ছবি। পেজ ৪৭২
চিত্র : পল স্টেইনহার্ট এবং নেইল টুরক তাদের প্রস্তাবিত এই চক্রাকার মহাবিশ্ব বা ‘সাইক্লিক মডেলে’ দেখিয়েছেন আমাদের মহাবিশ্বের কোনো শুরু নেই, শেষ নেই, এবং পদার্থ এবং শক্তির উদ্ভব হয় দুটো ব্রেনের সংঘর্ষের ফলশ্রুতিতে, এবং এই প্রক্রিয়া চলতে থাকবে অনন্তকাল।
মহাবিশ্বের সত্যিকার প্রকৃতি বোঝার জন্য হয়ত আমাদের ভবিষ্যতের কারিগরি জ্ঞানের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে, তবে এটুকু নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, ইনফ্লেশনারি কিংবা সাইক্লিক যে মহাবিশ্বই ভবিষ্যতে সঠিক প্রমাণিত হোক না কেন, এ দুটি তত্বের কোনো তই তাদের তত্ত্বকে সার্থকতা দেওয়ার জন্য কোনো অলৌকিক সত্বর উপর নির্ভর করছে না, মডেলগুলো নির্মাণ করা হয়েছে আমাদের জানা শোনা পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম নীতি অনুসরণ করেই।
আরেকটি কথা বলা প্রাসঙ্গিক হবে এ ব্যাপারে। বিজ্ঞান কিন্তু কোনো বিষয় সম্পর্কে পরম বা নিখুঁত জ্ঞান দিতে পারে না। আজকে আণবিক স্থানান্তর, নিউক্লিয়াসের তেজস্ক্রিয় বিকিরণ বা কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মতো ঘটনার কারণ পাওয়া যাচ্ছে না, ভবিষ্যতে পাওয়া যেতেই পারে। কেউই সে সম্ভাবনাকে অস্বীকার করছে না। ভবিষ্যতে পাওয়া যেতে পারে মহাবিশ্বের অস্তিত্বের পেছনের ‘আদি’ কারণও। কিন্তু সেই কারণটি যে ঈশ্বরের মতো মহাপরাক্রমশালী ‘সত্ত্বা’ই হতে হবে, এটি ভেবে নেওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই, বরং কারণটি হতে পারে সম্পূর্ণভাবেই ‘প্রাকৃতিক। ওযেস মরিসন তার ‘Must the Beginning of the Universe Have a Personal Cause? A Critical Examination of the Kalam’s Cosmological Argument’-এ বলেন–
সৃষ্টির সবকিছুর পেছনেই কারণ আছে এ ব্যাপারটি ধ্রুব সত্য নয়। আর যদিও বা ইতিহাসের পরিক্রমায় কখনও বের হয়ে আসে যে মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে একটি ‘আদি’ কারণ রয়েছেই, তবুও একথা ভেবে নেওয়ার কারণ নেই। যে, সেই আদি কারণটি ঈশ্বরের মতো একটি ব্যক্তি সম্বাই হতে হবে।
পদার্থবিদ ড. ভিক্টর স্টেঙ্গরও একই ধরনের মত ব্যক্ত করে বলেন–
ধরে নিলাম কালামের কথা অনুযায়ী মহাবিশ্বের একটি কারণ রয়েছেই, তো সেই একটা কারণ কেন স্রেফ প্রাকৃতিক কারণ হতে পারবে না? কাজেই দেখা যাচ্ছে কালামের যুক্তিমালা প্রায়োগিক এবং তাত্বিক দুদিক থেকেই ব্যর্থ হচ্ছে।
.
