আমি যে গান গাই জানি নে সে কার উদ্দেশে
আমি যে গান গাই জানি নে সে কার উদ্দেশে॥
যবে জাগে মনে অকারণে চঞ্চল হাওয়ায়, প্রবাসী পাখি উড়ে যায়–
সুর যায় ভেসে কার উদ্দেশে॥
ওই মুখপানে চেয়ে দেখি–
তুমি সে কি অতীত কালের স্বপ্ন এলে
নূতন কালের বেশে।
কভু জাগে মনে আজও যে জাগে নি এ জীবনে
গানের খেয়া সে মাগে আমার তীরে এসে॥
আমি হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল
আমি হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল, শুধাইল না কেহ।
সে তো এল না, যারে সঁপিলাম এই প্রাণ মন দেহ॥
সে কি মোর তরে পথ চাহে, সে কি বিরহগীত গাহে
যার বাঁশরিধ্বনি শুনিয়ে আমি ত্যজিলাম গেহ॥
আর নাই রে বেলা নামল ছায়া ধরণীতে
আর নাই রে বেলা, নামল ছায়া ধরণীতে।
এখন চল্ রে ঘাটে কলসখানি ভরে নিতে।
জলধারার কলস্বরে সন্ধ্যাগগন আকুল করে,
ওরে, ডাকে আমায় পথের ‘পরে সেই ধ্বনিতে॥
এখন বিজন পথে করে না কেউ আসা যাওয়া
ওরে, প্রেমনদীতে উঠেছে ঢেউ, উতল হাওয়া
জানি নে আর ফিরব কিনা, কার সাথে আজ হবে চিনা–
ঘাটে সেই অজানা বাজায় বীণা তরণীতে॥
আর নহে আর নহে বসন্তবাতাস কেন আর শুষ্ক ফুলে বহে
আর নহে, আর নহে–
বসন্তবাতাস কেন আর শুষ্ক ফুলে বহে॥
লগ্ন গেল বয়ে সকল আশা লয়ে,
এ কোন্ প্রদীপ জ্বালো এ যে বক্ষ আমার দহে॥
কানন মরু হল,
আজ এই সন্ধ্যা-অন্ধকারে সেথায় কী ফুল তোলো।
কাহার ভাগ্য হতে বরণমালা হরণ করো,
ভাঙা ডালি ভরো–
মিলনমালার কণ্টকভার কণ্ঠে কি আর সহে॥
আরো একটু বসো তুমি আরো একটু বলো
আরো একটু বসো তুমি, আরো একটু বলো।
পথিক, কেন অথির হেন– নয়ন ছলোছলো ॥
আমার কী যে শুনতে এলে তার কিছু কি আভাস পেলে–
নীরব কথা বুকে আমার করে টলোমলো ॥
যখন থাক দূরে
আমার মনের গোপন বাণী বাজে গভীর সুরে।
কাছে এলে তোমার আঁখি সকল কথা দেয় যে ঢাকি–
সে যে মৌন প্রাণের রাতে তারা জ্বলোজ্বলো ॥
আরো কিছুখন নাহয় বসিয়ো পাশে
আরো কিছুখন নাহয় বসিয়ো পাশে,
আরো যদি কিছু কথা থাকে তাই বলো।
শরত-আকাশ হেরো ম্লান হয়ে আসে,
বাষ্প-আভাসে দিগন্ত ছলোছলো ॥
জানি তুমি কিছু চেয়েছিলে দেখিবারে,
তাই তো প্রভাতে এসেছিলে মোর দ্বারে,
দিন না ফুরাতে দেখিতে পেলে কি তারে
হে পথিক, বলো বলো–
সে মোর অগম অন্তরপারাবারে
রক্তকমল তরঙ্গে টলোমলো ॥
দ্বিধাভরে আজও প্রবেশ কর নি ঘরে,
বাহির আঙনে করিলে সুরের খেলা।
জানি না কী নিয়ে যাবে যে দেশান্তরে,
হে অতিথি, আজি শেষ বিদায়ের বেলা।
প্রথম প্রভাতে সব কাজ তব ফেলে
যে গভীর বাণী শুনিবারে কাছে এলে
কোনোখানে কিছু ইশারা কি তার পেলে,
হে পথিক, বলো বলো–
