সব রহস্যের সমাধান আছে। একদিন সব রহস্য জানা হয়ে যাবে। সেই একদিনটা কবে? সুদূর ভবিষ্যতে? পদার্থবিদ্যায় সুদূর ভবিষ্যৎ বলে কিছু নেই। সবই ঘটে আছে। মহাবিশ্ব সৃষ্টি এবং লয় সবই ঘটে গেছে। অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ সবই শক্ত বাঁধনে বাঁধা।
রেফ্!
রেফ্ লেখা বন্ধ করল। চারদিকে তাকাল। কেউ আশেপাশে নেই। আগের ব্যাপারটা আবার ঘটছে। কেউ কথা বলছে মাথার ভেতর। ওমেগা পয়েন্টের লোকজন।
রেফ্ শুনতে পাচ্ছ?
রে শীতল গলায় বলল, পাচ্ছি। তোমরা কি ওমেগা পয়েন্টের?
হ্যাঁ। আমরা খুবই আনন্দিত।
তোমাদের আনন্দের কারণ ঘটাতে পেরেছি জেনে ভাল লাগছে। যদিও বুঝতে পারছি না, এমন কি ঘটছে যে তোমরা আনন্দিত।
আমরা আনন্দিত কারণ মোটামুটি নিশ্চিন্তে আমরা আমাদের পরীক্ষা শেষ করতে পারছি।
পরীক্ষা সফল হয়েছে?
এখনো বলা যাচ্ছে না। তবে সফল হবার সম্ভাবনা আছে।
সফল না হলে কি এই পরীক্ষা আবারো করা হবে?
অবশ্যই।
গিনিপিগটা কে, আবারো আমি?
না তুমি না।
তোমাদের গিনিপিগের অভাব নেই, তাই না?
না, আমাদের গিনিপিগের অভাব নেই।
তোমরা কে, এবং আমি কে, তা কি জানতে পারি?
খুবই আদি প্রশ্ন করলে। সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষ এই প্রশ্ন করছে। জানতে চাচ্ছে সে কে? সে কোথা থেকে এসেছে? সে কোথায় যাচ্ছে? এই প্রশ্নের উত্তর জানার অর্থ সবই জেনে ফেলা।
তার মানে কি এই যে আমি এই প্রশ্নের উত্তর জানব না?
পরীক্ষা সফল হলে তুমি আপনাতেই প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে। পরীক্ষা সফল না হলে জানতে পারবে না।
রেফের মাথায় সামান্য যন্ত্রণা হচ্ছে। যে মাথার ভেতর বসে কথা বলছিল সে এখন আর নেই। নাকি এখানো আছে। রেফ শান্ত গলায় বলল—তুমি কি এখনো আছ?
কোন উত্তর পাওয়া গেল না।
রেলা এমরান টির ঘরে ঢুকে অস্পষ্ট শব্দ করল। এমরান টি বললেন, কে?
স্যার আমি রেলা।
এমরান টি বললেন, রেলা আমি খুব ব্যস্ত আছি। আমি লিখছি। খুব জরুরি কিছু না হলে আমাকে বিরক্ত করা যাবে না।
খুবই জরুরি। কেন জরুরি ব্যাখ্যা করছি স্যার। তার আগে বলুন আপনি কি অসুস্থ? আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনি খুবই অসুস্থ। আপনার চোখ টকটকে লাল। এবং আপনি ঘামছেন।
আমাকে বিরক্ত না করে লিখতে দাও। এই মুহূর্তে আমার কাছে লেখাটাই জরুরি আর কিছু জরুরি না।
বিজ্ঞান কাউন্সিলের অধিবেশন শেষ হয়েছে।
এটা কোন জরুরি ব্যাপার না। যেটা শুরু হয়েছে সেটা শেষ হবেই।
বিজ্ঞান কাউন্সিলে রেফের ব্যাপারটি আলোচনা করা হয়েছে।
এটাও কোন অস্বাভাবিক কিছু না। জরুরি তো নয়ই। রেফে ব্যাপারে আলোচনা হবে বলেই অধিবেশন ডাকা হয়েছে।
অধিবেশনের সিদ্ধান্তটা আপনাকে জানাতে চাচ্ছি স্যার।
জানাতেই হবে?
