তোমার মধ্যে
তোমার মধ্যে নিষ্ঠুরতা ছিল
এনভেলাপে ভূল ঠিকানা তাই
তোমার মধ্যে ভালোবাসাও ছিল
তারই আগুন জ্বালাচ্ছে দেশলাই।
তোমর মধ্যে ভালোবাসাও ছিল
লাল হয়েছে ছুরির নীল ধার
তোমার মধ্যে নিষ্ঠুরতাও ছিল
উপড়ে দিলে টেলিফোনেরতার।
প্রিয়-পাঠক-পাঠিকাগণ
প্রিয় পাঠক-পাঠিকাগণ!
এখন থেকে আমার কবিতায় তুমুল ওলোট-পালট।
আপনারা নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন
দমকলের ঘন্টায় বেহদ্দ বেজে বেজে
বহু শব্দের গা থেকে খসে পড়েছে প্লাস্টার এবং পালিশ।
একদিন সোফিয়া লোরেনের মতো মার কাটারি ছিল যে সব শব্দ
এখন গ্রন্থাবলীর অলিতে গলিতে তাদের হিঁজড়ে-নাচ।
অনেক সম্ভাবনাময় শব্দ এখন পয়লা নম্বেরের বখাটে
সেইসব আনুনো কলমের পাল্লায় পড়ে,
শব্দের পালকিতে চেপে
যারা কোনোদিন বেড়াতে যায়নি ময়ূরভঞ্জের মেঘে।
প্রিয় পাঠক-পাঠিকাগণ!
এখন থেকে আমার কবিতায় বাগান দেখলেই বুঝবেন,
আমি বলতে চাইছি সূর্যসম্ভব সেই ভবিষ্যতেই কথা
যার ব্লু-প্রিন্ট এখনো অন্ধকারের লালায় জবজবে।
আমি কাঁকড়া লিখলেই বুঝবেন
আমার আক্রমণের লক্ষ্য সেই সব মানুষ
কুলকুচির পরও রক্তকণা লেগে থাকে যাদের মাড়িতে।
শোষণের বদলে আমি লিখতে চাই গন্ডুষ
কবির বদলে নুলিয়া
এবং নারীর বদলে চন্দনকাঠ।
আগুনের খর-চাপে মানুষের মগজ থেকে গলে পড়ছে মেধা
অথবা অতিরিক্ত মেধার চাপেই
রক্তছাপে ভরে যাচ্ছে পৃথিবীর গুহসে’র সাদা দেয়াল।
এই নষ্ট ভূ-দৃশ্যমালার দিকে তাকিয়ে আমাদের উচিত
ভাগাড় শব্দটিকে এমন সম্ভ্রান্ত ভঙ্গীতে উচ্চারণ করা
যেন কঠোপনিষদের কোনো মন্ত্র।
বন্ধুদের প্রসঙ্গে
কাছের বন্ধুরা ক্রমশ চলে যাচ্ছে দূরে
দূরের বন্ধুরা এগিয়ে আসছে কাছে।
আসলে কেউই সরছে না
বা নড়ছে না।
শিং এ আটকানো ডালপালার জট খুলতে খুলতে
আমিই খুঁজে চলেছি
নক্ষত্র এবং আগুন
একদিকে নক্ষত্র এবং আগুন
অন্যদিকে নগদ অভ্যর্থনা এবং উৎফুল্ল মাইক্রোফোন
এইভাবে ভাগাভাগি হয়ে গেছে বন্ধুরা।
আমি এখন চলে যেতে চাই
সেই সব বন্ধুদের পাশে
যুদ্ধের বর্শাফলকের মতো
যাদের কপারের শিরা।
বসন্তকালেই
শুনেছি বসন্তকালে বনভূমি অহঙ্কারী হয়।
অথচ আমার সব সোনাদানা চুরি হয়ে গেছে এই বসন্তকালেই।
বসন্তকালেই সেই কপোতাক্ষী রমনীর কুষ্ঠ হয়েছিল
যে আমাকে বলেছিল তার সব নদী, গিরি, অরন্যের আমি অধীশ্বর।
খুদ-কুড়ো খুঁটে খাওয়া গরীবের ছিটেবেড়া থেকে
তোমাদের মোজেইক বাগান-পার্টিতে এসে ফলার খাওয়ার
সনিবন্ধ অনুরোধ এসেছিল বসন্তকালেই।
বসন্তকালেই আমি প্রধান অতিথি হয়ে পুরুলিয়া গেছি
বসন্তকালেই আম িভূবনেশ্বরে গিয়ে কবিতা পড়েছি
বসন্তকালেই আমি আকাশের ছেঁড়া জামা সেলাই করেছি।
