প্রিয় সোহিনী, শামারোখের উপাখ্যানটা যদি এখানে শেষ করতে পারতাম, তাহলে সবচাইতে ভাল হতো। এই রকম একটি সুন্দর পরিসমাপ্তি যেখানে মৃত্যুর সঙ্গে শিল্প হাত ধরে এসে দাঁড়িয়েছে, জীবনের সঙ্গে এসে মিশেছে কবিতা, তার মধ্যে শামারোখকে স্থাপন করে কাহিনীটি যদি শেষ করতে পারতাম, সেটা আমার জন্য, শামারোখের জন্য এবং আমার তরুণ লোকান্তরিত বন্ধু শাহরিয়ারের জন্য সর্বোকৃষ্ট হতো। কিন্তু কাহিনীটা সেভাবে শেষ করতে পারলাম না। কারণ জীবন শিল্প নয়, কবিতা নয়। জীবনে যা ঘটে শিল্প এবং কবিতায় তা ঘটে না। জীবন জীবনই। জীবনের সঙ্গে অন্য কোনো কিছুর তুলনা চলে না এবং জীবন ভয়ানক নিষ্ঠুর। সমস্ত প্রতিশ্রুতি, সমস্ত প্রতিজ্ঞা, সমস্ত স্বপ্ন দুঃস্বপ্নের ওপারে জীবনের লীলাখেলা ।
প্রিয় সোহিনী, এখন তোমার কাছে শামারোখের আসল ঘটনাটি ফাস করি। শাহরিয়ারের মৃত্যুর পনের দিনের মধ্যেই শামারোখ জমিরুদ্দিনকে বিয়ে করে ফেলেছিল। জমিরুদ্দিনের পরিচয় জিজ্ঞেস করবে না। তাহলে তুমি মনে শামারোখ সম্পর্কে অত্যন্ত খারাপ একটি ধারণা পোষণ করবে। লেখক, কবি, শিল্পী কিংবা অভিনেতা কিছুই ছিল না সে। এমনকি সে অঢেল টাকার মালিকও ছিল না। যথার্থ অর্থেই সে একটি দুপেয়ে পশু ছিল। শামারোখকে সকাল-বিকেল ধরে পেটানো ছাড়া আর কোনো গুণপনা সে প্রদর্শন করতে পারে নি। সব জেনেশুনে শামারোখ এই জমিরুদ্দিনকেই বিয়ে করেছিল। এটাই হলো জীবনের ভোজবাজি।
প্রিয় সোহিনী, তুমি যদি জানতে চাও, এখন শামারোখ কোথায়? আমি বলব, হারিয়ে গেছে। ফের যদি জিজ্ঞেস করো কোথায় হারিয়ে গেছে, তার সংবাদও আমি তোমাকে দিতে পারি। যেই দেশটিতে গিয়ে আমাদের ব্রিলিয়ান্ট তরুণেরা হোটেল বেয়ারা কিংবা ড্রাইভারের চাকরি পেলে জীবন সার্থক মনে করে, আমাদের অভিজাত এলাকার অত্যন্ত স্পর্শকাতর অপরূপ তরুণীরা শিশু পাহারার কাজ পেলে মনে করে আহ্ কী সৌভাগ্য! সেই দেশটিতে যাওয়া হয় নি বলেই সমস্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী মানুষ এই নশ্বর জীবনে স্বর্গ দেখা হবে না বলে আফসোস করে, শামারোখ জমিরুদ্দিনকে নিয়ে সেই স্বপ্নের দেশ আমেরিকার কোথায় হারিয়ে গেছে, কে বলতে পারে।