জ্বি মনে আছে, ৮৭৯০০৪২১৬৭৩।
এই সংখ্যাগুলির একটা বিশেষত্ব আছে সেটা বলতে পারবেন?
এর কোন বিশেষত্ব নাই। এটা মৌলিক সংখ্যা না। তিন দিয়ে ভাগ করা যায়।
ফরহাদ খান নিজের বিস্ময়বোধ চাপা দেবার জন্যে সিগারেট ধরালেন।
ভেতরের বারান্দায় ইয়াসিন সাহেব তামাক খাচ্ছিলেন। তিনি বাংলাঘরের বারান্দায় হাঁটাহাঁটিতে ব্যস্ত দুই বডিগার্ডকে ডেকে পাঠিয়েছেন। তারা ভীত মুখে সামনে দাঁড়িয়ে। ইয়াসিন সাহেব বললেন, তোমরা আছ কেমন?
তাদের একজন খুখুক করে কাশতে কাশতে বলল—যেমন দোয়া করেছেন।
উল্টাপাল্টা কথা বলবা না? তোমাদের জন্যে আমি দোয়া করব কি জন্যে। ভাল কথা গরমের মধ্যে চাদর গায়ে কেন?
শরীরটা খারাপ।
দুই জনেরই একসঙ্গে শরীর খারাপ?
তারা জবাব দিল না। ইয়াসিন সাহেব নীরবে কিছুক্ষণ তামাক টানলেন। তারপর হুক্কার নল নামিয়ে সহজ গলায় বললেন, তোমাদের চাদরের নিচে কি আছে আমি জানতে চাই না। তোমরা যে চাদরের নিচে জিনিস নিয়া আমার সাথে দেখা করতে এসেছ এতে আমি বড়ই অবাক হয়েছি। তোমরা উঠানে বৃষ্টির মধ্যে দাড়াও। কানে ধরে পঞ্চাশবার উঠবোস কর। যাও। এতে যদি আমার রাগ কমে তো কমল, না কমলে অন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।
তারা কোন রকম আপত্তি করল না। উঠোনে নেমে উঠবোস শুরু করল। ইয়াসিন সাহেব অন্দরে ঢুকলেন। জালাল সাহেবের জামাই এসেছেন। বিশিষ্ট মেহমান। জালাল সাহেবের জামাই মানে এই অঞ্চলের জামাই। তার মর্যাদা অন্যরকম। কাজেই নতুন জামাই এর আপ্যায়নের সুব্যবস্থা করা প্রয়োজন। ঘরে মিষ্টি আছে কিনা কে জানে। না থাকলে আনাতে হবে।
আমেনা বেগম আজ রাতে স্বামীর সঙ্গে ঘুমুতে এসেছেন। সপ্তাহে একদিন তিনি স্বামীর সঙ্গে ঘুমুতে আসেন। আজ সপ্তাহের সেই দিন না। ইয়াসিন ভুরু কুঁচকে স্ত্রীর দিকে তাকালেন। আমেনা বেগম লজ্জিত গলায় বললেন—শেফা বলেছে। আজ সে একা ঘুমাবে।
ইয়াসিন সাহেব বললেন, ও। বলেই তিনি পাশ ফিরলেন। ঘুমুবার চেষ্টা করা উচিত। তাঁর মাথা আজ কিঞ্চিৎ উত্তেজিত। জালাল সাহেবের দুই চাদরওয়ালাকে উঠবোস করানো হয়েছে। জালাল সাহেব এই অপমানের শোধ নিবেন না তা হয় না। ঘটনা ঘটবে। কিভাবে ঘটবে কে জানে। যে ভাবেই ঘটুক, ঘটনার জন্যে প্রস্তুত থাকতে হবে।
আমেনা বেগম বললেন, ঘুমায়ে পড়েছেন?
ইয়াসিন সাহেব বললেন, না। কিছু বলবা?
শেফার মাস্টারের বিষয়ে দুটা কথা ছিল।
কি কথা?
ছেলেটারে আমার বড়ই পছন্দ। বাপ-মা মরা ছেলে। দেখলেই আদর লাগে। এইসব ছেলে খুবই আদরের কাঙ্গাল হয়। ছেলের আদব-লেহাজ ভাল।
ইয়াসিন সাহেব ঠাণ্ডা গলায় বললেন–কথা যা বলবা পরিষ্কার করে বলবা। পঁাচ দিয়া বলবা না। পাঁচের কথা আমার ভাল লাগে না। ঘটনা কি?
কোন ঘটনা না।
এই ছেলের সাথে কন্যার বিবাহ দিতে চাও?
আমেনা বেগম সুস্থির নিশ্বাস ফেলে চাপা গলায় বললেনবিবাহ হলে খুবই ভাল হয়। ছেলেটা আমার খুবই পছন্দের। চেহারা-ছবিও মাশাল্লাহ ভাল।
ইয়াসিন সাহেব সহজ গলায় বললেন, ঠিক করে বল। ছেলে তোমার পছন্দ না-কি তোমার কন্যার পছন্দ।
আমার খুব পছন্দ। শেফাও তারে মোটামুটি ভাল পায়।
আমেনা!
