আরও মজার ব্যাপার হলো, ওই ইনফ্লেশনের ফলে শুধু যে একবারই বিগব্যাং বা মহাবিস্ফোরণ ঘটেছে তা কিন্তু নয়, এরকম বিগব্যাং কিন্তু হাজার হাজার কোটি কোটি এমনকি অসীমসংখ্যকবার ঘটতে পারে; তৈরি হতে পারে অসংখ্য ‘পকেট মহাবিশ্ব। আমরা সম্ভবত এমনই একটি পকেট-মহাবিশ্বে অবস্থান করছি বাকিগুলোর অস্তিত্ব সম্বন্ধে জ্ঞাত না হয়ে (এ ব্যাপারটিকে বলা হয় ‘মাল্টিভার্স বা অনন্ত মহাবিশ্বের ধারণা[৩৫৯])। এই ধারণা অনুযায়ী আমাদের মহাবিশ্ব যাকে এতদিন প্রকৃতির পুরো অংশ বলে ভেবে নেওয়া হতো, আসলে হয়ত এটি এক বিশাল কোনো অমনিভার্স (Omniverse)-এর খুব ক্ষুদ্র অংশবিশেষ ছাড়া আর কিছু নয়। আমাদের অবস্থাটা এতদিন ছিল সেই বহুল প্রচলিত ‘অন্ধের হস্তি দর্শন গল্পের অন্ধ লোকটির মতো হাতির কান ছুঁযেই যে ভেবে নিয়েছিল ওইটাই বুঝি হাতির পুরো দেহটা! যাহোক, নিচের ছবিটি দেখলে লিন্ডের সাম্প্রতিক স্ফীতি তত্বটি (যেটির নামকরণ করা হয়েছে Chaotic inflation) কী বলতে চাইছে এ সম্বন্ধে হয়ত কিছুটা ধারণা পাওয়া যাবে।
ছবি। পেজ ৪৬৯
SELF-REPRODUCING COSMOS appears as an extended branching of bubbles. Changes in color represent ‘mutations” in the laws of plıysic ent universes. The properties of space in each bubble do not depend when the bubble formed. In this sense, the universe as a whole may be even though the interior of each bubble is described by the big bang ti
চিত্র : লিন্ডের সাম্প্রতিক তত্ব বলছে কেওটিক ইনফ্লেশনের ফলে উৎপত্তি হয়েছে অসংখ্য সম্প্রসারিত বুদ্বুদ এবং প্রতিটি সম্প্রসারিত বদ্বুদই আবার জন্ম দিয়েছে এক একটি ‘বিগব্যাং-এর। আর সেই এক একটি বিগব্যাং পরিশেষে জন্ম দিয়েছে এক একটি পকেট মহাবিশ্বের। আমরা এধরনেরই একটি পকেট মহাবিশ্বে বাস করছি (ছবির উৎস-সায়েন্টিফিক আমেরিকান)।
দেখা যাচ্ছে, এ তত্ত্ব অনুযায়ী কেওটিক ইনফ্লেশনের ফলে উৎপত্তি হয়েছে অসংখ্য সম্প্রসারিত বুদ্বুদ (Expanding Bubbles) এবং প্রতিটি সম্প্রসারিত বদ্বুদই আবার জন্ম দিয়েছে এক একটি ‘বিগব্যাং-এর। আর সেই এক একটি বিগব্যাং পরিশেষে জন্ম দিয়েছে এক একটি পকেট মহাবিশ্বের। আমরা এধরনেরই একটি পকেট মহাবিশ্বে বাস করছি। এ তত্ব আজ অনেকের মাঝেই তৈরি করেছে ‘সৃষ্টি সুখের উল্লাসে কাঁপা’ এক সর্বজনীন দার্শনিক আবেদনের এ মহাবিশ্ব যদি কোনো দিন ধ্বংস হয়ে যায়ও, জীবনের মূল সত্ত্বা হয়ত টিকে থাকবে অন্য কোনো মহাবিশ্বে, হয়ত অন্য কোনোভাবে, অন্য কোনো পরিসরে
লিন্ডের মতে এ তত্বের সমাধানটি এতটাই সরল যে, এর আগে এটি বিজ্ঞানীদের মাথায় কেন আসে নি তা ভেবে লিন্ডে নিজেই অবাক হয়ে গিয়েছেন। অ্যালেন গুথ, যাকে ইনফ্লেশন তত্ত্বের জনক হিসেবে অভিহিত করা। হয়, তিনি তার ‘দ্য ইনফ্লেশনারি ইউনিভার্স বইয়ে মহাবিশ্বের উদ্ভবকে একটি ‘আল্টিমেট ফ্রি লাঞ্চ হিসেবে অভিহিত করে বলেন–
Most important of all, the Question of the Origin of the matter in the Universe is no longer thought to be beyond of science. … If inflation is correct, then the inflationary mechanism is responsible for creation of essentially all the matter and energy in the Universe. … After two thousand years of scientific research, it now seems likely that Lucretius (who said ‘Nothing can be created from nothing’) was wrong. Conceivably, everything can be created from nothing. And ‘everything’ might include a lot more than what we can see. In the context of inflationary cosmology, it is fair to say that Universe is the ultimate free lunch!
