ক্রমে তার গলা এন্টু একটু করে উঁচুতে উঠতে থাকে, উইদাউট ইকুইপড উইথ প্রপার ক্রেডেনসিয়ালস আজ এ পবলিক সারভেন্ট আপনি ডিফেনএর রিলিফ টিমের সঙ্গে বহু জায়গায় গেছেন এবং সেটাও গেছেন উইদাউট প্রায়র অ্যাপকভ্যাল। আপনি সরকারি গোডাউন থেকে সমস্ত প্রোটোকলঅগ্রাহ্য করে ফুডগ্রেন বের করে দিয়েছেন। মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান কমপ্লেন করেছেন, আপনি গাখী ময়দানে তাবু খাটাতে গিয়ে ত্রিপলের এক কোনার দড়ি গাঁধীর স্ট্যাচুর গলায় বেঁধেছিলেন। দেয়ার ইজ এ ভেরি সিরিয়াস চার্জ এগেনস্ট ইউ। আমার প্রশ্ন, এগুলো আপনি কেন করেছেন? পবলিকের চোখে হিরো হওয়ার জন্য?
আমি অতল ঘুম থেকে নিজেকে টেনে তুলে বলি, আমি ঠিক বুঝতে পারিনি স্যার।
আপনি যখন রাইটার্স বিল্ডিংসেছিলেন তখনও এই ধরনের কিছু কিছু কাজ করেছেন। আপনার সি আর-এ তার উল্লেখ আছে। স্বয়ং মিনিস্টারও আপনার ওপর খুশি নন। গত ইলেকশনে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে আপনি একটা বুখ সিল হয়ে যাওয়ার পরও রিওপেন করেছিলেন। ব্যালটের বদলে লোককে নিজে সই করে সাদা কাগজ দিয়েছিলেন ব্যালট হিসেবে ব্যবহারের জন্য। আপনি পরে রিপোর্টে বলেছিলে, ওই বুথ ওপেন করার আগেই সব ভোট জমা পড়ে যাওয়ায় আপনি ওই কাণ্ড করেন। সেটা হতে পারে। কিন্তু কেউ কারচুপি করে যদি বুথ দখল করেই থাকে তার জন্য প্রপার প্রসিডিওর আছে। সাদা কাগজকে ব্যালট হিসেবে ব্যবহার করার নজির আপনিই প্রথম সৃষ্টি করেছেন। সেখানেও পাবলিক আপনাকে ম্যানহ্যান্ডেল করায় আপনাকে প্রায় মাসখানেক হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল। উই নো এভরিথিং অ্যাবাউট ইউ।
এ সবই সত্য। আমার কিছু বলার থাকে না আর। বসে বসে আমি এক বিকট চেহারার ঘুমরাক্ষসের সঙ্গে আমার দুর্বল লড়াই চালাতে থাকি।
জেলা অফিসার হঠাৎ প্রশ্ন করলেন, আপনি কি পাগল?
না, স্যার। আমি দুর্বল গলায় বলি!
