সুব্রত কথা বাড়াল। খুব সান্ত্বনার স্বরে বলল, চলো একটু কফি খাই। এখনও সময় আছে একটু।
চৌরঙ্গিতে পড়ে ওরা এদিক ওদিক একটু তাকাল। তারপর মাদ্রাজি কাফের দিকে হাঁটতে লাগল।
কাফেতে প্রচন্ড ভিড়। বসবার জায়গা নেই। ভেতরে ভ্যাপসা গরমে গায়ে গায়ে লোকের আনাগোনা। কেউ কাউকে পাত্তা দিচ্ছে না।
সুব্রত মৃদুস্বরে বলল, অলওয়েজ পপুলেশন ইজ দি প্রবলেম!
মন্দা এক ঝাকিতে তার চুল পিছনের দিকে সরিয়ে দিয়ে বলে, ইউ আসকড ফর ইট। তুমি সব সময়ে এত চিপ জিনিস খোঁজো কেন বলল তো! সেলের জিনিস কিনবে, চিপ রেস্টুরেন্টে খাবে, গাড়ির বদলে স্কুটার চড়বে!
আমি পাক্কা প্রলেতারিয়েত।
দেশের সব প্রলেতারিয়েত যদি তোমার মতো বাইশশশা টাকা মাইনে পেত তাহলে কী ভালটাই না হত!
তুমি কী বুঝবে মন? তোমার ওল্ড ম্যান কিছুটা হয়তো বুঝবে হোয়্যার ট্যাকসেশন পিনচেস! শুনতে বাইশশশা, কিন্তু আফটার অল ডিডাকসনস—
মন্দা ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়েই বেশ তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলে, ডোন্ট ন্যাগ। তোমার পঞ্চাশ হাজার টাকার লাইফ পলিসি আছে, কিইমুলেটিভ ডিপোজিড আছে, আরও কী আছে কে জানে বাবা! তুমি পাক্কা অ্যালিগেটর একটি। তাও তো বিয়ে করোনি!
করব বলেই তো!
করো না! বিয়ে করে একদম বদমেজাজি খিটখিটে কৃপণ বুড়ো বনে যাও! আই উইশ ইউ গেট টেন চিলড্রেন।
সুব্রত মৃদু হাসি মাখানো মলম গলায় বলে, তাহলে গভর্নমেন্ট কাঁচি নিয়ে আমাকে সেনসর করতে তেড়ে আসবে। অ্যান্ড আ উইল লুজ এ ভাইটাল লিম্ব।
তোমার তাই হোক। আই উইশ
সুব্রত মোলায়েম গলায় বলে, টেন ডিলড্রেন নয়, আ অ্যাম ইন্টারেস্টেড ইন টেন ওয়াইভস।
ইস রে! তাহলে বুঝি আর কাঁচি নিয়ে তেড়ে আসবে না? আর মেয়েরা কি অত সস্তা নাকি?
ধুস! তুমি ওয়ারলড পপুলেশনের স্ট্যাটিস্টিক্স জানো না। দেয়ার ইজ এ গ্রেট ইমব্যালেন্স। পৃথিবীতে পুরুষের চেয়ে মেয়েদের সংখ্যা ঢের বেশি। দেখো কয়েক বছর পরে বহুবিবাহের ওপর থেকে রেসট্রিকশন তুলে নেওয়া হবে।
আই শ্যাল র্যাদার স্টে অ্যালোন দ্যান ম্যারি এ ম্যারেড ম্যান।
তুমি জেলাস।
আবার?
সুব্রত হাসতে হাসতে হঠাৎ মন্দার কোমর ধরে ঠেলে ভিতরে নিয়ে যেতে যেতে বলল, কুইক, ওই একটা টেবিল খালি হয়েছে।
বসেই মন্দা বলল, তুমি কৃপণ।
সুব্রত বলে, না, আমি প্রলেতারিয়েত। মন, বলল তো তুমি ক’টা বাচ্চার মা হতে চাও!
