মেয়েদের বাবার সঙ্গেও কথা বলা দরকার। তিনি কেন ইবলিশকে জিন বলছেন? সুরা বাকারাতে স্পষ্টই ইবলিশকে ফেরেশতা বলা হয়েছে। কোন আয়াতে বলা হয়েছে সেটা মনে নেই। অন্য কোনো আয়াতে কি ইবলিশকে জিন বলা হয়েছে?
ভদ্রলোককে পাওয়া গেলে আরো একটি প্রশ্ন করা যেত। তিনি কেন ইবলিশকে ইবলিশ শয়তান বলছেন? শয়তান শব্দটা এসেছে–শায়াতিন থেকে। শায়াতিন হল ইবলিশদের নেতা। তিনি কি জেনেশুনেই ইবলিশকে ইবলিশ শয়তান বলছেন নাকি এটা তার কথার কথা। নাকি সায়রার বর্ণনাভঙ্গিতেই ব্যাপারটা এসেছে।
সায়রার বর্ণনাতেও একটা খটকা তৈরি হয়েছে। তিনি মোটামুটি নিশ্চিত সায়রা যে-সময়ের কথা বলছে সে-সময়ে Silence of the Lambs ছবিটি তৈরিই হয় নি।
মিসির আলি ছবি দেখেন না। তাঁর আগের বাড়িওয়ালা জোর করে এই ছবিটি তাকে দেখিয়েছেন কারণ এই ছবিতে একজন সাইকিয়াট্রিষ্টের কথা আছে। বাড়িওয়ালার ধারণা যেহেতু মিসির আলিও এই ধারার মানুষ তার ছবিটা দেখা উচিত।
সায়রা বলে গিয়েছিল কোনো খটকা লাগলে তাকে যেন টেলিফোন করা হয়। মিসির আলির কাছে যে চোরাই মোবাইল টেলিফোন আছে তিনি নীতিগতভাবে সেই টেলিফোন ব্যবহার করতে পারেন না।
Autobiography of an unknown young girl বইটির দ্বিতীয় চ্যাপ্টার পড়াও শুরু করলেন না। প্রথম চ্যাপ্টারের খটকা আগে কাটুক। তিনি অপেক্ষা করছেন সায়রার জন্য।
মধ্যবয়স্ক এক লোক
মধ্যবয়স্ক এক লোক রান্নাঘর ধোয়ামোছা করছে। মিসির আলি ঘর ঝাঁট দেবার শব্দ পাচ্ছেন, পানি ঢালার শব্দ পাচ্ছেন, ফিনাইলের গন্ধ পাচ্ছেন। তাঁর শোবার ঘরেও ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। সব বই সাজিয়ে বুকশেলফে তোলা হয়েছে। বুকশেলফটা নতুন। আগের ভাঙা বেতের বুকশেলফ আপাতত বারান্দায় রাখা হয়েছে। মনে হচ্ছে সেখান থেকে চলে যাবে ডাষ্টবিনে।
মিসির আলির খাটের কাছে নতুন একটি সাইডটেবিল দেওয়া হয়েছে। সাইডটেবিলে টেবিলল্যাম্প। টেবিলল্যাম্পের পাশে একটি টেবিলঘড়ি এবং ক্রিস্টালের অ্যাশট্রে।
যে-জায়গায় কয়েকটি কাঠের চেয়ার পেতে বসার ব্যবস্থা ছিল সেখানের পরিবর্তনটা চোখে পড়ার মতো! মেঝেতে কর্পেট বিছানো! দুটা অতি আরামদায়ক গদির চেয়ার। গদির চেয়ার দুটার সামনে একটি দামি রকিং-চেয়ার। এই রকিং-চেয়ারে বর্তমানে দোল খাচ্ছে সায়রা। ঘর ঠিক করার নির্দেশ সে দোল খেতে-খেতেই দিচ্ছে। সায়রার সামনে মিসির আলি বসে আছেন। তিনি বেশ আগ্রহের সঙ্গেই তার ঘরের সংস্কার দেখছেন।
রান্নাঘরের মধ্যবয়স্ক লোকটি ছাড়াও বারো-তেরো বছরের একটি কাজের মেয়েও সায়রা নিয়ে এসেছে। মেয়েটি অতি কর্মঠ। তার নাম নাসরিন। সে মনে হয় কথা বলে। না। মিসির আলি এখন পর্যন্ত তার মুখ থেকে একটি শব্দও শোনেন নি।
সায়রা বলল, আপনি কি একদিনের জন্য বাসাটা ছাড়তে পারবেন?
