আপনি আমাকে অ্যারেস্ট করবেন? অন হোয়াট গ্রাউন্ড?
এ কথাটাও যেন শুনতে পেল না বিশ্বরূপ। বিড়বিড় করে বলে, কারও হাতে অঢেল সময়, কারও হাতে একটুও সময় নেই।
কী বলছেন?
আই অ্যাম টকিং অ্যাবাউট এ গেম মিস শর্মা। এ ডেডলি গেম। তাতে কেউ হারে না, কেউ জেতে না। শুধু লড়াই হয়।
ননসেন্স।
বিশ্বরূপ তেমনই বিড়বিড় করে, একদিন আমি আপনাকে আমার ছেলেবেলার গল্প শোনাব, যদি সময় আমাদের দয়া করে।
আমি শুনতে চাই না।
গাড়ি স্টার্ট দিন মিস শর্মা।
কেন?
উই আর গোয়িং ফর এ রাইড।
হোয়াট রাইড?
প্লিজ! স্টার্ট দি কার। ড্রাইভ।
বন্দনা গাড়িতে স্টার্ট দিল। ঝাঁঝালো স্টার্ট।
আস্তে মিস শর্মা। উই আর নট গোয়িং টু কমিট সুইসাইড। আই হ্যাভ প্রমিসেস টু কিপ অ্যান্ড মাইলস টু গো বিফোর আই স্লিপ।
হ্যাকনীড।
মিস শর্মা, যে-কোনও অন্ধকার নির্জন জায়গায় গাড়িটা দাঁড় করান।
কেন?
আমি নেমে যাব।
তার মানে?
আমার কাজ শেষ হয়েছে। আর-কোনওদিনই আমাদের দেখা হবে না। গাড়িটা দাঁড় করান।
বন্দনা স্তিমিত গলায় বলে, আর ইউ লিভিং?
হ্যাঁ। ওই সামনে একটা গাছের ছায়া আছে। ওখানেই দাঁড় করান।
বন্দনা গাড়ি দাঁড় করায়। বাঁ দিকের দরজাটা খুলতে হাত বাড়িয়েছিল বিশ্বরূপ।
এক মিনিট মিস্টার সেন।
বিশ্বরূপ ধীরে হাতটা তুলে নিজের কোলের ওপর ফিরিয়ে আনে। অস্ফুট গলায় বলে, বলুন।
সুন্দরী আমাদের আয়া ছিল। তারপর সন্ত্রাসবাদীদের দলে যোগ দেয়। প্রথমে নকশাল ছিল। পরে অন্য কোনও ফ্যাকশনে জয়েন করে। অ্যাকটিভিস্ট, হার্ডলাইনার। পীতাম্বর। মিশ্রর সঙ্গে কী ভাবে যোগাযোগ হয় জানি না। তারপর খুন হয়ে যায়।
আপনার সঙ্গে সন্ত্রাসবাদীদের লিয়াজোঁ কে ছিল? সুন্দরী?
বন্দনার মাথাটা একটু ঝুঁকে পড়ে স্টিয়ারিং-এর ওপর। দুর্বল গলায় সে বলে, হ্যাঁ।
সন্ত্রাসবাদ একটা রোমান্স, তাই না? একটা বেটার সিস্টেম আনার স্বপ্ন দেখা। নকশালরাও দেখেছিল। দুনিয়ার সব সন্ত্রাসবাদীরাই স্বপ্ন দেখে।
সময় আসবে, স্মার্ট আলেক। সন্ত্রাস কেউ চায় না, তবু সন্ত্রাসের ভিতর দিয়েই পথ। করতে হয়। যে জগদ্দল সিস্টেম আমাদের বুকের ওপর চেপে বসে আছে তাকে ধাক্কা দেব কী করে?
বিশ্বরূপ বিড়বিড় করে, সবাই এ কথাই বলে, অল টেররিস্টস।
আপনি সিস্টেমের প্রতিনিধি, আপনি বুঝবেন না।
বিশ্বরূপ আনমনে চেয়ে থাকে সামনের দিকে। তারপর বিড়বিড় করে, আই হ্যাভ কাম এ লং ওয়ে টু কিল এ ম্যান।
বন্দনা তীব্র চাপা গলায় বলে, হোয়াট ম্যান?
যেন সামান্য সচকিত হয়ে বিশ্বরূপ বলে, আমারও সেই প্রশ্ন। হোয়াট ম্যান!