অথচ আমার সব সোনাদানা, জমি জমা, কাপড়-চোপড়
স্মৃতি দিয়ে মাজা-ঘষা গোপনতা, অমর পরাগ
এবং বেসরকারী অস্ত্রাগার থেকে লুঠ গোলা ও বারুদ
ভিজে, ভেঙে, গলে, পচে, খসে, ঝরে, নষ্ট হচ্ছে
বসন্তকালেই।
বুঝলে রাধানাথ
একটা সাইকেল থাকলে বড় ভালো হতো
বুঝলে, রাধানাথ,
আরো ভালো হতো একটা মোটরবাইক থাকলে।
কাঠের বাকসে কুতকুতে খরগোস
সে-রকম আতুপুতু দিনকাল নয় এখন।
আগে নিজের কাছে নিজের গড়গড়ার নলের মতো
লম্বা হয়ে শুয়ে থাকতো মানুষ।
এখন ৩৬ রকম বায়নাক্কা
বুঝলে রাধানাথ,
মানুষের এখন ৫২ রকম উবু-জলন্ত খিদে।
এক একটা মানুষের ড্রয়িংরুম এখন দিল্লিতে
বাথরুম ত্রিবান্দ্রমে
বেডরুম ৩২/এ গুলু ওস্তাগর লেনে।
এক একটা মানুষকে এখন একই সঙ্গে সামলাতে হচ্ছে
মেথর, ম্যাজিস্ট্রেট এবং মন্ত্রী।
টেলিফোন নামিয়ে রাখলে টেলেকস
টেলেকস ফুরিয়ে গেলে টেলিগ্রাম
ব্যস্ত স্টেনোর আঙুলের মতো
এ থেকে ওয়াই
ওয়াই থেকে এফ
এফ থেকে জি কিংবা জেড পর্যন্ত
মানুষের মারদাঙ্গা দৌড়।
নিজস্ব রেলগাড়ি ছাড়া,
বুঝলে রাধানাথ
এত সব লাঞ্চ এবং ডিনার
এত সব ক্লাব, কনফারেন্স, সেমিনার
এত সব সিড়ি, সুড়ঙ্গ এবং রঙ্গীন চোরাবালির কাছে
ঝট ঝট পৌছনো বড় হাঙ্গামার ব্যাপার।
একটা অ্যামবাসাডার থাকলে বড় ভালো হতো
বুঝলে রাধানাথ,
আরো ভালো হতো ছেলেবেলার শালিকের মতো
একটা পোষা হেলিকপ্টার থাকলে।
মানুষ পেলে আর ইলিশমাছ খায় না
আমি খুব চিকেন খেতে ভালোবাসি
চিকেনগুলো নালা-নর্দমা খেতে ভালোবাসে
নালা নর্দমাগুলো ভালোবাসে কলকাতার চিতল-পেটি অ্যাভিনিউ
অ্যাভিনিউগুলো ভালোবাসে সমুদ্র-কাঁকড়ার মতো ঝাঁকড়া গাছের কাবাব।
তবে কলকাতার এখন ডায়াবেটিস।
কলকাতার ইউরিনে এখন বিরানব্বই পার্সেন্ট সুগার।
কলকাতার গলব্লাডারে ডাঁই ডাঁই পাথর
গাছপালা খেয়ে আগের মতো হজম করতে পারে না বলে
কলকাতা এখন মানুষ খায়।
আগে বছরে একবার কোটালের হাঁক পেড়ে
নদীগুলো ঢুকে পড়তো গ্রাম-গঞ্জের তলপেটে
ভাঙা তক্তাপোষ থেকে ঘুমন্ত বৌ-বাচ্চাদের তুলে নিয়েই
লাল-ঘূর্ণীর হেঁসেলে।
এখন নদীর দেখাদেখি বড় বড় হাইওয়ে
হাইওয়ের গন্ডারদের দেখাদেখি ইলেকট্রিক ট্রেনের চিতাবাঘ
ডাঙার চিতাবাঘের দেখাদেখি আকাশের পেট্রোল চালিত ঈগল
সকলেরই মানুষ খাওয়ার খিদে বেড়ে গেছে সাই সাই।
কেবল কলকাতা নয়
পৃথিবীর সমস্ত বৈদ্যুতিক শহর
এখন মানুষ পেলে আর ইলিশমাছ খায় না।
তরতাজা যৌবন পেলে ছুড়ে দেয় হ্যামবার্গারের ডিস
পোর্সেলিনের বাটিতে হাড়-মাস-ভাসানো তরল স্যূপ পেলে
মাদ্রিদ থেকে মোরাদাবাদ
তেহেরান থেকে ত্রিপুরা
গের্নিকা থেকে গৌহাটির
শিয়াল-শকুনের মুখে
বিসর্জনের রঘুপতি খিলখিল করে হেসে ওঠেন যেন।