মিসির আলি বললেন, কোন ছাড়তে হবে?
সায়রা বলল, আমি আপনার বাসা ডিসটেস্পার করবে। দরজা-জানালায় নতুন পরদা লাগানো হবে। তার জন্য কিছু কাঠের কাজ করতে হবে।
মিসির আলি বললেন, ও আচ্ছা।
সায়রা বলল, আমি অনেক চিন্তা করে দেখলাম। আপনাকে যদি গিফট হিসেবে কোনো অ্যাপার্টমেন্ট দেওয়াও হয় আপনি সেখানে যাবেন না। আপনি থাকবেন আপনার একরুমের ঘরে। কাজেই যেখানে আছেন সেটা ঠিক করে দেওয়া ভালো না?
মিসির আলি বলল, হঁ ভালো।
আমি নাসরিনকে রেখে যাচ্ছি। সে ঘরদুয়ার পরিষ্কার করে রাখবে। আপনার জন্য রান্না করবে। নাসরিন মেয়েটি কথা বলে না। তবে খুব কাজের। তার রান্নাও ভালো। সপ্তাহে আপনি একদিন বাজার করবেন। সেই বাজারও নাসরিন করবে। আপনাকে বাজারে যেতে হবে না। আপনার জন্য বারো সিএফটির একটা ফ্রিজ কোনা হয়েছে। একটা মাইক্রোওয়েভ ওভেন কেনা হয়েছে। ইলেকট্রিশিয়ান এসে কানেকশন ঠিক করে দেবে।
মিসির আলি ই বলে মাথা ঝাঁকালেন। এই মাথা ঝাঁকানোর অর্থ সম্ভবত–আচ্ছা। ঠিক আছে।
সায়রা বলল, আপনার বাসায় ইলেকট্রিক লাইন এইসব গ্যাজেটসের উপযুক্ত বলে মনে হচ্ছে না। ইলেকট্রশিয়ান মূল লাইনটাও বদলাবে। কারণ আপনার বাসায় দুই টনের একটা এসি বসবে। এসি আপনার জন্য না। আমার জন্য। এসি ছাড়া ঘরে আমি বেশিক্ষণ থাকতে পারি না। আমি যেহেতু মাঝে মধ্যে আপনার কাছে আসব, আপনার সঙ্গে কিছু সময় কাটাব–আমাকে শান্তিমতো বসতে হবে, তাই না?
মিসির আলি বললেন, সারাক্ষণ এসিতে থাকার এই অভ্যাস তোমার নিশ্চয়ই বিয়ের পর হয়েছে?
সায়রা বলল, হ্যাঁ বিয়ের পর হয়েছে। আমার স্বামী এদেশের অতি ধনবান মানুষদের একজন। তাঁর কী পরিমাণ টাকা আছে তা মনে হয় তিনি নিজেও জানেন না।
তিনি কি বর্তমানে অসুস্থ?
সায়রা একটু চমকাল। চমক সামলে নিয়ে সহজভাবে বলল, তিনি অসুস্থ আপনার এমন ধারণা কেন হল?
এমনি বললাম।
না। আপনি এমনি বলেন নি। চিন্তাভাবনা ছাড়া আপনি কথা বলেন না।
তোমার কাজের মেয়েটিকে দেখে আমার ধারণা হয়েছে। এই মেয়ে ঘর বঁটি দেবার সময় এমনভাবে বঁট দিচ্ছিল যেন কোনো শব্দ না হয়। পা ফেলছিল অতি সাবধানে। তার চিন্তা-চেতনায় এটা পরিষ্কার যে কোনোরকম শব্দ করা যাবে না। তার মানে হল এই মেয়েটি যেখানে কাজ করে সেখানে একজন অসুস্থ মানুষ আছে যে শব্দ সহ্য করতে পারে না।
সেই অসুস্থ মানুষ আমার স্বামী না হয়ে শাশুড়িও হতে পারতেন।
তা পারতেন।
তা হলে কেন বললেন, তোমার স্বামী কি অসুস্থ? কেন বললেন না, তোমার শাশুড়ি কি অসুস্থ?