ওমেগা পয়েন্ট তো তোমাকে বলেছে যে তাদের পরীক্ষা শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে।
হ্যাঁ তা বলেছে। আপনি এটা জানলেন কিভাবে। মানুষের মাথার ভেতর ঢুকে যাবার ক্ষমতা কি আপনার আছে?
না নেই। তুমি আত্মজৈবনিক ধরনের কিছু লেখা লিখছিলে, সেখানে থেকে জানলাম।
ওমেগা পয়েন্ট বলেছে যে তাদের পরীক্ষা প্রায় শেষ পর্যায়ে।
পরীক্ষা প্রায় সফল হতে যাচ্ছে এই কথাও বলেছে?
হ্যাঁ।
তাহলে আমি ধরে নিতে পারি যে তারা তোমাকে দিয়ে বিরাট গুরুত্বপূর্ণ কোন আবিষ্কার করার জন্যে পরীক্ষাটা করছে না। তাহলে বলত না যে পরীক্ষা শেষ। আমার এই যুক্তি তোমার কাছে কেমন লাগছে?
ভাল। তবে আমি আপনার সঙ্গে আর কথা বলতে চাচ্ছি না। আমার প্রচণ্ড ঘুম পাচ্ছে। আমি চোখ মেলে রাখতে পারছি না।
তুমি ঘুমিয়ে পড়া মানে কিন্তু অন্য একটা জগতে চলে যাওয়া।
সেই জগতে যেতে পারলে আমি খুশিই হব। আমার অসহ্য বোধ হচ্ছে।
তোমার বিষয়ে যে মীমাংসাটা করেছি তা শুনতে চাও না?
না। শুধু একটা ব্যাপার জানতে চাই—আমি কি আসলেই কৃত্রিম একজন মানুষ একজন রোবট?
না।
রেফ্ গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল। এমরান টির চোখভর্তি ঘুম। তিনি অনেক কষ্টে জেগে আছেন কারণ প্রধান কম্পিউটারকে তাঁর একটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার আছে।
হ্যালো সিডিসি হ্যালো।
মহান পদার্থবিদ এমরান টি আপনার কথা শুনতে পারছি।
তুমি কি রেফ্ ছেলেটির রহস্যভেদ করেছ?
পুরোপুরি পেরেছি বলতে পারব না। তবে খুব কাছাকাছি আছি।
তোমার ব্যাখ্যাটা বল।
ওমেগা পয়েন্ট আপনাকে দিয়ে বিরাট কিছু করতে চাচ্ছে। সময়-সংক্রান্ত সমীকরণগুলি যা শুরু করেও আপনি ফেলে রেখেছেন তার সমাধান ওমেগা পয়েন্ট চাচ্ছে। আপনার যে মানসিকতা তাতে আপনি এর সমাধান করবেন না। বার বারই ওমেগা পয়েন্ট আপনার ডি.এন.এর ভেতর ছোট ছোট পরিবর্তন করছে। আপনাকে নিখুঁতভাবে তৈরি করার চেষ্টা করছে ওমেগা পয়েন্ট।
তুমি ধোঁয়াটে ভাষায় কথা বলছ।
আপনার ডি.এন.এর সঙ্গে ভয়াবহ মিল আছে রেফ-এর ডি.এন.এ. এর। তার মানে এই দাঁড়াচ্ছে যে রেফ্ অর্থাৎ রফিক এবং শেফা নামের মেয়েটি আপনার অতি আদি পিতা-মাতা।
কি বলছ তুমি?
ওমেগা পয়েন্ট শেফাকে ঠিক রাখছে, কিন্তু প্রতিবারই রফিককে বদলাচ্ছে। তারা রফিককে সংগ্রহ করছে আমাদের সময় থেকে। তাকে পাঠিয়ে দিচ্ছে। শেফার কাছে। যেন এদের বিয়ে হয়। এদের সন্তান হয়। এবং শেষ। এই সন্তানই বিশেষ ধরনের ডি.এন.এ.-এর বাহক।
রেফকে তারা পাঠিয়ে দিচ্ছে বলছ। কিন্তু এখানেও তো তার অস্তিত্ব। থাকছে।
ওমেগা পয়েন্ট এই কাজটা করছে ঠিকই। কিভাবে করছে আমার কাছে পরিষ্কার না। প্রতিটি বস্তুর যেমন প্রতিবস্তু থাকে। আমার ধারণা এখানেও এমন কিছু ঘটছে। রফিক যে জগতে বাস করছে সেই জগৎটা হয়ত আমাদের জগতের প্রতিবিম্ব। মিরর ইমেজ।
তুমি খুবই জটিল প্রক্রিয়ার কথা বলছ।
জটিল তো বটেই।
ওমেগা পয়েন্টের পরীক্ষা যদি সফল হয় তাহলে কি হবে?
নতুন এক এমরান টি আমরা পাব, যিনি সময় সমীকরণের সমাধান করবেন।
এখনকার এমরান টি কোথায় যাবে?
তার কোন অস্তিত্ব থাকবে না। এখনকার এমরান টির জগৎ শূন্যে মিলিয়ে যাবে।
কি বলছ তুমি?
ওমেগা পয়েন্ট অসীম সংখ্যক জগৎ নিয়ে কাজ করে। সেইসব জগতের কিছু নষ্ট হয়ে গেলেও ওমেগা পয়েন্টের কিছুই যায়-আসে না।
ওমেগা পয়েন্ট কি বলে তোমার ধারণা?
কম্পিউটার সিডিসি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, আমার ধারণা ওমেগা পয়েন্ট হল এমন এক কম্পিউটার যা বিশ্ব ব্ৰহ্মাণ্ড ছড়ানো। মানুষের সেখানে কোন অস্তিত্ব নেই। প্রয়োজনও নেই।
আজ শেফার বিয়ে
আজ শেফার বিয়ে। বেশ ধুমধাম করেই বিয়ে হচ্ছে। শেফার মা জটিল প্যাঁচ খেলেছেন। সেই প্যাচে ধরাশায়ী হয়েছেন শেফার বাবা। বিয়ে হচ্ছে রফিকের সঙ্গেই।
শেফাকে খুব যে আনন্দিত মনে হচ্ছে তা না। সে চোখে-মুখে বিরক্তি নিয়ে বসে আছে। শেফার মা বললেন, কিরে তোর মুখটা এ রকম কেন?
শেফা বলল, কি রকম?
রাগী-রাগী মুখ।
রাগ লাগছে এই জন্যে মুখ রাগী-রাগী।
রাগ লাগার কি আছে। পছন্দের মানুষের সঙ্গেই তো বিয়ে।
শেফা ফিক করে হেসে ফেলে বলল, অভিনয় করে মুখটা রাগী-রাগী করেছি। আসলে এত খুশি লাগছে যে নিজেরই লজ্জা লাগছে।
বিশ হাজার এক টাকা কাবিনে শেফার বিয়ে হয়ে গেল। শেফা কেঁদে বাড়ি ভেঙে ফেলার জোগাড় করল। কান্নার এক ফঁাকে সে মাকে ফিসফিস করে বলল, কান্না দেখে ভয় পেও না মা। অভিনয়ের কান্না। খুশি চেপে রাখার জন্যে বেশি-বেশি চোখের পানি ফেলছি।
বাসর রাতে রফিক সামান্য অসুস্থ হয়ে পড়ল। বিয়ের উত্তেজনায় প্রচণ্ড মাথা ধরেছে। গায়ে সামান্য জ্বর। তা ছাড়া গরমটাও পড়েছে অস্বাভাবিক। ভাদ্র মাসের তালপাকা গরম।