আপনার মেডিক্যাল রিপোর্টও খুব ফেবারেবল নয় মিস্টার মল্লিক। হাসপাতালের ডাক্তারদের অভিমত হল, সেই বুথ নিয়ে গণ্ডগোলের সময় আপনার ব্রেন ড্যামেজ হয়েছিল। যাকগে, এইসব নানা কারণেই আপনাকে নর্থ বেঙ্গলে ট্রান্সফার করা হয়েছে। বোধ হয় আপনিও সেটা জানেন।
আমি চকিতে ঘুমিয়ে কয়েক সেকেন্ড একটা স্বপ্ন দেখে ফেলি। দেখতে পাই, ফুলচোরের সঙ্গে আমি একটা জাহাজের ডেক-এ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছি। চোখ খুলে আমি বলি, কিন্তু তার পরেও আমি সরকারি কাজে আরও কয়েকবার পাবলিকের হাতে ঠ্যাঙানি খেয়েছি স্যার। তবে আমার ধারণা প্রত্যেকবারই আমাকে পিটিয়েছিল হয় কোনও পলিটিক্যাল পাটির লোক, নয়তো সাদা পোশাকের পুলিশ। পাবলিক নয়। এনিওয়ে আমার ব্রেন ড্যামেজের কথাটা আমি অস্বীকার করছি না।
জেলা অফিসার ঘড়ি দেখছিলেন। বললেন, পুরো এক মিনিট পর আপনি আমার কথার জবাব দিলেন। যাকগে, ইউ আর টায়ার্ড, আই নো। আপনাকে রিলিফ ওয়ার্ক থেকে আমি ছেড়ে দিয়েছি। বাড়ি গিয়ে ঘুমোন।
আমি উঠতে যাচ্ছিলাম।
জেলা অফিসার বললেন, শুনুন। আপনি ফ্লাডে এখানে যা করেছেন তার জন্য সরকারিভাবে আপনি হিরো তো ননই, বরং ইউ আর এ সিরিয়াস ডিফলটার! তাই সরকারিভাবে আমি আপনাকে ধন্যবাদও দিচ্ছি না। কিন্তু
কিন্তু?– আমি অবসন্নভাবে চেয়ে থাকি।
জেলা অফিসারের থমথমে মুখে হঠাৎ হাসির বজ্রপাত হল। হো হো হো করে হেসে বললেন, কিন্তু বেসরকারিভাবে আই র্যাদার লাইক ইউ।
ফিরে এসে আমি আবার লঙ্গরখানায় খিচুড়ি হাড়িতে হাত মারতে থাকি। জীবনে আমার আর কী করার আছে বা ছিল তা আমার ঘুমে আর ক্লান্তিতে ডোম্বল হয়ে যাওয়া মাথায় কিছুতেই খেলে না। ভাবছি নিজের কনফিডেনশিয়াল রিপোর্টটা চুরি করে একবার দেখতে হবে। কলকাতায় আমি আর কী কী কাণ্ড করেছিলাম তা জানা দরকার। জানলে যদি আবার কলকাতার কথা আমার মনে পড়ে।
কে একজন এসে জরুরি গলায় বলল, কর্ণবাবু! আপনার কাকা।
ভাল করে কিছু বোঝবার আগেই কাকা এসে আমার হাত থেকে হাভা কেড়ে নিয়ে বললেন, যথেষ্ট হয়েছে। এবার বাড়ি চল, চল শিগগির।
বাড়ি ফিরে কী করেছি তা মনে নেই। এক মাতালের মতো গভীর ঘুমের কুয়ো আমাকে টেনে নিয়েছিল।
কদিন পর ঘুম থেকে উঠলাম তা বলতে পারব না, কিন্তু যখন উঠলাম তখন আমার সারা গায়ে এক হাজার রকমের ব্যথা। হাড়ের জোড়ে জোড়ে খিল ধরে আছে, কান ভোঁ ভোঁ করছে। একজন ডাক্তার আমাকে পরীক্ষা করছেন। কাকা চেয়ারে এবং কাকিমা আমার বিছানায় গম্ভীর মুখে বসা।
আমি অবাক হয়ে বলি, আমার কী হয়েছে?
ডাক্তার চিন্তিতভাবে তাকিয়ে বললেন, তেমন কিছু তো দেখছি না।
কাকা গম্ভীর গলায় বললেন, খুবই আশ্চর্যের কথা। আমার তো মনে হয়েছিল, ও আর বাঁচবেই না। চেহারাটা দেখুন, চেনা যায় ওকে? গাড়লটাকে সবাই মিলে খাঁটিয়েই প্রায় মেরে ফেলেছিল। আমি যখন গিয়ে ওকে ধরে আনলাম তখন ওর কথা বলার ক্ষমতা পর্যন্ত নেই।
কাকিমা কথা বলছেন না তবে আমার গায়ে হাত রেখে বসে আছেন চুপচাপ।
ডাক্তার প্রেসক্রিপশন লিখতে লিখতে বললেন, একজন, একসট্রিম একজন। ফুল রেস্টে রাখবেন।
আমি দেখতে দেখতে আবার ঘুমিয়ে পড়ি। আমার সময়ের কোনও জ্ঞান থাকে না। ঘুম ও জাগরণের মধ্যে পার্থক্যও লুপ্ত হয়ে যেতে থাকে।
শুনছেন?