না, করি না।
তবে গিয়েছিলে কেন?
গিনিপিগ দেখতে।
গিনিপিগের ব্যাপারটা ময়না জানে। তাই বুঝল।
আমি তোমার আর কী ক্ষতি করতে পারি? যদি ক্ষতি করি তো আমার ভাত-কাপড় জুটবে কী করে?
সেই জন্যই তো বলছি সব বোগাস।
ময়না হঠাৎ মুখখানা তুলে বলল, ক’দিন আগে একদিন সকালে শানু এসেছিল।
শানু? চমকে ওঠেন দিগিন, কেন?
তেমন কোনও কারণ তো বলেনি। একটা স্কুটার হাঁকিয়ে এল।
কী বলল?
বলল, কাকিমা কিছু টাকা দাও, খুব লস যাচ্ছে।
দিগিন অবাক হন। বলেন, কাকিমা বলে ডাকল?
ময়নার চোখে আবার জল। কথা ফুটল না, মাথা নাড়ল কেবল।
টাকা দিলে?
দিইনি। বললাম দেব।
কত?
খুব বেশি নয়। দু’হাজার। তোমাকে বলতে বারণ করেছিল।
কেন?
ও একটা হিসেব মেলাতে পারছে না। তোমাকে ভয় পাচ্ছে। বলল, কাকাকে ফাঁকি দেওয়ার উপায় নেই। টাকাটা ক্যাশে দেখাতে হবে।
দিগিন আগুন-গরম কফি শেষ করেন। চুরুট ধরিয়ে নেন। ছড়ানো ঠ্যাং দুটো নাড়তে নাড়তে বলেন, ডোবাবে।
কী?
ওই ছেলেটাই ডোবাবে। বংশের কুড়াল।
এমন সুন্দর করে ডাকল। তোমাদের বাড়ির কেউ তো আমাকে ও রকম করে ডাকেনি কখনও। আমার কথা মুখেই আনে না কেউ। কখনও আনতে হলে নাম ধরে ময়না বলে। ছোট-বড় সবাই।
দিগিন উঠতে উঠতে বলেন, টাকাটা ওকে দিয়ো না। কথা দিলাম যে!
দিগিন নিশ্বাস ফেলে বলেন, তাতে ওর ক্ষতি হবে। যত দূর জানি ও জুয়া-টুয়া খেলছে, ফাটকায় টাকা ঢালছে। রাতারাতি বড়লোক হতে চায়।
চাক। ছেলেমানুষ।
দিগিন অবাক হয়ে ময়নার দিকে চেয়ে থাকেন একটু। মা হতে না-পারা ময়না ভিখারিনির মতো চেয়ে আছে। দিগিন শ্বাস ফেলে বলেন, ইচ্ছে হলে দিয়ো। কিন্তু ও টাকাটা বাজে ব্যাপারে নষ্ট করছে। তা ছাড়া তোমার কাছে টাকা চাইবে কেন? ওর লজ্জা থাকা উচিত।
ময়না তার বড় দু’খানা চোখ পরিপূর্ণ মেলে দেয় দিগিনের মুখের ওপর। বলে, আপন মনে করে চেয়েছে। ওকে বোকো না। আমার ছেলে থাকলে সে যদি টাকা নষ্ট করত তা হলে কী করতে?
শাসন করতাম।
বেশি জোর করলে শাসন করা যায়। ও তো মোটে একবার চেয়েছে। টাকাটা কিন্তু আমি দেব। তুমি কিছু বোললা না।
দিগিন অন্যমনস্কভাবে বলেন, সোপস্টোনের পিছনে বহু টাকা নষ্ট করেছে। কিছু বলিনি। কিন্তু এ সবের একটা শেষ থাকা উচিত।
তুমিও তো টাকা কম নষ্ট করো না।
সে করি রোজগার করে। ওর তো এ সব রোজগারের টাকা নয়। ব্যাবসাতে আমি ওকে নিয়েছি বিশ্বাস করে, বিশ্বাস রাখতে না পারলে ছাড়িয়ে দেব।
সবাইকে তো ছাড়িয়ে দিয়েছ, কাকে নিয়ে থাকবে?
আমার কাউকে দরকার হয় না।
ময়না সে সত্যটা জানে! তাই চুপ করে থাকে। অনেকক্ষণ বাদে হঠাৎ বলে, শানু বিয়ে করবে।
দিগিন চমকে ওঠেন, কী বললে?
