সকরুণ বেণু বাজায়ে কে যায়
সকরুণ বেণু বাজায়ে কে যায় বিদেশী নায়ে,
তাহারি রাগিণী লাগিল গায়ে॥
সে সুর বাহিয়া ভেসে আসে কার সুদূর বিরহবিধুর হিয়ার
অজানা বেদনা, সাগরবেলার অধীর বায়ে
বনের ছায়ে॥
তাই শুনে আজি বিজন প্রবাসে হৃদয়মাঝে
শরত্শিশিরে ভিজে ভৈরবী নীরবে বাজে।
ছবি মনে আসে আলোতে ও গীতে— যেন জনহীন নদীপথটিতে
কে চলেছে জলে কলস ভরিতে অলস পায়ে
বনের ছায়ে॥
স্বরবিতান ১৩
সকরুণ বেণু বাজায়ে কে যায় বিদেশী নায়ে
সকরুণ বেণু বাজায়ে কে যায় বিদেশী নায়ে,
তাহারি রাগিণী লাগিল গায়ে॥
সে সুর বাহিয়া ভেসে আসে কার সুদূর বিরহবিধুর হিয়ার
অজানা বেদনা, সাগরবেলার অধীর বায়ে
বনের ছায়ে॥
তাই শুনে আজি বিজন প্রবাসে হৃদয়মাঝে
শরৎশিশিরে ভিজে ভৈরবী নীরবে বাজে।
ছবি মনে আনে আলোতে ও গীতে– যেন জনহীন নদীপথটিতে
কে চলেছে জলে কলস ভরিতে অলস পায়ে
বনের ছায়ে॥
সকল হৃদয় দিয়ে ভালোবেসেছি যারে
সকল হৃদয় দিয়ে ভালোবেসেছি যারে সে কি ফিরাতে পারে, সখী।
সংসারবাহিরে থাকি, জানি নে কী ঘটে সংসারে॥
কে জানে হেথায় প্রাণপণে প্রাণ যারে চায়
তারে পায় কি না পায়– জানি নে–
ভয়ে ভয়ে তাই এসেছি গো অজানা হৃদয়-দ্বারে।
তোমার সকলি ভালোবাসি– ওই রূপরাশি,
ওই খেলা, ওই গান, ওই মধুহাসি।
ওই দিয়ে আছ ছেয়ে জীবন আমারই।
কোথায় তোমার সীমা, ভুবনমাঝারে॥
সকালবেলায় আলোয় বাজে বিদায়ব্যথার ভৈরবী
সকালবেলায় আলোয় বাজে বিদায়ব্যথার ভৈরবী–
আন্ বাঁশি তোর, আয় কবি॥
শিশিরশিহর শরতপ্রাতে শিউলিফুলের গন্ধসাথে
গান রেখে যাস আকুল হাওয়ার, নাই যদি রোস নাই র’বি॥
এমন উষা আসবে আবার সোনায় রঙিন দিগন্তে,
কুন্দের দুল সীমন্তে।
কপোতকূজনকরুণ ছায়ায় শ্যামল কোমল মধুর মায়ায়
তোমার গানের নূপুরমুখর
জাগবে আবার এই ছবি॥
সখা আপন মন নিয়ে কাঁদিয়ে মরি
সখা, আপন মন নিয়ে কাঁদিয়ে মরি, পরের মন নিয়ে কী হবে।
আপন মন যদি বুঝিতে নারি, পরের মন বুঝে কে কবে॥
অবোধ মন লয়ে ফিরি ভবে, বাসনা কাঁদে প্রাণে হা-হা-রবে–
এ মন দিতে চাও দিয়ে ফেলো, কেন গো নিতে চাও মন তবে॥
স্বপন সম সব জানিয়ো মনে, তোমার কেহ নাই এ ত্রিভুবনে–
যে জন ফিরিতেছে আপন আশে তুমি ফিরিছ কেন তাহার পাশে।
নয়ন মেলি শুধু দেখে যাও, হৃদয় দিয়ে শুধু শান্তি পাও–
তোমারে মুখ তুলে চাহে না যে থাক্ সে আপনার গরবে॥
সখী আমারি দুয়ারে কেন আসিল
সখী, আমারি দুয়ারে কেন আসিল
নিশিভোরে যোগী ভিখারি।
কেন করুণস্বরে বীণা বাজিল॥
আমি আসি যাই যতবার চোখে পড়ে মুখ তার,
তারে ডাকিব কি ফিরাইব তাই ভাবি লো ॥
শ্রাবণে আঁধার দিশি শরতে বিমল নিশি,