সে বাণী আপন গোপন প্রদীপ জ্বেলে
রক্ত আগুনে প্রাণে মোর জ্বলোজ্বলো ॥
আসা-যাওয়ার পথের ধারে গান গেয়ে মোর কেটেছে দিন
আসা-যাওয়ার পথের ধারে গান গেয়ে মোর কেটেছে দিন।
যাবার বেলায় দেব কারে বুকের কাছে বাজল যে বীন॥
সুরগুলি তার নানা ভাগে রেখে যাব পুষ্পরাগে,
মীড়গুলি তার মেঘের রেখায় স্বর্ণলেখায় করব বিলীন॥
কিছু বা সে মিলনমালায় যুগলগলায় রইবে গাঁথা,
কিছু বা সে ভিজিয়ে দেবে দুই চাহনির চোখের পাতা।
কিছু বা কোন্ চৈত্রমাসে বকুল-ঢাকা বনের ঘাসে
মনের কথার টুকরো আমার কুড়িয়ে পাবে কোন উদাসীন॥
আহা তোমার সঙ্গে প্রাণের খেলা
আহা তোমার সঙ্গে প্রাণের খেলা, প্রিয় আমার, ওগো প্রিয়–
বড়ো উতলা আজ পরান আমার, খেলাতে হার মানবে কি ও॥
কেবল তুমিই কি গো এমনি ভাবে রাঙিয়ে মোরে পালিয়ে যাবে।
তুমি সাধ করে, নাথ, ধরা দিয়ে আমারও রঙ বক্ষে নিয়ো–
এই হৃৎকমলের রাঙা রেণু রাঙাবে ওই উত্তরীয়॥
আহা জাগি পোহালো বিভাবরী
আহা, জাগি পোহালো বিভাবরী।
অতি ক্লান্ত নয়ন তব সুন্দরী॥
ম্লান প্রদীপ উষানিলচঞ্চল, পাণ্ডুর শশধর গত-অস্তাচল,
মুছ আঁখিজল, চল’ সখি চল’ অঙ্গে নীলাঞ্চল সম্বরি॥
শরতপ্রভাত নিরাময় নির্মল, শান্ত সমীরে কোমল পরিমল,
নির্জন বনতল শিশিরসুশীতল, পুলকাকুল তরুবল্লরী।
বিরহশয়নে ফেলি মলিন মালিকা এস নবভুবনে এসে গো বালিকা,
গাঁথি লহ অঞ্চলে নব শেফালিকা অলকে নবীন ফুলমঞ্জরী॥
আয় তবে সহচরী হাতে হাতে ধরি ধরি
আয় তবে সহচরী, হাতে হাতে ধরি ধরি
নাচিবি ঘিরি ঘিরি, গাহিবি গান।
আন্ তবে বীণা–
সপ্তম সুরে বাঁধ্ তবে তান॥
পাশরিব ভাবনা, পাশরিব যাতনা,
রাখিব প্রমোদে ভরি দিবানিশি মনপ্রাণ।
আন্ তবে বীণা–
সপ্তম সুরে বাঁধ্ তবে তান॥
ঢালো ঢালো শশধর, ঢালো ঢালো জোছনা।
সমীরণ, বহে যা রে ফুলে ফুলে ঢলি ঢলি।
উলসিত তটিনী,
উথলিত গীতরবে খুলে দে রে মনপ্রাণ॥
উতল হাওয়া লাগল আমার গানের তরণীতে
উতল হাওয়া লাগল আমার গানের তরণীতে।
দোলা লাগে, দোলা লাগে
তোমার চঞ্চল ওই নাচের লহরীতে॥
যদি কাটে রশি, যদি হাল পড়ে খসি,
যদি ঢেউ উঠে উচ্ছ্বসি,
সম্মুখেতে মরণ যদি জাগে,
করি নে ভয়– নেবই তারে, নেবই তারে জিতে॥
উদাসিনী -বেশে বিদেশিনী কে সে নাইবা তাহারে জানি
উদাসিনী -বেশে বিদেশিনী কে সে নাইবা তাহারে জানি,
রঙে রঙে লিখা আঁকি মরীচিকা মনে মনে ছবিখানি॥
পুবের হাওয়ায় তরীখানি তার এই ভাঙা ঘাট কবে হল পার
দূর নীলিমার বক্ষে তাহার উদ্ধত বেগ হানি॥
মুগ্ধ আলসে গণি একা বসে পলাতকা যত ঢেউ।
যারা চলে যায় ফেরে না তো হায় পিছু-পানে আর কেউ।
মনে জানি কারো নাগাল পাব না– তবু যদি মোর উদাসী ভাবনা
