কীসের ওপর?
এ কে ফর্টি সেভেন। কালাশনিকভ। উজি। অনেক বই আনিয়েছি।
অজিত একটু অবাক হয়ে বলে, রিসার্চ করছেন কেন? এসব তো টেরোরিস্টদের অস্ত্রশস্ত্র।
বটেই তো। উগ্রবাদীরাই তো ক্ষমতায় চলে আসছে। তোমার গভর্নমেন্টকে তো হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করেছে উগ্রবাদীরা। এত কামান বন্দুক পুলিশ মিলিটারি লেলিয়ে কিছু করতে পারলে? আমি পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি উগ্রবাদীরা আরও বহুত খেল দেখাবে।
অজিত অবাক হয়ে বলে, আপনি কি মনে করেন উগ্রবাদীরা পাওয়ারে আসবে?
উগ্রবাদীরা আর অলরেডি ইন পাওয়ার। এখন তো তারাই সরকারকে ইচ্ছেমতো চালাচ্ছে। পঞ্জাব, কাশ্মীর, অসম, তামিলনাড়ু, অন্ধ্র, খানিকটা বিহার, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, ক’টা স্টেট হল অজিত? সব জায়গায় উগ্রবাদীরা তোয়াজ আর খাতির পাচ্ছে। কীসের জোরে জানো? এ কে ফর্টি সেভেন, কালাশনিকভ, উজি। এসব নিয়ে আমি পড়ছি এবং লিখছি। হাতেকলমেও দেখছি।
অজিত নড়েচড়ে বসে বলে, হাতেকলমে?
পীতাম্বর তার চিরকেলে চাপা হাসি হেসে বলেন, কাউকে যদি না বলো তো বলতে পারি।
আপনি কি কোনও অস্ত্র হাতে পেয়েছেন মিশিরজি?
আলবাত। এসব কি শুধু থিয়োরেটিক্যাল নলেজ থেকে হয় নাকি? দেখতে চাও?
চাই।
তা হলে এসো।
পীতাম্বরের পিছু পিছু তাঁর বাড়ির পিছন দিককার একটা ঘরে গিয়ে ঢুকল অজিত। একটা সুটকেস খুলে পীতাম্বর দেখালেন ভাঁজ করা খুলে রাখা একটা রাইফেল! খুবই আধুনিক জিনিস।
পীতাম্বর বললেন, কয়েক সেকেন্ডে অ্যাসেম্বল করা যায়। আমি রোজ প্র্যাকটিস করি। তবে দুঃখের বিষয় গুলি নেই। কয়েক দিনের মধ্যে পেয়ে যাব। তখন চাঁদমারি করব পিছনের বাগানে।
পীতাম্বর কি পাগল হয়ে গেলেন? অজিত এত অবাক হয়ে গেল যে কিছুক্ষণ কথা বলতে পারল না। তারপর সম্বিৎ ফিরে পেয়ে বলল, আপনার কি এর লাইসেন্স আছে মিশিরজি?
পাগল! এর লাইসেন্স সরকার কাউকে দেয় নাকি? লাইসেন্সের প্রয়োজনই বা কী? হাতে হাতে ঘুরছে। অ্যাভেলেবল এভরিহোয়ার। তুমি যদি মিলিটান্ট হওয়ার ডিসিশন নাও তা হলে তোমার হাতেও এসে যাবে।
অজিত একটু শিহরিত হয়ে বলে, আপনার সঙ্গে কি উগ্রবাদীদের যোগাযোগ আছে? মিশিরজি তার কাঁধে হাত রেখে সস্নেহে তাকে ঘরের বাইরে ঠেলে বের করে দরজায় তালা দিয়ে বললেন, আছে। তোমার নেই?
না। আমার কী করে থাকবে?
তা হলে তুমি কীসের রিপোর্টার? ঘোড়ার ঘাস-কাটা রিপোর্টিং করে বলেই তোমাদের কাগজগুলো এত স্টেল। আমি অ্যাকটিভ পলিটিক্স ছেড়ে দিয়েছি বলেই ধরে নিয়ে না যে আমি পলিটিক্যালি ডেড। আই অ্যাম ভেরি মাচ ইন পলিটিক্স। ভারতবর্ষের ভাবী পলিটিক্স যেখানে তৈরি হচ্ছে আমি সেই গর্ভগৃহ আন্ডারগ্রাউন্ডের পলিটিক্সকে এখন স্টাডি করছি। তুমি কি নার্ভাস হয়ে পড়লে অজিত?