নাস্তিকতাও একটি ধর্ম (বিশ্বাস) হলে…
আমরা দেখেছি অনেকেই বুঝে হোক, না বুঝে হোক, এই ব্যাপারটি মাঝে মধ্যে এভাবেই আউড়ে দেন যে, আস্তিক্যবাদের মতো নাস্তিক্যবাদও এক ধরনের বিশ্বাস। আস্তিকরা যেমন ঈশ্বর আছে এই মতবাদে বিশ্বাস করে, তেমন নাস্তিকরা বিশ্বাস করে ঈশ্বর নেই’-এই মতবাদে। দুটোই নাকি বিশ্বাস। যেমন, একবার মুক্তমনা ব্লগে এক ভদ্রলোক তর্ক করতে গিয়ে বলে বসলেন–
নাস্তিক মানেই বিশ্বাসী। তারা বিশ্বাস করে যে ঈশ্বর নেই। কিন্তু ঈশ্বর নেই’ এটি প্রমাণিত সত্য নয়। শুধু যুক্তি দিয়েই বোঝানো সম্ভব ঈশ্বর নেই’ বিবৃতিটি আসলে ফাঁকিবাজি।
নাস্তিক মানেই বিশ্বাসী, কিংবা নাস্তিকতাবাদও একটি বিশ্বাস এগুলো ঢালাওভাবে আউড়ে দিয়ে নাস্তিকতাবাদকেও এক ধরনের ‘ধর্ম হিসেবে হাজির করার চেষ্টাটি আমরা বহু মহলেই দেখেছি। নাস্তিকদের এভাবে সংজ্ঞায়ন সঠিক কি ভুল, তা বুঝবার আগে ‘নাস্তিক’ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থটি আমাদের জানা প্রয়োজন। নাস্তিক’ শব্দটি ভাঙলে দাঁড়ায়, নাস্তি + কন বা নাস্তিক। নাস্তি’ শব্দের অর্থ হলো নাই, অবিদ্যমান। ‘নাস্তি’ শব্দটি মূল সংস্কৃত হতে বাংলায় এসে ‘ক’ বা ‘কন’ প্রত্যয় যোগে নাস্তিক হয়েছে যা তৎসম শব্দ হিসেবে গৃহীত। ন আস্তিক = নাস্তিক যা নঞ তৎপুরুষ সমাসে সিদ্ধ এবং আস্তিকের বিপরীত শব্দ। আরও সহজ বাংলায় বললে বলা যায়, না + আস্তিক = নাস্তিক। খুবই পরিষ্কার যে, সঙ্গত কারণেই আস্তিকের আগে ‘না’ প্রত্যয় যোগ করে নাস্তিক শব্দটি তৈরি করা হয়েছে। আস্তিকরা যে ঈশ্বর/আল্লাহ/খোদা ইত্যাদি পরম সত্ত্বায় বিশ্বাস করে এ তো সবারই জানা। কাজেই নাস্তিক হচ্ছে তারাই, যারা এই ধরনের বিশ্বাস হতে মুক্ত। তাই সংজ্ঞানু্যায়ী নাস্তিকতা কোনো বিশ্বাস নয়, বরং বিশ্বাস হতে মুক্তি বা বিশ্বাসহীনতা। ইংরেজিতে নাস্তিকতার প্রতিশব্দ হচ্ছে। ‘Atheist?l সেখানেও আমরা দেখছি theist শব্দটির আগে ‘a প্রিফিক্সটি জুড়ে দিয়ে Atheist শব্দটি তৈরি করা হয়েছে। নাস্তিকতা এবং মুক্তচিন্তার উপর বহুল প্রচারিত গবেষণাধর্মী একটি ওযেবসাইটে শব্দটির সংজ্ঞায়ন করা হয়েছে এভাবে–
Atheism is characterized by an absence of belief in the existence of gods. This absence of belief generally comes about either through deliberate choice, or from an inherent inability to believe religious teachings which seem literally incredible. It is not a lack of belief born out of simple ignorance of religious teachings.
সহজেই অনুমেয় যে, ‘absence of belief’ শব্দমালা চয়ন করা হয়েছে ‘বিশ্বাসহীনতা’কে তুলে ধরতেই, উল্টোটি বোঝাতে নয়। Gordon Stein তার বিখ্যাত ‘An Anthology of Atheism and Rationalism’ বইয়ে নাস্তিকতার (Atheism) সংজ্ঞায়ন করতে গিয়ে বলেন–