অনেক বিজ্ঞানী এবং দার্শনিকেরাই মনে করেন, কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের ধারণার সাথে সমন্বিত করা ইনফ্লেশন বা স্ফীতি তত্ব যখন একেবারে শূন্য থেকে মহাবিশ্বের উৎপত্তির একটি প্রাকৃতিক এবং যৌক্তিক সমাধান দিতে পারছে, তখন ঈশ্বর সম্ভবত একটি বাড়তি হাইপোথিসিস’ ছাড়া আর কিছু নয়।
ইনফ্লেশন বা স্ফীতি তত্ব ছাড়াও আরেকটি তত্ব মহাবিশ্বকে ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে ইদানীং জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পল স্টাইনহার্ট এবং নেইল টুরকের প্রস্তাবিত এই চক্রাকার মহাবিশ্ব বা ‘সাইক্লিক মডেলে’ তারা দেখিয়েছেন আমাদের মহাবিশ্বের কোনো শুরু নেই, শেষ নেই। এ এক চলমান অনন্ত, অফুরন্ত মহাবিশ্ব (endless universe)। তাদের আঁকা এ ছবিতে ‘বিগব্যাং দিয়ে স্থান কালের (space-time) শুরু নয়, বিগব্যাং–কে তারা দেখিয়েছেন কেবল একটি ঘটনা হিসেবে যার উদ্ভব হয় স্ট্রিং তাত্বিকদের কথিত দুটো ব্রেনের সংঘর্ষের (collision of branes) ফলে। এবং কেবল একবারই এই মহাবিস্ফোরণ ঘটবে বা ঘটেছে তাও নয়, বরং এ মহাবিশ্ব প্রাকৃতিক বিবর্তনের চক্রে চির চলমান। তারা গাণিতিকভাবে দেখিয়েছেন, মহাবিশ্বের যাত্রাপথের প্রতিটি চক্রে বিগব্যাং উদ্ভব ঘটায় উত্তপ্ত পদার্থ এবং শক্তির। কালের পরিক্রমায় ক্রমশ শীতল হয়ে এর থেকে তৈরি হয় গ্যালাক্সি আর তারকারাজি, যা আমরা আজ চোখ মেললেই দেখতে পাই। আজ থেকে ট্রিলিয়ন বছর পরে আবারও বিগব্যাং ঘটবে এবং তৈরি করবে নতুন চক্রের। পল স্টেইনহার্ট এবং নেইল টুরক তাদের প্রস্তাবিত মডেলকে সাধারণ পাঠকদের কাছে নিয়ে এসেছেন সম্প্রতি ‘Endless Universe’ বইয়ের মাধ্যমে[৩৬০]। নতুন এ তত্ব অনুযায়ী মহাবিশ্বের যেহেতু কোনো শুরু’ নেই, এর পেছনে কোনো স্রষ্টা বসানোর চেষ্টা অর্থহীন। বিশ্বাসীদের অতি-প্রিয় কালামের যুক্তিমালা এ মডেলের জন্য একেবারেই প্রায়োগিক নয়।