কোনো বাসা পায় সেই দুরাশায় গাঁথি সাহানায় বাণী॥
এ কী সুধারস আনে আজি মম মনে প্রাণে
এ কী সুধারস আনে
আজি মম মনে প্রাণে॥
সে যে চিরদিবসেরই, নূতন তাহারে হেরি–
বাতাস সে মুখ ঘেরি মাতে গুঞ্জনগানে॥
পুরাতন বীণাখানি ফিরে পেল হারা বাণী।
নীলাকাশ শ্যামধরা পরশে তাহারি ভরা–
ধরা দিল অগোচরা নব নব সুরে তানে॥
এ তো খেলা নয় খেলা নয়
এ তো খেলা নয়, খেলা নয়– এ যে হৃদয়দহনজ্বালা সখী॥
এ যে প্রাণভরা ব্যাকুলতা, গোপন মর্মের ব্যথা,
এ যে, কাহার চরণোদ্দেশে জীবন মরণ ঢালা॥
কে যেন সতত মোরে ডাকিয়ে আকুল করে,
যাই-যাই করে প্রাণ, যেতে পারি নে।
যে-কথা বলিতে চাহি, তা বুঝি বলিতে নাহি–
কোথায় নামায়ে রাখি, সখী, এ প্রেমের ডালা।
যতনে গাঁথিয়ে শেষে, পরাতে পারি নে মালা।
এ পথে আমি-যে গেছি বার বার
এ পথে আমি-যে গেছি বার বার, ভুলি নি তো এক দিনও।
আজ কি ঘুচিল চিহ্ন তাহার, উঠিল বনের তৃণ॥
তবু মনে মনে জানি নাই ভয়, অনুকূল বায়ু সহসা যে বয়–
চিনিব তোমায় আসিবে সময়, তুমি যে আমায় চিন॥
একেলা যেতাম যে প্রদীপ হাতে নিবেছে তাহার শিখা।
তবু জানি মনে তারার ভাষাতে ঠিকানা রয়েছে লিখা।
পথের ধারেতে ফুটিল যে ফুল জানি জানি তারা ভেঙে দেবে ভুল–
গন্ধে তাদের গোপন মৃদুল সঙ্কেত আছে লীন॥
পারে মুখর হল কেকা ওই
এ পারে মুখর হল কেকা ওই, ও পারে নীরব কেন কুহু হায়।
এক কহে, ‘আর-একটি একা কই, শুভযোগে কবে হব দুঁহু হায়।’
অধীর সমীর পুরবৈয়াঁ নিবিড় বিরহব্যথা বইয়া
নিশ্বাস ফেলে মুহু মুহু হায়॥
আষাঢ় সজলঘন আঁধারে ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে–
‘আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে
ঋতুর দু ধারে থাকে দুজনে, মেলে না যে কাকলি ও কূজনে,
আকাশের প্রাণ করে হূহু হায়॥
এই উদাসী হাওয়ার পথে পথে
এই উদাসী হাওয়ার পথে পথে মুকুলগুলি ঝরে;
আমি কুড়িয়ে নিয়েছি, তোমার চরণে দিয়েছি–
লহো লহো করুণ করে॥
যখন যাব চলে ওরা ফুটবে তোমার কোলে,
তোমার মালা গাঁথার আঙুলগুলি মধুর বেদনভরে
যেন আমায় স্মরণ করে॥
বউকথাকও তন্দ্রাহারা বিফল ব্যথায় ডাক দিয়ে হয় সারা
আজি বিভোর রাতে।
দুজনের কানাকানি কথা দুজনের মিলনবিহ্বলতা,
জ্যোৎস্নাধারায় যায় ভেসে যায় দোলের পূর্ণিমাতে।
এই আভাসগুলি পড়বে মালায় গাঁথা কালকে দিনের তরে
তোমার অলস দ্বিপ্রহরে॥
এই কথাটি মনে রেখো
এই কথাটি মনে রেখো, তোমাদের এই হাসিখেলায়
আমি যে গান গেয়েছিলেম জীর্ণ পাতা ঝরার বেলায়।
শুকনো ঘাসে শূন্য বলে আপন-মনে
অনাদরে অবহেলায়
আমি যে গান গেয়েছিলেম জীর্ণ পাতা ঝরার বেলায়॥