হ্যাঁ মিশিরজি। খুবই নার্ভাস। আপনি এসব কেন করছেন?
সেটা আগেই বলেছি। তোমার মাথা ক্রিয়া করছে না বলে বুঝতে পারেনি। বাঙালি হয়ে উগ্রবাদের প্রসঙ্গে নার্ভাস হয়ে পড়া কি তোমাকে মানায়? উগ্রবাদের জন্ম দিয়েছিল কে অজিত? ব্রিটিশ আমলের কথা বাদ দাও, নকশাল মুভমেন্টও কি ভুলে গেছ? বাঙালি নকশালদের হাতে এইসব অস্ত্রশস্ত্র ছিল না, তারা দিশি বোমা, ভোজালি, চপার, কয়েকখানা পিস্তল আর পুলিশের কাছ থেকে ছিনতাই করা পুরনো মডেলের কয়েকটা রাইফেল নিয়ে গোটা দেশ কাঁপিয়ে ছেড়েছিল, মনে নেই? ভাবতে পারো ওরা এইসব সফিস্টিকেটেড অস্ত্র পেলে কী কাণ্ড করতে পারত? পুরো পাওয়ার নিয়ে নিতে পারত হাতে! বাঙালি এখন নকশালি ছেড়েছে, কিন্তু গোটা ভারতবর্ষে রেখে গেছে তার প্রভাব। নকশালরাই তো এই উগ্রবাদের গুরু এবং অগ্রপথিক। বাঙালি ছেড়েছে। ধরেছে বিহার, অন্ধ্র, কেরল। ধরেছে কাশ্মীর, পঞ্জাব, অসম, তামিলনাড়ু। আরও ছড়াবে। বহুত ছড়িয়ে যাবে। তোমাদের নপুংসক গদি আঁকড়ে থাকা আর কর্তাভজা রাজনীতির দিন শেষ হয়ে আসছে।
পীতাম্বরের বাড়িটি নেহাত ছোট নয়। অনেকগুলো ঘর। আসবাবের বাহুল্য নেই। আধুনিকতারও বালাই নেই। পীতাম্বর খুব সহজ সরল জীবনযাপন করতে ভালবাসেন। বাহুল্য পছন্দ করেন না। যে ক’টা কারণে পীতাম্বরকে এখনও গভীর শ্রদ্ধা করে অজিত তার একটা হল লোকটার এই সাদাসিধা জীবনযাপন।
আমার মনে হচ্ছে অজিত, বৃদ্ধের তরুণী ভার্যাটিকে দেখার একটা আগ্রহ তোমার আছে। দেখতে চাও?
অজিত অন্যমনস্ক ছিল। পীতাম্বর তাকে যথেষ্ট নার্ভাস করে দিয়েছেন। সে একটু চমকে উঠে বলল, না না, সেরকম কোনও–
আরে, লজ্জা পাচ্ছ কেন? বি ফ্র্যাঙ্ক। তুমি তো জানো আমি ফ্র্যাঙ্কনেস পছন্দ করি।
আমি অন্য একটি দরকারে এসেছিলাম মিশিরজি। আমি বলতে এসেছিলাম নিউ পাটনা টাইমসের কোনও স্থায়িত্ব নেই। আপনি আমাকে এই চাকরিটা দিয়ে একসময়ে বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন আমার ভয় হচ্ছে চাকরিটা থাকবে না। কাগজটা হয়তো উঠে যাবে।
মিশিরজি অতিশয় তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বললেন, ওসব বস্তাপচা কাগজ রেখেই বা লাভ কী অজিত? তুলে দাও, না হলে রঙ্গনাথের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে নিজেরা চালাও। আর ভজনার কোষ্ঠী ও জাতক বিচারটা সবার আগে বাদ দিয়ে দেবে। জ্যোতিষী একটা মস্ত ধাপ্পাবাজি।
অজিত একটু কাঁচুমাচু হয়ে বলে, আপনি হয়তো ওঁর ওপর রেগে আছেন। কিন্তু নিউ পাটনা টাইমসের সবচেয়ে বড় অ্যাট্রাকশন হল, ভজনা দেবীর ফোরকাস্ট এবং জাতক বিচার।