ধূসর জীবনের গোধূলিতে ক্লান্ত আলোয় ম্লানস্মৃতি
ধূসর জীবনের গোধূলিতে ক্লান্ত আলোয় ম্লানস্মৃতি।
সেই সুরের কায়া মোর সাধের সাথি, স্বপ্নের সঙ্গিনী,
তারি আবেশ লাগে মনে বসন্তবিহ্বল বনে॥
দেখি তার বিরহী মূর্তি বেহাগের তানে
সকরুণ নত নয়ানে।
পূর্ণিমা জ্যোৎস্নালোকে মিলে যায়
জাগ্রত কোকিল-কাকলিতে মোর বাঁশির গীতে॥
না চাহিলে যারে পাওয়া যায়
না চাহিলে যারে পাওয়া যায়, তেয়াগিলে আসে হাতে,
দিবসে সে ধন হারায়েছি আমি– পেয়েছি আঁধার রাতে॥
না দেখিবে তারে, পরশিবে না গো, তারি পানে প্রাণ মেলে দিয়ে জাগো–
তারায় তারায় রবে তারি বাণী, কুসুমে ফুটিবে প্রাতে॥
তারি লাগি যত ফেলেছি অশ্রুজল
বীণাবাদিনীর শতদলদলে করিছে সে টলোমল।
মোর গানে গানে পলকে পলকে ঝলসি উঠিছে ঝলকে ঝলকে,
শান্ত হাসির করুণ আলোকে ভাতিছে নয়নপাতে॥
না না গো না কোরো না ভাবনা
না, না গো না,
কোরো না ভাবনা–
যদি বা নিশি যায় যাব না যাব না ॥
যখনি চলে যাই আসিব ব’লে যাই,
আলোছায়ার পথে করি আনাগোনা ॥
দোলাতে দোলে মন মিলনে বিরহে।
বারে বারেই জানি তুমি তো চির হে।
ক্ষণিক আড়ালে বারেক দাঁড়ালে
মরি ভয়ে ভয়ে পাব কি পাব না ॥
না না ভুল কোরো না গো
না না, ভুল কোরো না গো, ভুল কোরো না,
ভুল কোরো না ভালোবাসায়।
ভুলায়ো না, ভুলায়ো না, ভুলায়ো না নিষ্ফল আশায়॥
বিচ্ছেদদুঃখ নিয়ে আমি থাকি, দেয় না সে ফাঁকি,
পরিচিত আমি তারি ভাষায়॥
দয়ার ছলে তুমি হোয়ো না নিদয়।
হৃদয় দিতে চেয়ে ভেঙো না হৃদয়।
রেখো না লুব্ধ করে, মরণের বাঁশিতে মুগ্ধ করে
টেনে নিয়ে যেয়ো না সর্বনাশায়॥
না বলে যায় পাছে সে আঁখি মোর ঘুম না জানে
না বলে যায় পাছে সে আঁখি মোর ঘুম না জানে।
কাছে তার রই, তবুও ব্যথা যে রয় পরানে॥
যে পথিক পথের ভুলে এল মোর প্রাণের কূলে
পাছে তার ভুল ভেঙে যায়, চলে যায় কোন্ উজানে॥
এল যেই এল আমার আগল টুটে,
খোলা দ্বার দিয়ে আবার যাবে টুটে,
খেয়ালের হাওয়া লেগে যে খ্যাপা ওঠে জেগে
সে কি আর সেই অবেলায় মিনতির বাধা মানে॥
না বলে যেয়ো না চলে মিনতি করি
না বলে যেয়ো না চলে মিনতি করি!
