জ্যোতিষচর্চা থেকে আপনার আয় তা হলে ভালই হয়!
এখন হয়। আগে কষ্ট গেছে খুব।
চাকর কফি দিয়ে গেল। সঙ্গে বিস্কুট।
মেহসিক্ত কণ্ঠে ভজনা বললেন, তুমি তদন্তে এসেছ বলে শক্ত হয়ে থেকো না। আমার ছেলেপুলে থাকলে হয়তো তোমার বয়সিই হত। ভাল ডালমুট আছে, খাবে?
না।
আর সিগারেট খেতে চাইলে খেতে পারো। কিছু মনে করব না।
কফির কাপটা তুলে নিয়ে বিশ্বরূপ বলে, মিশ্রজির দ্বিতীয় স্ত্রী মিঠিয়া সম্পর্কে আপনি কতটুকু জানেন?
কিছুই জানি না। তাকে চোখেও দেখিনি। অজিতের কাছে শুনেছি সে নাকি দেহাতের মেয়ে। গরিবের মেয়েরা লোভে পড়েই তো এরকম বিয়ে করে।
একটা গভীর শ্বাস ফেলে বিশ্বরূপ বলে, মিঠিয়া সম্পর্কে আমরা তেমন কোনও খবর সংগ্রহ করতে পারছি না।
কেন বাবা, তার গায়ে খোঁজ করলেই তো হয়।
অজিত এতক্ষণ চুপচাপ বসে ছিল, একটিও কথা বলেনি। এবার হঠাৎ বলল, না মা, মিঠিয়ার কোনও ব্যাকগ্রাউন্ড পাওয়া যাচ্ছে না। কোথায় বাড়ি, কার মেয়ে কিছুই কেউ জানে না।
ভজনা দেবী খানিকক্ষণ ভেবে বললেন, অদ্ভুত কথা।
বিশ্বরূপ ধীর গলায় বলে, ব্যাকগ্রাউন্ড ছাড়া কোনও মানুষ তো নেই। রুট তো একটা থাকতেই হবে।
সে তো বটেই। তোমরা ভাল করে খুঁজেছ?
লোকাল পুলিশ খুঁজছে। পায়নি। কোনও অজ্ঞাতকুলশীলকে বিয়ে করার মতো অ্যাডভেঞ্চারাস মিশ্ৰজি ছিলেন কি?
ভজনা দেবী মাথা নেড়ে বললেন, ও মানুষ সম্পর্কে কিছুই বলা যায় না। কখন যে কী করবেন তার কিছু ঠিক ছিল না। তবে অগাধ বুদ্ধিমান ছিলেন। আবার বোকার মতো কাজও করতেন।
বিশ্বরূপ আচমকা প্রশ্ন করে, বেশ কিছুদিন আগে আপনার বাড়িতে মিরচি নামের একটা মেয়ে কাজ করত কি?
ভজনা দেবী একটু অবাক হয়ে বললেন, মিরচি? ওঃ হ্যাঁ, মিরচি বলে একটা মেয়ে ছিল তো! কেন বাবা?
এমনিই। কীভাবে সে ঢুকেছিল এ বাড়িতে তা মনে আছে?
ভজনা আবার ভাবিত হলেন, খুব সম্ভবত লালা রামবিলাসজি ওকে পাঠিয়েছিলেন।
মেয়েটা কেমন ছিল?
ওর কথা তো ভুলেই গিয়েছিলাম। খুব বেশিদিন ছিলও না আমার বাড়িতে। মেয়েটা ভাল ছিল না। আড়ি পেতে কথা শুনবার অভ্যাস ছিল। আমার মক্কেলরা যখন বাইরের ঘরে অপেক্ষা করত তখন ও গিয়ে গুজুর গুজুর ফুসুর ফুসুর করত। লালাজি পাঠিয়েছিলেন বলে প্রথমে তাড়াইনি। লালাজি মিশ্ৰজির বন্ধু ছিলেন। আমাকে এখনও স্নেহ করেন। পাটনায় আমাকে সেটল হতে উনি অনেক সাহায্য করেছেন। ওঁর খাতিরে মিরচিকে কিছুদিন রেখেছিলাম। তারপর তাড়িয়ে দিই।
মেয়েটিকে মনে আছে?
