টোপ নাম্বার তিন
এইটিই শেষ টোপ। আমি নিশ্চিত এই টোপে আপনি কাবু হবেন। ইএসপি ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ সম্পর্কে আপনার প্রবল কৌতূহল। সালমা নামের একটি ১৪/১৫ বছরের মেয়ে আমাদের সন্ধানে আছে। গ্রামেরই মেয়ে।
মেয়েটি অতীন্দ্ৰিয় ক্ষমতাসম্পন্ন। আমি নানাভাবে পরীক্ষা করেছি। এবং নিশ্চিত হয়েছি। একটি পরীক্ষা হল বিখ্যাত জেনার টেস্ট। তার ক্ষমতা কোন পর্যায়ের সেটা এখন আর ব্যাখ্যা করলাম। না। কিছুটা রহস্য রেখে দিলাম।
টোপ নাম্বার চার
যদিও তিনটা টোপ ব্যবহার করার কথা ছিল, তারপরেও আমি চতুৰ্থ টোপটি ব্যবহার করছি। অনেকের ব্যাপারে এই টোপ কাজ করলেও আপনার ব্যাপারে করবে বলে মনে হচ্ছে না। এটা হল। লিলির রান্না। রান্নার উপর নোবেল পুরস্কার দেবার ব্যাপার থাকলে প্রতি বছরই সে একটা করে নোবেল পুরস্কার পেত। সামান্য আলু ভাজাও যে অমৃতসম খাদ্য হতে পারে লিলির আলু ভাজা না খেলে বুঝতে পারবেন না।
টোপ নাম্বার পাঁচ
ক্ষমা প্রার্থনাপূর্বক আরো একটি টোপ। এটি আপনাকে কাবু করে ফেলবে বলে আমার ধারণা। আমার ব্যক্তিগত লাইব্রেরির কথা বলছি। বইয়ের মোট সংখ্যা আঠার হাজারের বেশি। আপনার পছন্দের বিষয়ে (সাইকোলজি, বিহেভিয়ারেল সায়েন্স) প্রচুর বই আছে। শুধু একটি নাম উল্লেখ করছি Asmond-এর The Other Mind.
মিসির আলি সাহেব, কয়েকটা দিনের জন্যে আপনি কি আসতে পারেন না? আমার শরীর পঙ্গু, কিন্তু মনটা পঙ্গু না। আপনি নিজে একজন সতেজ মনের মানুষ। আপনার সঙ্গে মানসিক যোগাযোগের জন্যে গভীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি।
বিনীত
এস. সুলতান হক
পুনশ্চ : আকাশ দেখার জন্যে এই সময়টা খুব ভালো। কুয়াশা থাকে না। এবং চারদিন পরই অমাবস্যা। আকাশ ভর্তি হয়ে যাবে তারায়। শুক্লপক্ষ তারা দেখার জন্যে ভালো না। চাঁদের আলোয় তারাদের ঔজ্জ্বল্য কমে যায়। কাজেই এখনি সময়।
মিসির আলি যে কোনো চিঠি তিনবার পড়েন। চিঠির ভেতরে কিছু কথা থাকে যা একবার পড়ে ধরা যায় না। দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয়বারে ধরা পড়ে। এটিও তিনবার পড়লেন। সুন্দর চিঠি। সুন্দর হাতের লেখা। প্রতিটি অক্ষর স্পষ্ট। কাটাকুটি যে নেই তা না। তবে কাটা অংশগুলি হোয়াইট ইঙ্ক দিয়ে মুছে দেওয়া। ভদ্রলোকের বাগানবাড়িতে যেতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু সম্ভব না। মিসির আলি তাঁর ছাত্রকে কুরিয়ারে চিঠি দিয়েছেন! সে সব কাজ ফেলে টেকনাফে এসে বসে থাকবে। তিনি না পৌঁছলে খুব অস্থির বোধ করবে। দুশ্চিন্তা করবে। তিনি কাউকে অকারণ দুশ্চিন্তায় ফেলতে চান না।
লিলিকে দেখে
লিলিকে দেখে মিসির আলি চিনতে পারলেন না। চিনতে পারার কথাও না-দরজা ধরে যে দাঁড়িয়ে আছে সে আগের দিনের লিলি না, অন্য কেউ। মাথার চুল নীল রঙের স্কার্ফ দিয়ে ঢাকা। চোখে কালো চশমা। ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক। জাপানি কিমানের মতো একটা পোশাক পরেছে। তার রঙ দেখে চোখ ধাধিয়ে যায়। উঁচুহিলের জুতা পরেছে। বলে তাকে দেখাচ্ছেও অনেক লম্বা।
চাচাজী আমাকে চিনতে পারছেন না, আমি লিলি। মাহাবা বেগম।
মিসির আলি বিড়বিড় করে বললেন, ও আচ্ছা আচ্ছা।
সত্যি করে বলুন তো আমাকে চিনতে পেরেছিলেন?
