হে নবীনা প্রতিদিনের পথের ধুলায় যায় না চিনা
হে নবীনা,
প্রতিদিনের পথের ধুলায় যায় না চিনা॥
শুনি বাণী ভাসে বসন্তবাতাসে,
প্রথম জাগরণে দেখি সোনার মেঘে লীনা॥
স্বপনে দাও ধরা কী কৌতুকে ভরা।
কোন্ অলকার ফুলে মালা গাঁথ চুলে,
কোন্ অজানা সুরে বিজনে বাজাও বীণা॥
হে নিরুপমা গানে যদি লাগে বিহ্বল তান করিয়ো ক্ষমা
হে নিরুপমা,
গানে যদি লাগে বিহ্বল তান করিয়ো ক্ষমা ॥
ঝরোঝরো ধারা আজি উতরোল, নদীকূলে-কূলে উঠে কল্লোল,
বনে বনে গাহে মর্মরস্বরে নবীন পাতা।
সজল পবন দিশে দিশে তোলে বাদলগাথা ॥
হে নিরুপমা,
চপলতা আজি যদি ঘটে তবে করিয়ো ক্ষমা।
এল বরষার সঘন দিবস, বনরাজি আজি ব্যাকুল বিবশ,
বকুলবীথিকা মুকুলে মত্ত কানন-‘পরে।
নবকদম্ব মদির গন্ধে আকুল করে॥
হে নিরুপমা,
চপলতা আজি যদি ঘটে তবে করিয়ো ক্ষমা।
তোমার দুখানি কালো আঁখি-‘পরে বরষার কালো ছায়াখানি পড়ে,
ঘন কালো তব কুঞ্চিত কেশে যূথীর মালা।
তোমার চরণে নববরষার বরণডালা ॥
হে নিরুপমা,
আঁখি যদি আজ করে অপরাধ, করিয়ো ক্ষমা।
হেরো আকাশের দূর কোণে কোণে বিজুলি চমকি ওঠে খনে খনে,
দ্রুত কৌতুকে তব বাতায়নে কী দেখে চেয়ে।
অধীর পবন কিসের লাগিয়া আসিছে ধেয়ে॥
হে বিরহী হায় চঞ্চল হিয়া তব
হে বিরহী, হায়, চঞ্চল হিয়া তব,
নীরবে জাগ একাকী শূন্য মন্দিরে দীর্ঘ বিভাবরী–
কোন্ সে নিরুদ্দেশ-লাগি আছ জাগিয়া॥
স্বপনরূপিণী অলোকসুন্দরী অলক্ষ্য অলকাপুরী-নিবাসিনী,
তাহার মুরতি রচিলে বেদনায় হৃদয়মাঝারে॥
হে সখা বারতা পেয়েছি মনে মনে
হে সখা বারতা পেয়েছি মনে মনে তব নিশ্বাসপরশনে,
এসেছ অদেখা বন্ধু দক্ষিণসমীরণে॥
কেন বঞ্চনা কর মোরে, কেন বাঁধ অদৃশ্য ডোরে–
দেখা দাও, দেখা দাও দেহ মন ভ’রে মন নিকুঞ্জবনে॥
দেখা দাও চম্পকে রঙ্গনে, দেখা দাও কিংশুকে কাঞ্চনে।
কেন শুধু বাঁশরির সুরে ভুলায়ে লয়ে যাও দূরে,
যৌবন-উৎসবে ধরা দাও দৃষ্টির বন্ধনে।
হেলাফেলা সারা বেলা
হেলাফেলা সারা বেলা একি খেলা আপন-সনে।
এই বাতাসে ফুলের বাসে মুখখানি কার পড়ে মনে॥
আঁখির কাছে বেড়ায় ভাসি কে জানে গো কাহার হাসি,
দুটি ফোঁটা নয়নসলিল রেখে যায় এই নয়নকোণে॥
কোন্ ছায়াতে কোন্ উদাসী দূরে বাজায় অলস বাঁশি,
মনে হয় কার মনের বেদন কেঁদে বেড়ায় বাঁশির গানে।
সারা দিন গাঁথি গান কারে চাহে, গাহে প্রাণ–
তরুতলে ছায়ার মতন বসে আছি ফুলবনে॥