রণেশ হাসল। বলল, আমার তো এসকেপ রুট আছেই। ছবি আঁকব, ছবিতে ডুবে যাব।
আর কাকিমা?
তবে তার কর্মফল ভোগ করতে হবে। তবে আমি তো নিষ্ঠুর নই। মেয়েরা যত নিষ্ঠুর হতে পারে, ছেলেরা তত পারে না।
রণিতাদির কী হবে?
রণিতা আধুনিক মেয়ে। সে হিসেব না কষে কাজ করে না।
তার মানে কি কাকা?
রণিতা আর আমি প্ল্যান করেছি, ধারা ডিভোর্স না দিলে আমরা অন্য কোনো রিলিজিয়নে কনভার্ট করব। তখন অসুবিধে হবে না। কিন্তু এসব তোকে বলছি কেন রে পাগলা! এসব হচ্ছে জীবনের কুৎসিত দিক। এগুলোর দিকে নজর দিস না। তুই আমাকে খারাপ ভাবিস নাকি?
না। যার হাতে অত সুন্দর ছবি বেরোয়, সে কী খারাপ হতে পারে?
ঠিক বলেছিস। দুঃখের বিষয়, আমি ছবিতে ডুব দিতে পারি কিন্তু ধারা ডুব দেবে কীসে? ওর তো একটা এসকেপ রুট দরকার, তাই না?
আমি জানি না।
ওর জন্য একটু ভাবিস তো। আগে গান গাইত–চর্চাটা রাখেনি। চর্চা থাকলে ওই গানই ওকে বাঁচিয়ে দিত। যাদের কোনও শিল্প নেই, শখ নেই তাদের বড়ো কষ্ট–তাই না?
বোধহয়।
আয়, আজ দু-জনে ছবি আঁকি।
দু-জনে পাশাপাশি বসে গেল ছবি আঁকতে। আঁকতে আঁকতে রণেশ প্যারিসের গল্প করছিল মাঝে মাঝে। মহান সব ছবির গল্প, শিল্পীদের গল্প, বিদেশের নানা অভিজ্ঞতার গল্প। বলতে বলতে হঠাৎ বলল, ওঃ হ্যাঁ, ভালো কথা! তোর কথা আমার ছেলে-মেয়েরা খুব বলছে আজকাল!
তাই নাকি?
ওরে সে এক অদ্ভুত ব্যাপার। ওদের তুই মেসমেরাইজ করে এসেছিস–তোর কাকিমাকেও।
পিপুল লজ্জার সঙ্গে হাসল।
রণেশ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, তুই না থাকলে ধারার কী হত কে জানে! আমার ছেলেমেয়েরা তুলোর বাক্সে মানুষ হয়েছে, দুনিয়ার আঁচ টেরই পায়নি কখনো। তুই সেসময়ে না থাকলে ওরা দিশেহারা হয়ে যেত। কী যে করত কে জানে!
কাকিমা এখন ভালো আছেন?
শরীর খারাপ নয়, তবে মনে হয় প্রেসারটা ক্রনিক হয়ে গেল। একটু হার্টেরও প্রবলেম। তবে সিরিয়াস কিছু নয়।
কাকিমা কিন্তু সে-দিন পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলেন।
শুনেছি। তোকে সারারাত জাগিয়ে রেখেছিল। তবে সে ভাবটা এখনও আছে। বেশি কথা বলছে, বেশি কাঁদছে, বেশি চেঁচামেচি করছে। আয়, ওসব কথা ভুলে যা। ছবি আঁক, ছবি তোকে সব ভুলিয়ে দেবে। দুনিয়া নিয়ে বেশি ভাববি না কখনো। ওটা আমাদের কনট্রোলে তো নেই।
দু-জনে অনেকক্ষণ নীরবে ছবি আঁকল। অখন্ড মনোযোগে।
রণেশ বলল, তোর স্ট্রোক অনেক পাওয়ারফুল হয়েছে তো! খুব খেটেছিস মনে হচ্ছে! কালারসেন্সটা এখনও গ্রো করেনি–আয় তোর ছবিটা একটু রিটাচ করে দিই। দেব?
সে তো আমার ভাগ্য।
পোর্ট্রেট করতে ভালোবাসিস বুঝি? এটা কার মুখ?
মন থেকে আঁকা।
রণেশ পাকা আর্টিষ্ট, প্রতিভাবানও। দু-একটা শেড পালটে দিল, দু-চারটে নতুন টান মারল। তারপরই হঠাৎ ঝকঝকে করে হেসে উঠল একটা চেনা মেয়ের মুখ।
রণেশ কিছুক্ষণ হাঁ করে ছবিটার দিকে চেয়ে থেকে বলল, তাই তো ভাবছি মুখটা এত চেনা-চেনা ঠেকছিল কেন! এ তো অদিতি!
এই বলে হঠাৎ হো হো করে হেসে ওঠে রণেশ। পিপুল লজ্জার মরে গেল।