না চিনতে পারি নি।
মানুষের চেহারা মনে রাখা কত কঠিন দেখলেন?
দেখলাম।
আমি কী করেছি। জানেন? লম্বা করে লিপস্টিক দিয়ে ঠোঁট লম্বা করেছি। মানুষকে চেনা যায় ঠোঁট দিয়ে আর চোখ দিয়ে। যে দুটা জিনিস দিয়ে চেনা যায়, সে দুটা জিনিস আমি বদলে দিয়েছি! চশমা দিয়ে চোখ ঢেকেছি। আর ঠোঁট বদলে দিয়েছি।
মিসির আলি বললেন, লিলি বোস! তোমাকে সুন্দর লাগছে।
সুন্দর দেখাবার জন্যে আমি সাজ করি নি। নিজেকে বদলে দেবার জন্যে করেছি। ভালো কথা চাচাজী, আপনি কি কেরোসিনের চুলা এইসব কিনে ফেলেছেন?
না কেনা হয় নি।
লিলি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলল, বাঁচলাম। কারণ আমি সব কিনে ফেলেছি। এমন অনেক কিছু কিনেছি যা লিষ্টে ছিল না, যেমন হারিকেন, টর্চ, ব্যাটারি। হাফ কেজি সুতলি কিনেছি।
সুতলি কেন?
এখন আপনার কাছে মনে হচ্ছে সুতলি কী জন্যে? কিন্তু একা থাকতে গিয়ে দেখুন সুতলি কত কাজে লাগবে। মশারি খাটাবার জন্যে লাগবে। ভেজা জামা কাপড় শুকুতে দেবেন–তার জন্যে দড়ি টানাতে হবে। আরো অনেক কিছুর জন্যে লাগবে। শলার ঝাড়ুও কিনেছি।
কত টাকা খরচ হযেছে?
আপনার বাজেটের চেয়ে কম লেগেছে।
তুমি তো জানি না। আমার বাজেট কত?
বাজেট যতই হোক, তারচেয়ে কম। কারণ বাংলাদেশে আমার চেয়ে দরদরি আর কেউ করতে পারে না। চাচাজী শুনুন। এই যে বাজারটাজার করে ফেলেছি তার জন্যে রাগ করেন নি তো?
না।
প্লিজ রাগ করবেন না। আরেকটা কথা জিনিসগুলির দাম দেবারও চেষ্টা করবেন। না। কোনো লাভ হবে না। কারণ কিছুতেই দাম দিতে পারবেন না। আমার হাজবেন্ডের চিঠিটা পড়েছেন?
হ্যাঁ।
আপনি টোপ গেলেন নি। তাই না? আপনি নিশ্চয় সমুদ্র ফেলে তারা দেখতে যাচ্ছেন না? সমুদ্র হাত দিয়ে ছোয়া যায়। আকাশের তারা যত সুন্দরই হোক হাত দিয়ে ছোয়া
তারা দেখার ইচ্ছা থাকলেও যেতে পারছি না। আমার এক ছাত্রের সঙ্গে সবকিছু ঠিক করা। সে আবার আমাকে অতিরিক্ত রকমের শ্রদ্ধাভক্তি করে। সে টেকনাফে এসে বসে থাকবে।
লিলি হাসিমুখে বলল, আপনাকে টেকনাফে না দেখলে তার মাথা খারাপের মতো হয়ে যাবে। সে ভাববে আমাদের স্যার তোলা টাইপ মানুষ, না জানি তার কী হয়েছে!