তোমরা মহাজ্ঞানী কম্পিউটার, তোমাদের ভেতর চক্র তৈরি হয় না।
অতি বুদ্ধিমান কোন মানুষ হয়ত আমাদের ভেতরও চক্র তৈরি করতে পারবে। তবে এখনো কেউ পারে নি। স্যার আপনি রেগে যাচ্ছেন। রেগে গেলে ঠিকমত প্রশ্ন করতে পারবেন না। আপনারই ক্ষতি হবে। রাগ কমাবার চেষ্টা করুন। রাগ কমানোর ব্যাপারে আমি কিছু সাহায্য করতে পারি।
তোমাদের সাহায্য লাগবে না। আমি নিজেও রাগ কমাব, এখন আমাকে একটা প্রশ্নের উত্তর দাও। তোমরা কি মিথ্যা কথা বলতে পার?
রেলা বলল, হ্যাঁ পারি। বুদ্ধির সঙ্গে মিথ্যা জড়িত আছে। বুদ্ধির মূলধারার একটি হল মিথ্যা বলার ক্ষমতা। কম্পিউটারকে মানুষের কাছাকাছি আসতে হলে তাকে মিথ্যা বলা শিখতে হবে।
তোমার ধারণা যে-মানুষ সারাজীবনে একটা মিথ্যাও বলে নি তার বুদ্ধি নেই?
অবশ্যই আছে। তারা বিশেষ ধরনের মানুষ। আমাদের বিশেষ ধরনের মানুষ বানানোর চেষ্টা করা হয় নি। তবে স্যার নিতান্তই প্ৰয়োজন না হলে আমরা মিথ্যা বলি না। মানুষ তাৎক্ষণিক সমস্যা থেকে বাঁচার জন্যে মিথ্যা বলে। দূর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে না। আমরা করি।
শেফ, তুমি বল—তোমার দায়িত্ব ছিল রেকে আটকানো, তুমি তাকে যেতে দিলে কেন?
তাকে চলে যেতে দেবার পেছনে তিনটি কারণ আছে। প্রথম কারণ এই মানুষটির প্রতি আমার প্রচণ্ড মায়া তৈরি হয়েছে।
মায়া?
স্যার আপনি দয়া করে মনে রাখবেন যে আমাদের মানবিক আবেগসম্পন্ন করে তৈরি করা হয়েছে।
দ্বিতীয় কারণ কি?
দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে আমার কাছে মনে হয়েছে বিজ্ঞান কাউন্সিল ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর এমন সিদ্ধান্ত যার জন্যে পরে তারা খুবই…
শেফের কথা থামিয়ে এমরান টি বললেন, বিজ্ঞান কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত তাদের ব্যাপার, তোমার এখানে নাক গলাবার কিছুই নেই। এই দায়িত্ব তোমাকে দেয়া হয় নি। তোমাকে যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তুমি তা পালন কর নি। তাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে।
হ্যাঁ তা করেছি।
কেন করেছ?
