নিজ হাতে, নিজস্ব ভাষায়
এখন নিজস্ব শ্রমে যাবতীয় উদ্যানের বেড়া
বেঁধে দিতে ইচ্ছা হয়।
স্নেহের চুম্বনখানি এঁকে দিতে ইচ্ছা হয়
সমস্ত শিশুর গালে।
সমস্ত দেওয়ালে
এখন নিজস্ব হাতে নিজস্ব ভাষায় গিয়ে লিখবার সময়:
কে ভালবাসার দিকে তুলেছ বন্দুক,
দূরে যাও।
ভালবাসা ছাড়া কি দ্বিতীয় কোনো উচ্চারণ
মানায় কবির কণ্ঠে?
অস্ত্র নিয়েছিলে হাতে, এই দৃশ্য দেখেছি সবাই।
কিন্তু কে না জানে,
লক্ষ্যের বিচারে সেও শুদ্ধ ভালবাসারই সংগ্রাম।
ভালবাসা কবিতারই অন্য নাম।
যে-নাম হৃদয়ে তুমি উৎকীর্ণ করেছ, তাই জানো:
এখন সমস্ত মিথ্যা
কদর্য-অক্ষরে-লেখা সব গ্লানি ভুলবার সময়।
এখন নিজস্ব হাতে সকলকে সুশ্রী করে তুলবার সময়।
নিজস্ব ভাষায়
অঙ্কুরিত প্রতিটি বীজের কাছে নতজানু হয়ে
এখন বলবার লগ্ন:
গোপন থেকো না বৃক্ষ, তোমার নিজস্ব আলো নিজস্ব হাওয়ায়
নিজস্ব নিয়মে বেড়ে ওঠো।
বকুল, বকুল, বকুল
‘সামনে রিফুকর্ম চলছে,
পিছন দিকে রাস্তা বন্ধ!’
এই, ওরা কী যা-তা বলছে!
বকুল, তোমার বুকের গন্ধ
এই অবেলায় মনে পড়ে।
এই অবেলায় বকুল ঝরে
শ্যামবাজারে, ধর্মতলায়,
এবং আমরা তাকেই ধরছি
ফাঁদ পেতে চৌষট্টি কলায়।
এবং আমরা রাস্তাঘাটে
ফুটপাতে আর গড়ের মাঠে
কুড়িয়ে নিচ্ছি ছেলেবেলা।
‘সন্ধ্যারাতে এ কোন্ খেলা?’
এই, ওরা কী যা-তা বলছে!
মাথার মধ্যে ফুলের গন্ধ।
সামনে সেলাই-ফোঁড়াই চলছে,
পিছন দিকে রাস্তা বন্ধ।
বুকের মধ্যে চোরাবালি
অন্ধকারের মধ্যে পরামর্শ করে
গাছগাছালি,
আজ এই রাত্রে কার ভাল আর
মন্দ কার।
হাওয়ার ঠাণ্ডা আঙুল গিয়ে স্পর্শ করে
ঠিক যেখানে
বুকের মধ্যে নদী, নদীর বুকের মধ্যে
চোরাবালি।
স্রোতের টানে
আশিরনখ শিউরে ওঠে অন্ধকার।
শব্দে শব্দে টেরাকোটা
আমি কি তোমার কাছে সনন্দ দিয়েছি কবিতার,
যে আমি তোমার জন্যে যাব
পাতালে, অথবা ঊর্ধ্বে আকাশে ফোটাব
তোমারই আলেখ্য? ঝানু বুড়ো,
আমি কি তোমার কাছে সনন্দ নিয়েছি কবিতার?
যে যার নিজস্ব শিল্প সমূহ অর্জন করে নেয়।
নির্ভয়ে যে যার
কবিতার হস্তপদমুড়ো
অর্থাৎ শব্দকে ঘোর চুল্লির ভিতরে ঠেলে দেয়
চিরকাল। আদ্যন্ত এইভাবে হয়ে খাঁটি
বর্ষার বিরুদ্ধে লড়ে মন্দিরগাত্রের পোড়ামাটি।
আমি কি তোমার কাছে সনন্দ নিয়েছি কবিতার,
যে আমি তোমার কীর্তি গেয়ে
ধন্য হবে? তুমি কি জিহ্বায়
জেনেছ অগ্নির স্বাদ? শব্দের সংসারে তুমি কে হে?
কিছু শব্দ অগ্নিকুণ্ডে ঝরে গিয়েছিল্ম তা-ই যায়।
কিছু যায় ভিখারির পাত্রে। কিছু ফোটে
রমণীর জঙ্ঘাদেশে। কিছু হরিচন্দনের ফোঁটা
হয়ে নিদ্রাহীন গ্রীষ্মরাত্রির আকাশে জ্বলে ওঠে
দুই লহমার জন্যে। কিছু শব্দ আর-একটু দীর্ঘায়ু হতে চায়।
এবং তখনই
শব্দের হৃদপিণ্ডে ছেনি-হাতুড়ির ধ্বনি
লাগে, শব্দে জেগে ওঠে বিষ্ণুমন্দিরের টেরাকোটা।