একটারও না, আই হেট
সুব্রত হাত তুলে বাধা দিয়ে বলে, বোলো না। মেয়েরা ভীষণ মুখোশ পরে কথা বলে। আসলে তারা খুব মা হতে চায়। আমি একজনকে জানি
তুমি আমাকে জানোনা।
আই অ্যাডমিট। কিন্তু জেনারেলি মেয়েরা বাচ্চা পছন্দ করে।
মোটেই না। বাচ্চার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি ন্যাগ করে ছেলেরা। বিকজ দে ডোন্ট সাফার ফ্রম দি পেইন অফ ডেলিভারিং এ চাইল্ড।
কিছু কিছু ব্যথা আছে যা খুব উপভোগ্য। প্রসবযন্ত্রণা তাদের মধ্যে পয়লা নম্বরের।
থাপ্পড় উঁচিয়ে মন্দা বলে, মারব।
গাল এগিয়ে দিয়ে সুব্রত বলে—মারো। দি পেইন উইল বি সুইট।
মন্দা মারল। চটাস শব্দ হল। সুব্রতর হালকা দাড়ির ভেতরে ফরসা গালে টকটকে রাঙা কয়েকটা লম্বা রেখে ফুটে উঠল। আশপাশের টেবল থেকে দু-একজন ফিরে দেখল।
সুব্রত বলল, আ উইশ ইট ওয়াজ এ কিস।
মন্দা বড় বড় স্থির চোখে চেয়ে ওকে দেখছিল। তার নাকের পাটা ফুলে ফুলে উঠছে। জোরে খাস বইছে। বুকে সুস্পষ্ট ওঠা নামা।
সুব্রত হাত বাড়িয়ে তার কোমর ধরল। কষির কাছে আলতো আঙুল বুলিয়ে আদর করে বলল, জেলাস মেয়েরা খুব ভাল বউ আর মা হয়। জানো?
আই অ্যাম নট জেলাস।
ইউ আর।
মন্দা হেসে ফেলল। কফি খেতে খেতে বলল, এর পর বোধহয় তুমি আমাকে বিয়েও করতে চাইবে। একই সঙ্গে একটা ভাল বউ আর বাচ্চা-কাচ্চার মা কাকে পাবে বলো।
আমি পপুলেশন বাড়াতে চাই না মন। পপুলেশন যত বাড়ছে, যত ভিড় বাড়ছে, ততই মানুষ লোনলি হয়ে যাচ্ছে।
ইউ আর নট লোনলি।
আই অ্যাম। আমার মনে হয় বিয়ে করলে আমি বোধহয় আরও লোনলি হয়ে যাব! জার্মানিতে একটা মেয়ের সঙ্গে আমার বিয়ের প্রায় ঠিকঠাক হয়ে গিয়েছিল। আমরা মাসখানেক একসঙ্গে ছিলাম বেশ। আর তখনই আমার ভীষণ লোনলি লাগত। একসঙ্গে আছি তো, নানারকম অ্যাডজাস্টমেন্ট করছি, লাভ মেকিং হচ্ছে, বেড়ানো হচ্ছে কিন্তু কেবলই টের পাচ্ছি যে আমার স্বাধীন ইচ্ছেগুলো সব গরাদবন্দি হয়ে গেল। সবসময়ে আর একটা লোকের ওজন যেন আমার সত্তার ওপর চেপে বসে আছে। অনেক সময় মেয়েটাকে আমার হারামজাদি’ বলে গাল দিতে ইচ্ছে করত, গায়ে থুতু দিতে ইচ্ছে করত…ওঃ তুমি ব্যাপারটা সহ্য করতে পারতে না, না?
মন্দার চোখ স্থির, মুখ লাল, আর দাতে দাত ঘষছে। চাপা ঘেন্নার স্বরে বলল, ব্রুট!
সুব্রত হেসে বলল, আসলে অতটা নয়। কিন্তু মানুষের ভিতরে কতগুলো স্বাধীন ইচ্ছা থাকেই। কেউ হয়তো কোনও মেয়েকে জেনুইন ভালবাসে, ধরো রোমিও-জুলিয়েটের মতো, তখনও কিন্তু সেই লোকটার মেয়েটির প্রতি ঘৃণা, আক্রোশ, জিঘাংসা আসতে পারে।
দ্যাট ইজ স্যাডিজম।
অ্যান্ড দ্যাটস অলসো ভেরি মাচ দি ট্রুথ।
চুপ করো। আমি শুনতে চাইছি না।
সুব্রত তার আলোর ঘড়ি দেখে বলল, আমিও আর বেশি বলছি না। ইটস অলমোস্ট দি টাইম। উঠি। তোমার কী হবে?
আমার জন্যে ভাবতে হবে না।