দিনের পথিক মনে রেখো, আমি চলেছিলেম রাতে
সন্ধ্যাপ্রদীপ নিয়ে হাতে।
যখন আমার ও-পার থেকে গেল ডেকে ভেসেছিলেম ভাঙা ভেলায়।
আমি যে গান গেয়েছিলেম জীর্ণ পাতা ঝরার বেলায়॥
এই বুঝি মোর ভোরের তারা এল সাঁঝের তারার বেশে
এই বুঝি মোর ভোরের তারা এল সাঁঝের তারার বেশে।
অবাক-চোখে ওই চেয়ে রয় চিরদিনের হাসি হেসে।
সকাল বেলা পাই নি দেখা, পাড়ি দিল কখন একা,
নামল আলোক-সাগর-পারে অন্ধকারের ঘাটে এসে॥
সকাল বেলা আমার হৃদয় ভরিয়েছিল পথের গানে,
সন্ধ্যাবেলা বাজায় বীণা কোন্ সুরে যে কেই বা জানে।
পরিচয়ের রসের ধারা কিছুতে আর হয় না হারা
বারে বারে নতুন করে চিত্ত আমার ভুলাবে সে॥
একদা তুমি প্রিয়ে আমারি এ তরুমূলে
একদা তুমি, প্রিয়ে, আমারি এ তরুমূলে
বসেছ ফুলসাজে সে কথা যে গেছ ভুলে॥
সেথা যে বহে নদী নিরবধি সে ভোলে নি,
তারি যে স্রোতে আঁকা বাঁকা বাঁকা তব বেণী,
তোমারি পদরেখা আছে লেখা তারি কূলে।
আজি কি সবই ফাঁকি– সে কথা কি গেছ ভুলে॥
গেঁথেছ যে রাগিণী একাকিনী দিনে দিনে
আজিও যায় ব্যেপে কেঁপে কেঁপে তৃণে তৃণে।
গাঁথিতে যে আঁচলে ছায়াতলে ফুলমালা
তাহারি পরশন হরষন- সুধা-ঢালা
ফাগুন আজো যে রে খুঁজে ফেরে চাঁপাফুলে।
আজি কি সবই ফাঁকি– সে কথা কি গেছ ভুলে॥
একদিন চিনে নেবে তারে
একদিন চিনে নেবে তারে,
তারে চিনে নেবে
অনাদরে যে রয়েছে কুণ্ঠিতা ॥
সরে যাবে নবারুণ-আলোকে এই কালো অবগুণ্ঠন–
ঢেকে রবে না রবে না মায়াকুহেলীর মলিন আবরণ
তারে চিনে নেবে॥
আজ গাঁথুক মালা সে গাঁথুক মালা,
তার দুখরজনীর অশ্রুমালা
কখন দুয়ারে অতিথি আসিবে,
লবে তুলি মালাখানি ললাটে।
আজি জ্বালুক প্রদীপ চির-অপরিচিতা
পূর্ণপ্রকাশের লগন লাগি–
চিনে নেবে॥
একলা ব’সে একে একে অন্যমনে
একলা ব’সে একে একে অন্যমনে পদ্মের দল ভাসাও জলে অকারণে।
হায় রে, বুঝি কখন তুমি গেছ ভুলে ও যে আমি এনেছিলেম আপনি তুলে,
রেখেছিলেম প্রভাতে ওই চরণমূলে অকারণে–
কখন তুলে নিলে হাতে যাবার ক্ষণে অন্যমনে॥
দিনের পরে দিনগুলি মোর এমনি ভাবে
তোমার হাতে ছিঁড়ে হারিয়ে যাবে।
সবগুলি এই শেষ হবে যেই তোমার খেলায়
এমনি তোমার আলস-ভরা অবহেলায়
হয়তো তখন বাজবে ব্যথা সন্ধেবেলায় অকারণে–
চোখের জলের লাগবে আভাস নয়নকোণে অন্যমনে॥
একলা ব’সে হেরো তোমার ছবি
একলা ব’সে হেরো তোমার ছবি এঁকেছি আজ বাসন্তী রঙ দিয়া।
খোঁপার ফুলে একটি মধুলোভী মৌমাছি ওই গুঞ্জরে বন্দিয়া ॥
সমুখ-পানে বালুতটের তলে শীর্ণ নদী শ্রান্তধারায় চলে,
বেণুচ্ছায়া তোমার চেলাঞ্চলে উঠিছে স্পন্দিয়া ॥
মগ্ন তোমার স্নিগ্ধ নয়ন দুটি ছায়ায় ছন্ন অরণ্য-অঙ্গনে,