শানু বিয়ে করবে।
কাকে?
পছন্দ করা মেয়েকে।
তোমাকে কে বলল?
শানু নিজেই বলে গেছে। কালিম্পঙের মেয়ে। বিয়ে করে আমার কাছে এনে তুলবে বলেছে।
দিগিন চেয়ে থাকেন। ঠিক বুঝতে পারেন না।
ময়না নিজেই বলে, মেয়েটা বিধবা, তোমরা নাকি ঘরে নেবে না, তাই আমার কাছে রাখবে।
দিগিন একটা হাই চাপলেন। বললেন, ও।
আমি কী করব?
শানুকে বলে দিয়ে যে এ বাড়িটাও আমার, আর যে ঠিকাদারি ব্যাবসার জোরে বাজারে ও নিজে চালু আছে সেটাও আমার। কাজেই ইচ্ছে করলেই ও যা খুশি করতে পারবে না।
ময়না হঠাৎ আস্তে করে বলে, আমি কি তোমার বউ?
দিগিন ভ্রু কুঁচকে চেয়ে বলেন, এ সব কথা তো অনেক হয়েছে, আবার কেন?
ধরো যদি শানুও তোমার মতোই কাজ করে তবে দোষের কী। আমার মতো কাউকে বউ করে। এনে যদি বাঁধা মেয়েমানুষের মতো রেখে দেয় তো তুমি কি তাকে শাসন করতে পারো?
পারি।–দিগিন শান্ত গলায় বলেন।
কেন পারো?
কারণ আমি টাকা রোজগার করে নিজের পয়সায় সব করেছি। ওর মাজায় সে জোর নেই। ওর আছে বারফাট্টাই। ফকির সাহেব একা বসে আছেন, তুমি তার কাছে যাও। শানুর চিন্তা আমি করব।
ময়না শ্বাস ফেলে উঠে যায়। এ পাথর সে ভাঙতে পারবে না।
৩. ভটচায আয়োজন দেখে খুব খুশি
ভটচায আয়োজন দেখে খুব খুশি। পেটের রোগ আর প্রেশারের জন্য বাড়িতে খাওয়ার বড় ধরা করা। কিন্তু লোকটা খাইয়ে মানুষ।
মদের গেলাসটা সরিয়ে রেখে মেটুলির চাটটা টেনে নিয়ে বললেন, বড় খাওয়ার আগে আবার এই ছোট খাওয়ার ব্যাপারটা কেন মশাই?
দিগিন হেসে বললেন, এ হোট খাওয়া নয়, এ হল চাট, মদের মুখে একটু একটু খেতে হয়। নুন আর ঝাল স্বাদে তেষ্টা বাড়ে, তাতে মদটা খেয়ে আরাম।
কিন্তু ভটচায মদের মোটে স্বাদ পান না। দু-এক চুমুক কষ্টে খেয়ে বলেন, এ মশাই চলবে না। বড় লাউড জিনিস।
তা হলে চাটটাও খাবেন না। খামোখা খিদে নষ্ট হবে।—বলে দিগিন জলপান করার মতো দিশি মদ গলায় ঢালেন।
শুটকি মাছ আমি বড় ভালবাসি।
একটু মাল টেনে নিন, আরও ভাল লাগবে।
ভটচায কষ্টেসৃষ্টে আরও দু’-এক চুমুক খান। বলেন, মাথা ঝিমঝিম করছে।
তা হলে আর-একটু চালান। ঝিমুনিটা কেটে ফুর্তি লাগবে।
ভটচায খেতে চেষ্টা করেন।
দিগিন উঠে গিয়ে পোর্টের একটা বোতল আনেন আলমারি থেকে। আলাদা গেলাসে ঢেলে দিয়ে বলেন, এটা খান। এটার স্বাদ ভাল।
পোর্ট ভটচাযের ভালই লাগে। অনেকখানি খেয়ে নেন একেবারো বলেন, হ্যাঁ, এটা বেশ।
আর-একটু দিই?
দিন।
দিগিন মৃদু হেসে বলেন, খুব দামি জিনিস। এই বোতলটা একশো টাকা।
বলেন কী! থাক থাক আর দেবেন না।