হুঁ। আপনার খোঁজে লোক নেমে গেছে।
কি আশ্চর্য কথা।
কোন আশ্চর্য কথা না, এক দুইটা মানুষ বিলে পুঁতে ফেলা বাবার কাছে। কিছু না।
তুমি যে এখানে এসেছ কেউ জানে?
মা জানে।
উনি তোমার বাবাকে বলে দেবেন না।
না।
না কেন? উনি আমাকে খুবই ভালবাসেন।
তোমার বাবাওতো তোমাকে ভালবাসেন।
দুজনের ভালবাসা দুরকম। আমার জন্যে মার ভালবাসায় আপনি আছেন। কিন্তু বাবার ভালবাসায় আপনি নাই।
এটা কি রকম কথা।
কি রকম কথা এটা চিন্তা করতে হবে না। আপনি তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করেন। কলা কয়টা খেয়েছেন?
দুইটা।
আরেকটা খান তাহলে দানে দানে তিনদান হবে।
দানে দানে তিনদান হবে মানে কি?
উফ আপনে এত মানে খুঁজেন কেন? আচ্ছা শুনুন আপনাকে একটা কলার গল্প বলি।
কলার কি গল্প?
এক দেশে ছিল একটা সারি কলা আর ছিল একটা পাতিলেবু। দুজনের খুব দোস্তি। একদিন কলা পাতিলেবুকে বলল, আচ্ছা ভাই লেবু, লোকে ভাত খাওয়ার সময় তাদের চিপা দিয়ে রস বের করে তোদের কষ্ট হয় না। তার উত্তরে পাতিলেবু বলল, কষ্ট তো হয়ই। কিন্তু ভাই কলা, লোকজন তোদর খাবার সময় যে বাকল খুলে নেংটো করে ফেলে তোদর লজ্জা লাগে না?
রফিক খাওয়া বন্ধ করে গল্প শুনছে। মেয়েটা যে এত সুন্দর করে গল্প বলতে পারে তাই সে জানত না।
গল্পটা কেমন লাগল স্যার?
ভাল।
এই গল্পটা আমি দাদিজানের কাছে শুনেছি। দাদিজানের মতো সুন্দর করে আমি বলতে পারলাম না। দাদিজানের কাছ থেকে আপনি যদি এই গল্প শুনতেন তাহলে জীবনে আর কলা খেতে পারতেন না।
কেন? নেংটো করে কলা খেতে আপনার লজ্জা লাগতো।
শেফা খিলখিল করে হাসছে। বৃষ্টির শব্দের সঙ্গে হাসির শব্দ মিশে অদ্ভুত শোনাচ্ছে। বাতাসের বেগও বেড়েছে। নৌকা অনেক বেশি দুলছে। শেফা বলল, স্যার উঠুন। এখন চলে যেতে হবে।
কোথায় যাব?
ডিসট্রিক্ট বোর্ডের সড়ক ধরে সোজা দক্ষিণ দিকে যাবেন। এক মাইলের মতো যাবেন তখন দেখবেন হাতের ডান দিকে দুটা বিরাট তাল গাছ। তালগাছ দুটা তো আগেও দেখেছেন। এরার নাম মামা-ভাইগনা তালগাছ। তালগাছের নিচে দাঁড়ায়ে সোজা তাকায়ে দেখবেন কোন্ বাড়িতে বাতি জ্বলতেছে। ঐ বাড়িতে চলে যাবেন।
কার বাড়িতে যাব?
জালাল খাঁ সাহেবের বাড়ি। উনার বাড়িতে সারারাতই বাতি জ্বলে। জালাল খাঁ সাহেবের জামাই এখনো আছেন। উনি আপনেরে খুব ভাল পান। উনার সঙ্গে ঢাকায় চলে যাবেন। মামলা ডিসমিস।
মামলা ডিসমিস?
অবশ্যই মামলা ডিসমিস। বাপজান জালাল খাঁ সাহেবের এলাকায় কিছু করতে পারবে না। সবার এলাকা ভাগ করা। তোমার সঙ্গে আর দেখা হবে না?