বসন্তে দখিন বায়ু, বিকশিত উপবন–
কত ভাবে কত গীতি গাহিতেছে নিতি নিতি
মন নাহি লাগে কাজে, আঁখিজলে ভাসি লো ॥
সখী তোরা দেখে যা এবার এল সময়
সখী, তোরা দেখে যা এবার এল সময়
আর বিলম্ব নয়, নয়, নয়॥
কাছে এল বেলা, মরণ-বাঁচনেরই খেলা,
ঘুচিল সংশয়।
আর বিলম্ব নয়।
বাঁধন ছিড়ল তরী
হঠাৎ দখিন-হাওয়ায়-হাওয়ায় পাল উঠিল ভরি।
ঢেউ ওঠে ওই খেপে, ও তোর হাল গেল যে কেঁপে,
ঘূর্ণিজলে ডুবে গেল সকল লজ্জা ভয়॥
সখী বলো দেখি লো
সখী, বলো দেখি লো,
নিরদয় লাজ তোর টুটিবে কি লো।
চেয়ে আছি, ললনা–
মুখানি তুলিবি কি লো,
ঘোমটা খুলিবি কি লো,
আধফোটা অধরে হাসি ফুটিবে কি লো ॥
শরমের মেঘে ঢাকা বিধুমুখানি–
মেঘ টুটে জোছনা ফুটে উঠিবে কি লো।
তৃষিত আঁখির আশা পূরাবি কি লো–
তবে ঘোমটা খোলো, মুখটি তোলো, আঁঘি মেলো লো ॥
সখী প্রতিদিন হায় এসে ফিরে যায় কে
সখী, প্রতিদিন হায় এসে ফিরে যায় কে।
তারে আমার মাথার একটি কুসুম দে॥
যদি শুধায় কে দিল কোন্ ফুলকাননে,
মোর শপথ, আমার নামটি বলিস নে॥
সখী, সে আসি ধুলায় বসে যে তরুর তলে
সেথা আসন-বিছায়ে রাখিস বকুলদলে।
সে যে করুণা জাগায় সকরুণ নয়নে–
যেন কী বলিতে চায়, না বলিয়া যায় সে॥
সখী আঁধারে একেলা ঘরে মন মানে না
সখী, আঁধারে একেলা ঘরে মন মানে না।
কিসেরই পিয়াসে কোথা যে যাবে সে, পথ জানে না ॥
ঝরোঝরো নীরে, নিবিড় তিমিরে, সজল সমীরে গো
যেন কার বাণী কভু কানে আনে– কভু আনে না ॥
সখী ওই বুঝি বাঁশি বাজে
সখী, ওই বুঝি বাঁশি বাজে– বনমাঝে কি মনোমাঝে॥
বসন্তবায় বহিছে কোথায়,
কোথায় ফুটেছে ফুল,
বলো গো সজনি, এ সুখরজনী
কোন্খানে উদিয়াছে– বনমাঝে কি মনোমাঝে॥
যাব কি যাব না মিছে এ ভাবনা,
সখী, মিছে মরি লোকলাজে।
কে জানে কোথা সে বিরহহুতাশে
ফিরে অভিসারসাজে–
বনমাঝে কি মনোমাঝে
সখী বহে গেল বেলা
সখী, বহে গেল বেলা, শুধু হাসিখেলা, এ কি আর ভালো লাগে।
আকুল তিয়াষ, প্রেমের পিয়াস, প্রাণে কেন নাহি জাগে॥
কবে আর হবে থাকিতে জীবন আঁখিতে আঁখিতে মদির মিলন–
মধুর হুতাশে মধুর দহন, নিতি-নব অনুরাগে॥
তরল কোমল নয়নের জল, নয়নে উঠিবে ভাসি,
সে বিষাদনীরে নিবে যাবে ধীরে প্রখর চপল হাসি।
উদাস নিশ্বাস আকুলি উঠিবে, আশানিরাশায় পরান টুটিবে–
মরমের আলো কপোলে ফুটিবে শরম-অরুণরাগে॥
সখী সে গেল কোথায়
সখী, সে গেল কোথায়, তারে ডেকে নিয়ে আয়।
দাঁড়াব ঘিরে তারে তরুতলায়॥
আজি এ মধুর সাঁঝে কাননে ফুলের মাঝে
হেসে হেসে বেড়াবে সে, দেখিব তায়॥
আকাশের তারা ফুটেছে, দখিনে বাতাস ছুটেছে,
পাখিটি ঘুমঘোরে গেয়ে উঠেছে।
আয় লো আনন্দময়ী, মধুর বসন্ত লয়ে,
লাবণ্য ফুটাবি লো তরুতলায়॥