হ্যাঁ জানাতে হবে। বিজ্ঞান কাউন্সিলের গুপ্তচর বাহিনী-প্রধান রিপোর্ট করেছেন যে রেফকে পাওয়া গেছে এবং সে আছে বিজ্ঞান কাউন্সিলের প্রধানের বাসভবনে।
ও আচ্ছা। তারা এখন জানে?
জ্বি জানে।
ভাল কথা।
বিজ্ঞান কাউন্সিল একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কি সিদ্ধান্ত তা আমি জানি না। কারণ সিদ্ধান্তটা গোপনীয়।
তোমার যা বলার ছিল বলা হয়েছে?
জ্বি।
তাহলে এখন বিদেয় হও। আমি লিখছি আমাকে লিখতে দাও।
বিজ্ঞান কাউন্সিলের সাধারণ অধিবেশনের প্রতিবেদন।
এই প্রতিবেদনকে কাউন্সিলের বিশেষ ক্ষমতায় (ধারা ১০১/২১) পরম গোপনীয় ঘোষণা করা হল।
প্রতিবেদন নথিভুক্ত হবে না, প্রতিবেদনের কোন অংশ নিয়ে আলোচনাও
করা যাবে না।
বিষয় : রেফ্
সিদ্ধান্ত ১: চরম দণ্ড কার্যকর করা হবে।
সিদ্ধান্ত ২: চরম দণ্ড কার্যকর করার পরপরই রেফ্ বিষয়ের সমস্ত ফাইল নষ্ট করে দেয়া হবে।
নিরাপত্তাবাহিনী বাড়ি ঘিরে ফেলেছে
শেফ এমরান টির ঘরে ঢুকে আনন্দিত গলায় বলল, স্যার নিরাপত্তাবাহিনী বাড়ি ঘিরে ফেলেছে। গুপ্তচর বিভাগের প্রধান নেসরা, বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
এমরান টি শেষের দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমাকে এত আনন্দিত মনে হচ্ছে কেন? নিরাপত্তাবাহিনী বাড়ি ঘিরে ফেলেছে এটা কি খুব আনন্দময় ঘটনা? আনন্দময় কিছু কি ঘটেছে?
হ্যাঁ ঘটেছে। ভুল বললাম, এখননা ঘটে নি তবে ঘটতে যাচ্ছে।
আমি জানতে পারি আনন্দময় ব্যাপারটা কি?
রেফ্ আসলে কে? কতটুকু তার ক্ষমতা এটা কিছুক্ষণের মধ্যেই জানা যাবে। এটা অনেক বড় একটা ঘটনা। এত বড় একটা ঘটনা আমার চোখের সামনে ঘটতে যাচ্ছে এই আনন্দেই আমি আনন্দিত। কোন ঐতিহাসিক ঘটনার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রাখার আনন্দ। এর বেশি কিছু না।
আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যাও। রেফকে গ্রেফতার করতে যারা এসেছে তাদের কেউ যদি আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে, এবং তারা যদি রোবট না হয়, তাহলে আমার কাছে নিয়ে এসো।
গুপ্তচর বিভাগের প্রধান নেসরা নিজেই এসেছেন। নগর-নিরাপত্তাবাহিনীর প্রধান মাওয়াও এসেছেন। স্যার আমি কি উনাদের কাছে খবর পাঠাব যে আপনি কথা বলতে চান।
না। তারা যদি আমার সঙ্গে কথা বলতে চায় তাহলেই আমার কাছে নিয়ে আসবে। প্রধান কম্পিউটার সিডিসি কি আছে?
জ্বি না, সিডিসি নেই। তোমরা কি সিডিসির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পার?
আমরা পারি না। তবে সিডিসি চাইলে যে-কোন মুহুর্তে আমাদের সঙ্গে যোগযোগ করতে পারে।
আমি বিজ্ঞান পরিষদের প্রধান। আর আমিই কিনা কিছুই জানি না!
জানার যেমন আনন্দ আছে, না জানার আনন্দও আছে।