প্রজাপতির দল যেখানে জুটি রঙ ছড়ালো প্রফুল্ল রঙ্গনে।
তপ্ত হাওয়ায় শিথিলমঞ্জরী গোলকচাঁপা একটি দুটি করি
পায়ের কাছে পড়ছে ঝরি ঝরি তোমারে নন্দিয়া ॥
ঘাটের ধারে কম্পিত ঝাউশাখে দোয়েল দোলে সঙ্গীতে চঞ্চলি,
আকাশ ঢালে পাতার ফাঁকে ফাঁকে তোমার কোলে সুবর্ণ-অঞ্জলি।
বনের পথে কে যায় চলি দূরে– বাঁশির ব্যথা পিছন-ফেরা সুরে
তোমায় ঘিরে হাওয়ায় ঘুরে ঘুরে ফিরিছে ক্রন্দিয়া ॥
এখনো কেন সময় নাহি হল
এখনো কেন সময় নাহি হল, নাম-না-জানা অতিথি–
আঘাত হানিলে না দুয়ারে, কহিলে না ‘দ্বার খোলো’॥
হাজার লোকের মাঝে রয়েছি একেলা যে–
এসো আমার হঠাৎ-আলো, পরান চমকি তোলো ॥
আঁধার বাধা আমার ঘরে, জানি না কাঁদি কাহার তরে।
চরণসেবার সাধনা আনো, সকল দেবার বেদনা আনো–
নবীন প্রাণের জাগরমন্ত্র কানে কানে বোলো ॥
এখনো তারে চোখে দেখি নি
এখনো তারে চোখে দেখি নি, শুধু বাঁশি শুনেছি–
মন প্রাণ যাহা ছিল দিয়ে ফেলেছি॥
শুনেছি মুরতি কালো তারে না দেখা ভালো।
সখী, বলো আমি জল আনিতে যমুনায় যাব কি॥
শুধু স্বপনে এসেছিল সে, নয়নকোণে হেসেছিল সে।
সে অবধি, সই, ভয়ে ভয়ে রই– আঁখি মেলিতে ভেবে সারা হই।
কাননপথে যে খুশি সে যায়, কদমতলে যে খুশি সে চায়–
সখী, বলো আমি আঁখি তুলে কারো পানে চাব কি॥
এবার উজাড় করে লও হে আমার যা-কিছু সম্বল
এবার উজাড় করে লও হে আমার যা-কিছু সম্বল।
ফিরে দাও, ফিরে চাও, ফিরে চাও ওগো চঞ্চল॥
চৈত্ররাতের বেলায় নাহয় এক প্রহরের খেলায়
আমার স্বপনস্বরূপিনী প্রাণে দাও পেতে অঞ্চল।
যদি এই ছিল গো মনে,
যদি পরম দিনের স্মরণ ঘুচাও চরম অযতনে,
তবে ভাঙা খেলার ঘরে নাহয় দাঁড়াও ক্ষণেক-তরে—-
সেথা ধুলায় ধুলায় ছাড়াও হেলায় ছিন্ন ফুলের দল।
এবার মিলন-হাওয়ায়-হাওয়ায় হেলতে হবে
এবার মিলন-হাওয়ায়-হাওয়ায় হেলতে হবে।
ধরা দেবার খেলা এবার খেলতে হবে॥
ওগো পথিক, পথের টানে চলেছিলে মরণ-পানে,
আঙিনাতে আসন এবার মেলতে হবে॥
মাধবিকার কুঁড়িগুলি আনো তুলে–মালতিকার মালা গাঁথো নবীন ফুলে।
স্বপ্নস্রোতে ভিড়বি পারে, বাঁধবি দুজন দুইজনারে,
সেই মায়াজাল হৃদয় ঘিরে ফেলতে হবে॥
এবার সখী সোনার মৃগ
এবার, সখী, সোনার মৃগ দেয় বুঝি দেয় ধরা।
আয় গো তোরা পুরাঙ্গনা, আয় সবে আয় ত্বরা ॥
ছুটেছিল পিয়াস ভরে মরীচিকাবারির তরে,
ধ’রে তারে কোমল করে কঠিন ফাঁসি পরা ॥
দয়ামায়া করিস নে গো, ওদের নয় সে ধারা।
দয়ার দোহাই মানবে না গো একটা পেলেই ছাড়া।
বাঁধন-কাটা বন্যটাকে মায়ার ফাঁদে ফেলাও পাকে,
ভুলাও তাকে বাঁশির ডাকে, বুদ্ধিবিচার-হরা ॥