জ্বি।
আমার সাথে প্যাঁচ খেলবা না। আমি সোজা-সরল মানুষ। ঘটনা কি পরিষ্কার করে বল।
আমেনা বেগম ভীত গলায় বললেন, কোন ঘটনা না।
ইয়াসিন সাহেব বিছানায় উঠে বসতে বসতে বললেন, আমি প্রশ্ন করতেছি। তুমি জবাব দাও। উল্টাপাল্টা জবাব দিবা না, থাপ্পড় খাইবা। মেয়েছেলের গায়ে হাত তোলা আমার খুবই অপছন্দ। কিন্তু প্রয়োজনে হাত তুলতে হবে। উপায় কি? এখন বল ছেলে কি তোমার কন্যার পছন্দ?
হুঁ।
তাড়াহুড়া করে বিয়ে দিতে চাইছে, কারণ কি? কোন ঘটনা ঘটেছে? কোন ঘটনার কথা বলতেছি বুঝতে পারতেছ? নাকি আরো খোলাসা করে বলব।
না না ছিঃ।
ছেলের জন্মের কোন ঠিক নাই—এতিমখানায় বড় হয়েছে। এটা জান?
জানি।
তার মৃগী রোগ আছে এটা জান?
তারপরেও কি করে বলো, এই ছেলে তোমার বড়ই পছন্দ।
মেয়ের মুখের দিকে তাকায়ে বলেছি। মেয়ে দেওয়ানা হয়েছে।
বুঝ দিলে বুঝ মানবে?
না।
এই অবস্থা?
জ্বি। কোন ঘটনা ঘটে নাই তুমি নিশ্চিত?
জ্বি।
ঠিক আছে আমি ব্যবস্থা নিতেছি। দুঃশ্চিন্তা করার কিছু নাই।
ইয়াসিন সাহেব বিছানায় শুয়ে পড়লেন। আমেনা বেগম ভয়ে-ভয়ে বললেন, কি ব্যবস্থা নিবেন।
আমি কি ব্যবস্থা নেই সেটা আমার বিষয়। এই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ আমার পছন্দ না। আমার সঙ্গে যে তোমার কথা হয়েছে এটাও শেফাকে বলবা না। সে যেন কিছুই না জানে।
জ্বি আচ্ছা। আপনি ছেলেটারে অন্য কোথাও চলে যেতে বলেন।
ইয়াসিন সাহেব নির্বিকার ভঙ্গিতে বললেন চলে যেতে বললে লাভ হবে না। তোমার কন্যা তাকে খুঁজে বের করবে। তোমার কন্যার মনের অবস্থা আমি তোমার আগেই টের পেয়েছি। তোমারে কিছু বলি নাই। একেক রোগের একেক চিকিৎসা। জ্বর হলে মাথায় পানি ঢালতে হয়। শরীর পচন ধরলে পচা অংশ ফেলে দিওয়া লাগে। এইটাই নিয়ম। শরীর নীরোগ রাখার জন্য অনেক অপ্রিয় কাজ করতে হয়। এখন যাও মেয়ের সাথে ঘুমাও। আমার সঙ্গে ঘুমানোর দরকার নাই।
আমেনা বেগম মেয়ের সঙ্গে ঘুমুতে গেলেন। সারারাত তার একফোঁটা ঘুম হল না।
বিজ্ঞান কাউন্সিলের বিশেষ অধিবেশন
বিজ্ঞান কাউন্সিলের বিশেষ অধিবেশন বসেছে। কাউন্সিলপ্রধান মহান বিজ্ঞানী এমরান টি। যৌবনে তিনি পদার্থবিদ্যার অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ করেছেন। কৃষ্ণ গহ্বর নিয়ে তাঁর কাজ তুলনাহীন। হঠাৎ গবেষণার ক্ষেত্র পরিবর্তন করে টাইম প্যারাডক্স নিয়ে মেতে ওঠেন। জার্নালে শতাব্দীর সবচে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত আবিষ্কার হিসেবে এই বিষয়ে দুটি গবেষণা প্রকাশিতও করেন। তারপর হঠাৎ থেমে যান। তাঁর বাড়ি থেকে বিজ্ঞানবিষয়ক সব বইপত্র সরিয়ে ফেলেন। তাঁর সম্পর্কে প্রচলিত গুজব হচ্ছে তিনি এখন ছড়া রচনার ব্যাপারে আগ্রহবোধ করছেন। খাতার পর পাতা ছড়া লিখে ভরিয়ে ফেলছেন। তাঁর বয়স একশর উপরে কিন্তু কথাবার্তা চালচলনে তারুণ্য ঝলমল করছে। আজ তিনি মেরুন রঙের কোট পরেছেন। কোটের সোনালি বোতাম চকচক করছে। এই সময়ের ফ্যাশনে মাথার চুলের সঙ্গে বড় রুমাল আটকে দিয়েছেন। বিশেষ ধরনের এই রুমাল বাতাস ছাড়াই সারাক্ষণ কাঁপতে থাকে। এমরান টি যে রুমালটি পরেছেন তার রং ঘন সবুজ। এই রঙের রুমাল অল্পবয়েসী কিশোরীরা মাথায় দেয়। উদ্ভট যে-কোন কিছু করার ব্যাপারে এমরান টির সীমাহীন আগ্রহ। বিজ্ঞান কাউন্সিলের বিশেষ অধিবেশন উদ্ভট কোন কর্মকাণ্ডের জন্যে উপযুক্ত জায়গা না। কিন্তু মহান বিজ্ঞানী এমরান টি তার পাগলামি দেখানোর জন্যে বিশেষ অধিবেশনগুলিই বেছে নেন। বিজ্ঞানীরা বিরক্ত হন। এমরান টি মানুষের বিরক্ত মুখ দেখতে পছন্দ করেন।