অবশ্যই দেখা হবে। দেখা হবে এবং বিবাহ হবে। স্যার আমি ছাত্রী খুব খারাপ কিন্তু বউ খুব ভাল। আপনার যে মাথার অসুখ আছে। রাতে বোরায় ধরে, চিল্লাফাল্লা করেন, এই অসুখ আমি দুই দিনে সারায়ে দিব।
তুমি নিশ্চিত তোমার সঙ্গে আমার বিয়ে হবে?
অবশ্যই। মা স্বীকার পেয়েছেন। আর কোন চিন্তা নাই। মাকে দেখলে মনে হয় মা এই দুনিয়ার কিছুই বুঝে না। ভয়ে অস্থির হয়ে থাকে। আসলে সবকিছুই তাঁর হাতের মুঠার মধ্যে। মা বাপজানকে এক হাটে কিনে সেই হাটেই দশজনের কাছে বিক্রি করবেন। বাপজান টেরও পাবেন না। বাপজান মনের আনন্দে কঁচা সুপারি দিয়ে পান খাবেন, আর পানের পিক ফেলবেন। হি হি হি।
গভীর রাতে ফরহাদ রফিককে দেখে বিস্ময়ে অভিভূত হল। বিস্ময়ের সঙ্গে যুক্ত হল আনন্দ। ফরহাদ সাহেবের স্ত্রী তার চাচাতো বোনের বিয়েতে মিশাখালি। গিয়েছে। খবর পাঠিয়েছে রাতে ফিরবে না। ফরহাদের কথা বলার কেউ নেই। সে এতক্ষণ একা একা বাংলাঘরে বসে বৃষ্টি দেখছিল। সে রফিককে দেখে প্রায় চেঁচিয়ে বলল, আপনার একি অবস্থা। বৃষ্টি কাদায় মাখামাখি। ঘটনা কি?
কোন ঘটনা না। আপনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি।
দেখা করতে এসেছেন খুবই ভাল কথা। আমি খুবই খুশি হয়েছি যে দেখা করতে এসেছেন। এমন গগ্রামে রাত দেড়টার সময় যে কেউ দেখা করতে আসতে পারে তাই জানতাম না।
আপনি চলে যাবেন আর দেখা হবে না।
আপনি এসেছেন আমি খুবই খুশি হয়েছি। আপনাকে আমি একটা প্রস্তাবও দিচ্ছি। আপনিও চলুন আমার সঙ্গে। আপনাকে নিয়ে আমার কিছু পরিকল্পনা আছে। আচ্ছা পরিকল্পনার কথা পরে বলব। এখন আপনার গোসলের ব্যবস্থা করি। শুকনা কাপড়ের ব্যবস্থা করি। আজ সারারাত গল্প করব।
বাংলাঘরেই শোবার জায়গা হল। পাশাপাশি দুটা খাট। একটায় রফিক, অন্যটায় ফরহাদ। ফরহাদের হাতে ফ্লাস্ক। সে ফ্লাস্কভর্তি চা নিয়ে সত্যি-সত্যি সারারাত গল্প করার প্রস্তুতি নিয়েছে। রফিক চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়েছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে তার শরীর ভাল নেই। জ্বর আসছে। ঠাণ্ডাটা তাকে খুব কাহিল। করে ফেলেছে।
রফিক সাহেব।
জ্বি স্যার।
আমাকে স্যার বলবেন না। আমি খুবই জুনিয়ার একজন শিক্ষক। বয়সেও মনে হয় ছোট হব।
আপনি সম্মানিত মানুষ।
মানুষ মাত্রই সম্মানিত। আপনি আমার কাছে অনেক সম্মানিত। আপনার অংক করার দৃশ্য এখননা আমার চোখে ভাসে। ভাল কথা, আপনার কি শরীর খারাপ করেছে।
জ্বি না। ঠাণ্ডা লেগেছে।
চোখ বন্ধ করে থাকবেন না। চোখ বন্ধ করে থাকলে মনে হয় ঘুমিয়ে পড়েছেন। আমার প্ল্যান হচ্ছে আজ সারারাত গল্প করা। একটু গরম চা খান ঘুম কাটবে।
রফিকের চা খেতে ইচ্ছা করছিল না। তারপরেও হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপ নিতে নিতে বলল, আপনার কাছে একটা প্রশ্ন ছিল। যদি কিছু মনে না করেন।