গোপনে জীবন মন লইয়া হরি।
সারা নিশি জেগে থাকি, ঘুমে ঢুলে পড়ে আঁখি,
ঘুমালে হারাই পাছে সে ভয়ে মরি॥
চকিতে চমকি বঁধু, তোমারে খুঁজি–
থেকে থেকে মনে হয় স্বপন বুঝি।
নিশিদিন চাহে হিয়া পরান পসারি দিয়া
অধীর চরণ তব বাঁধিয়া ধরি॥
না বুঝে কারে তুমি ভাসালে আঁখিজলে
না বুঝে কারে তুমি ভাসালে আঁখিজলে।
ওগো, কে আছে চাহিয়া শূন্য পথপানে–
কাহার জীবনে নাহি সুখ, কাহার পরান জ্বলে॥
পড় নি কাহার নয়নের ভাষা,
বোঝ নি কাহার মরমের আশা,
দেখ নি ফিরে–
কার ব্যাকুল প্রাণের সাধ এসেছ দ’লে॥
না রে না রে ভয় করব না বিদায়বেদনারে
না রে, না রে, ভয় করব না বিদায়বেদনারে।
আপন সুধা দিয়ে ভরে দেব তারে।
চোখের জলে সে-যে নবীন রবে, ধ্যানের মণিমালায় গাঁথা হবে,
পরব বুকের হারে॥
নয়ন হতে তুমি আসবে প্রাণে, মিলবে তোমার বাণী আমার গানে।
বিরহব্যথায় বিধুর দিনে দুখের আলোয় তোমায় নেব চিনে,
এ মোর সাধনা রে।
নাই নাই নাই যে বাকি
নাই নাই নাই যে বাকি,
সময় আমার–
শেষের প্রহর পূর্ণ করে দেবে না কি॥
বারে বারে কারা করে আনাগোনা,
কোলাহলে সুরটুকু আর যায় না শোনা–
ক্ষণে ক্ষণে গানে আমার পড়ে ফাঁকি॥
পণ করেছি, তোমার হাতে আপনারে
শেষ করে আজ চুকিয়ে দেব একেবারে।
মিটিয়ে দেব সকল খোঁজা, সকল বোঝা,
ভোরবেলাকার একলা পথে চলব সোজা–
তোমার আলোয় ডুবিয়ে নেব সজাগ আঁখি॥
নাই বা এলে যদি সময় নাই
নাই বা এলে যদি সময় নাই,
ক্ষণেক এসে বোলো না গো “যাই যাই যাই’॥
আমার প্রাণে আছে জানি সীমাবিহীন গভীর বাণী,
তোমার চিরদিনের কথাখানি বলব — বলতে যেন পাই॥
যখন দখিনহাওয়া কানন ঘিরে
এক কথা কয় ফিরে ফিরে,
পূর্ণিমাচাঁদ কারে চেয়ে এক তানে দেয় আকাশ ছেয়ে,
যেন সময়হারা সেই সময়ে একটি সে গান গাই॥
নাই যদি বা এলে তুমি
নাই যদি বা এলে তুমি এড়িয়ে যাবে তাই ব’লে?
অন্তরেতে নাই কি তুমি সামনে আমার নাই ব’লে॥
মন যে আছে তোমায় মিশে, আমায় তবে ছাড়বে কিসে–
প্রেম কি আমার হারায় দিশে অভিমানে যাই ব’লে॥
বিরহ মোর হোক-না অকূল, সেই বিরহের সরোবরে
মিলনকমল উঠছে দুলে অশ্রুজলের ঢেউয়ের ‘পরে।
তবু তৃষায় মরে আঁখি, তোমার লাগি চেয়ে থাকি–
চোখের ‘পরে পাব না কি বুকের ‘পরে পাই ব’লে॥
নারীর ললিত লোভন লীলায়
নারীর ললিত লোভন লীলায় এখনি কেন এ ক্লান্তি।
এখনি কি সখা, খেলা হল অবসান॥
যে মধুর রসে ছিলে বিহ্বল সে কি মধুমাখা ভ্রান্তি–
সে কি স্বপ্নের দান। সে কি সত্যের অপমান।
দূর দুরাশায় হৃদয় ভরিছ, কঠিন প্রেমের প্রতিমা গড়িছ–
কী মনে ভাবিয়া নারীতে করিছ পৌরুষসন্ধান।
এও কি মায়ার দান॥
সহসা মন্ত্রবলে
নমনীয় এই কমনীয়তারে যদি আমাদের সখী একেবারে
পরের বসন-সমান ছিন্ন করি ফেলে ধূলিতলে
সবে না সবে না সে নৈরাশ্য– ভাগ্যের সেই অট্টহাস্য
জানি জানি সখা, ক্ষুব্ধ করিবে লুব্ধ পুরুষপ্রাণ– হানিবে নিঠুর বাণ॥
নিদ্রাহারা রাতের এ গান বাঁধব আমি কেমন সুরে
নিদ্রাহারা রাতের এ গান বাঁধব আমি কেমন সুরে।
কোন্ রজনীগন্ধা হতে আনব সে তান কণ্ঠে পূরে॥
সুরের কাঙাল আমার ব্যথা ছায়ার কাঙাল রৌদ্র যথা
সাঁজ-সকালে বনের পথে উদাস হয়ে বেড়ায় ঘুরে॥
ওগো, সে কোন্ বিহান বেলায় এই পথে কার পায়ের তলে
নাম-না-জানা তৃণকুসুম শিউরেছিল শিশিরজলে।
অলকে তার একটি গুছি করবীফুল রক্তরুচি,
নয়ন করে কী ফুল চয়ন নীল গগনে দূরে দূরে॥