আছে। দেহাতি মেয়ে। খুব ভাল স্বাস্থ্য। মুখখানাও খারাপ নয়। হঠাৎ মিরচির কথা কেন বাবা? তোমরা যারা পুলিশ তাদের আমি একটু ভয় পাই। এমন সব অদ্ভুত প্রসঙ্গ তোলো
যে অস্বস্তিতে পড়তে হয়।
মিরচির ব্যাকগ্রাউন্ডও কিছু জানেন?
না। লালাজি হয়তো জানবেন।
লালাজি কবুল করেছেন যে, তিনিও জানেন না।
মিরচিকে নিয়ে এত কথা উঠছে কেন?
আমাদের যতদূর জানা আছে, মিরচিই মিঠিয়া।
ভজনা স্তম্ভিত হয়ে গেলেন, বলো কী?
বিশ্বরূপ একটা ফোটো বের করে সেন্টার টেবিলে রেখে বলে, এ ছবিটা প্রেস ফোটোগ্রাফারের তোলা। বিহারের অনেক কাগজে এ ছবি এবং আরও অনেক ছবি রসালো ক্যাপশন সহ ছাপা হয়। বৃদ্ধস্য তরুণী ভার্যা। খবরের কাগজে এরকম ছবি আপনি দেখেননি!
ভজনা কুষ্ঠিত হাতে ছবিটা তুলে নিয়ে অল্প আলোয় ঝুঁকে দেখলেন।
চিনতে পারছেন?
মিশ্রজির পাশে এ তো মিরচিই মনে হচ্ছে।
আপনার বাড়িতে খবরের কাগজ নিশ্চয়ই আসে!
ভজনা মাথা নেড়ে বলেন, আমি খবরের কাগজ পড়ি না বাবা। রাখিও না। খুন জখম পলিটিকস আমার ভাল লাগে না। তবে নিউ পাটনা টাইমস পাই কমপ্লিমেন্টারি হিসেবে।
অজিত বলল, তা হলে আপনার দোষ নেই, নিউ পাটনা টাইমসের ছাপা এত খারাপ যে বাপের ছবি ছেলে চিনতে পারে না।
ভজনা দেবী হাসলেন না। গম্ভীর গলায় বললেন, ব্যাপারটা আমার কাছে খুবই রহস্যময়। কিন্তু তুমি নিশ্চয়ই কিছু জানো বাবা। কিছু একটা আঁচ করেই কথাটা তুলেছ! তবে সত্যি কথাটা হল, মিরচিই যে পরে মিঠিয়া হয়েছে এটা আমার আজ অবধি জানা ছিল না।
লোকাল পুলিশ কিন্তু কথাটা বিশ্বাস করবে না।
কেন বাবা?
তাদের এমন সন্দেহ হতে পারে যে, মিরচিকে ষড়যন্ত্র করে আপনিই ভিড়িয়ে দিয়েছেন মিশ্রজির সঙ্গে, যাতে মিশ্ৰজির হাঁড়ির খবর আপনার নলেজে থাকে।
ভজনা শান্ত কণ্ঠেই বলেন, এরকমও হয় নাকি? শত হলেও মিশ্ৰজি আমার স্বামী, আমি নিশ্চয়ই চাইব না তিনি আবার বিয়ে করে আমার অপমান করুন। তোমার মতও কি লোকাল পুলিশের মতোই? তোমাকে দেখে যে বুদ্ধিমান বলে মনে হয়েছিল!
বিশ্বরূপ একটু হাসল।–বুদ্ধিমান নই, তবে লজিক্যাল। আপনি যদি মিরচিকে মিজির বাড়িতে প্ল্যান্ট না করে থাকেন তা হলে মিশ্রজিই তাকে প্ল্যান্ট করেছিলেন আপনার বাড়িতে।
অবাক ভজনা বলেন, কেন বাবা, তা উনি কেন করবেন?
আপনার হাঁড়ির খবর জানার জন্য। ইন ফ্যাক্ট লালাজির কাছে উনিই মিরচিকে পাঠান যাতে লালাজি মিরচিকে আপনার বাড়িতে বহাল করতে সাহায্য করেন। কথাটা গোপন রাখতেও বলা হয়েছিল।
তোমরা কী করে জানলে?
লালাজি সবই কবুল করেছেন। তিনি নিরপরাধ।
ভজনা দেবী অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে রইলেন। তারপর বললেন, মিশ্রজি এতটা করতে গেলেন কেন? আমার তো গোপন করার মতো কিছু নেই।