বন্দনা সামান্য ঝুঁকে পড়ে তেমনই তীব্র গলায় বলে, এটা ইয়ার্কি নয় মিস্টার সেন। আমি জানতে চাই লোকটা কে। আপনি যাকে মারতে এসেছেন?
ক্লান্ত চোখে চেয়ে বিশ্বরূপ তার ভাঙা ধীর গলায় বলে, কখনও হৃদয়বৃত্তিকে সন্ত্রাসের সঙ্গে মেশাতে নেই মিস শর্মা। সন্ত্রাসবাদীরা বরাবর ওই ভুল করে।
কী বলছেন?
বিশ্বরূপ মাথা নেড়ে তার স্বগতোক্তি করতে থাকে, একটা আনপড়, সরল দেহাতি মেয়েকে বিনা অপরাধে ওরকম ছিন্নভিন্ন করে দেওয়া উচিত কাজ হয়নি।
সুন্দরীকে কারা মেরেছে তা আমি জানি না।
সুন্দরীর কথা হচ্ছে না।
তবে কার কথা?
সুন্দরীর বদলে যাকে মারা হয়েছিল।
তার মানে?
বিশ্বরূপ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, সুন্দরী মারা যায়নি মিস শর্মা। কিন্তু তার মৃত্যু দেখানোর জন্য একজন দেহাতি মেয়েকে তুলে আনা হয়েছিল পীতাম্বরের বাড়ির মধ্যে। তাকে মারা হয়েছিল এমনভাবে যাতে চেনা না যায়। মেয়েটাকে মেরেছিল সুন্দরীই।
বডি আইডেন্টিফাই করা হয়নি?
কে আইডেন্টিফাই করবে? কেউ তাকে ভাল করে দেখেনি। লোকাল লোকেরা তাকে চেনেও না। ধরে নেওয়া হয়েছিল যে নিহত মেয়েটা মিঠিয়া অ্যালিয়াস মিরচি অ্যালিয়াস সুন্দরী।
উত্তেজনায় ঠোঁট কঁপছিল বন্দনার, সুন্দরী বেঁচে আছে? আর ইউ সিয়োর?
ভেরি মাচ।
মাই গড!–-বলে একদম নিশ্ৰুপ পাথরের মূর্তির মতো বসে রইল বন্দনা।
বিশ্বরূপ তার স্বপ্নময় কণ্ঠে খুব ধীরে বলল, আপনার জীবনের আনন্দটাই মরে গেল বোধহয় আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী বেঁচে আছে শুনে!
আই ডোন্ট বিলিভ ইউ।
নো ম্যাটার, সুরিন্দর আর সুন্দরী বোধহয় এখন একসঙ্গে থাকে। কোথায় থাকে তা জানেন?
কথাটার জবাব দিল না বন্দনা। চুপ করে বসে রইল। অনেকক্ষণ। তারপর একসময়ে ধীরে মুখ ঘুরিয়ে তাকাল বিশ্বরূপের দিকে। আপনাকে এক ঘণ্টা পর কোথায় পাওয়া যাবে?
পাওয়া যাবে না মিস শর্মা।
প্লিজ! আমার জরুরি কথা আছে।
বিশ্বরূপ ঘড়ি দেখল। তারপর বলল, রেস্ট হাউসের ফোন খুব আনসেফ। তবু নম্বরটা লিখে নিন।
নোটবইতে নম্বরটা টুকে নিয়ে বন্দনা বলে, আপনি নিশ্চয়ই আর এক ঘণ্টার মধ্যে ধানবাদ ছাড়বেন না?
বোধহয় না। আমি নেমে যাচ্ছি মিস শর্মা। এক ঘণ্টা— ঠিক এক ঘণ্টা পর কথা হবে।
বিশ্বরূপ নেমে দাঁড়াল। আড়মোড়া ভাঙল। তারপর ধীরে হাঁটতে শুরু করল। অনেকক্ষণ অবধি বন্দনার গাড়ি স্টার্ট নিল না, টের পেল সে। তারপর স্টার্ট নিল। চলে গেল হু হু করে।
মৃতের মতো মুখ নিয়ে রেস্ট হাউসে ফিরে এল বিশ্বরূপ। যন্ত্রের মতো ঘর খুলল। দরজা বন্ধ করল। তারপর পোশাক ও জুতোসুষ্ঠু বিছানায় চিতপাত হয়ে পড়ে রইল খানিকক্ষণ। ঘাসের উঁটি বেয়ে একটা পিঁপড়ে উঠছে। খামোখা। আবার নামছে। তাও অর্থহীন।