এই প্রশ্নের জবাব একটু আগেই দিয়েছি।
আরেকবার যখন প্রশ্ন করা হয়েছে, আরেকবার দাও।
এমরান টি রেলার দিকে তাকিয়ে বললেন, রেলা তোমার কি ধারণা শেফ সত্যি কথা বলছে। একটা কম্পিউটার যখন মিথ্যা কথা বলে তখন একজন কম্পিউটারের পক্ষেই সেই মিথ্যা কথাটা ধরা সম্ভব। আমার পক্ষে সম্ভব না।
রেলা বলল, আমার ধারণা সে সত্যি কথাই বলছে।
এমরান টি বললেন, শেফ তুমি যে শুধু তাকে চলে যেতেই দিয়েছ তা না, তুমি তাকে একটি ওমিক্রন গানও দিয়েছ। যা এখন আমার সঙ্গে লক করে দেয়া হয়েছে।
শেফ বলল, হ্যাঁ এই কাজটা আমি করেছি।
এমরান টি বললেন, ওমিক্রন গানের ব্যাপারটা তুমি এখন আমার কাছে ব্যাখ্যা করবে। আমি এই অস্ত্রটি সম্পর্কে তেমন কিছু জানি না। ভাসা ভাসা ভাবে জানি। অস্ত্র সম্পর্কে আমার কখনোই কোন আগ্রহ ছিল না।
শেফ বলল, ওমিক্রন গান প্রথমে শিশুতোষ খেলনা হিসেবে বাজারে আসে। এই খেলনা-পিস্তল দিয়ে কাউকে গুলি করা হলে–গুলিটা গায়ে লাগে। যার গায়ে লাগে সে অদৃশ্য সুতার মাধ্যমে খেলনার সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। এরপর থেকে সে যেখানে যায় সেখানকার স্থানাংক খেলনার মনিটরে উঠতে থাকে। সুতায় যুক্ত হয়ে যাওয়া মানুষটি কারো সঙ্গে কথা বললে সেই কথাও খেলনাপিস্তলের মাধ্যমে শোনা যায়। খেলনাটা শিশুদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন তোলে। পরবর্তীতে এই খেলনাই রূপান্তরিত হয় ওমক্ৰিন গানে।
বর্তমান ওমিক্রন গান তিনটি ধাপ অতিক্রম করে চতুর্থ ধাপে আছে। আপনাকে যে ওমিক্রন গান দিয়ে লক করা হয়েছে এটি চতুর্থ ধাপের অস্ত্ৰ।
এর বিশেষত্ব কি?
বিশেষত্বটা না জানাই আপনার জন্যে মঙ্গলজনক হবে।
আমার মঙ্গল নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। তুমি এর বিশেষত্ব বল।
একটি সাধারণ ওমিক্রন গানে যা আছে, এটিতে তার সবই আছে। এর বাইরে যা আছে তা হল—এই ওমিক্রন লকার যার সঙ্গে লক হয় তার অনুভূতি এবং মানসিকতা খুব ধীরে ধীরে ব্যবহৃত হতে শুরু করে। খুব দীর্ঘ সময় লক অবস্থায় থাকলে যিনি লক হবেন তিনি লকারের মানসিকতা পরিষ্কার বুঝতে পারবেন।
এমরান টি কড়া গলায় বললেন, পরিষ্কার করে বল। তুমি সবই এলোমেলো করে ফেলছ।
শেফ বলল, উদাহরণ দিয়ে পরিষ্কার করি। যেমন ধরুন আপনি। রেফ আপনাকে লক করেছে। যদি আপনাকে এর থেকে মুক্ত না করা হয় তাহলে যতই দিন যাবে এই বন্ধন ততই কঠিন হতে থাকবে। একটা সময় আসবে যখন রেফ্ যা ভাবছে আপনি তা বুঝতে পারবেন। রেফ্ যে দুঃসহ স্মৃতিগুলি দেখছে। আপনি তা দেখতে শুরু করবেন।
বল কি?
আপনি কি ভাবছেন তা রেফ্ জানবে না। কিন্তু রেফ্ যা ভাবছে আপনি তা জানবেন।
সর্বনাশ!
সর্বনাশ তো বটেই।
আপনি তখনি ঘুমুতে যাবেন যখন রেফের ঘুম পাবে। রেফ্ যখন জেগে উঠবে আপনারও তখনি জেগে উঠতে হবে। রেফ যখন আনন্দিত হবে, তখন আপনিও আনন্দিত হবেন।
এমরান টি হতভম্ব হয়ে গেছেন। তাঁকে দেখে মনে হচ্ছে দাবার খেলায় খুব সহজ একটা চালে তিনি হেরে গেছেন। বোর্ডে রাজাকে শুইয়ে দেয়া ছাড়া এখন তার আর কিছু করার নেই।
তাঁর সামনে দুটা রোবট। এই রোবট দুটিকে এখন আর রোবট মন হচ্ছে না। মনে হচ্ছে এরা মানুষ। এবং এরা এমরান টির অবস্থা দেখে খুব মজা পাচ্ছে। নিজেদের মধ্যে আড়ে-আড়ে তাকাচ্ছে এবং হাসাহাসি করছে।