কোন অফিস?
বেহালায়। সি সি পি কারখানা। বউ অনেক ধরাধরি করেছে, হয়নি।
কী বলে ওরা?
খুনের বউকে চাকরিতে নেবে না।
সি সি পি না কী বললেন?
সি সি পিই হবে বোধহয়। তাই তো শুনি।
আচ্ছা, বাইরে শ্ৰীমন্ত আছে। ওকে ডেকে ডায়েরিতে নামটা লিখিয়ে যান। দেখব।
দেখো বাবা।
একটা কথা বলব মাসিমা? নীলু হাজরা ছিল আমার এক বন্ধুর ছোট ভাই। আমরা সবাই ভালবাসতাম তাকে। ভারী ভাল ছেলে ছিল।
নব ঘটির বিধবা মায়ের চেহারাটা খুব নিরীহ ব্রনের নয়। বয়স হলেও ডাকসাইটে স্বভাবের ছাপ আছে। কথাবার্তায় কোনও জড়তা নেই, ভয়ডর নেই। যে কোনও জায়গা থেকে কাজ আদায় করে আনার ক্ষমতা রাখে কিন্তু মদনের এই শেষ কথাটায় বুড়ি একটু কেমনধারা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। সন্দিহান চোখে মদনের দিকে চেয়ে থেকে বলে, তা হলে কি ওর বউয়ের জন্য একটু বলবে না বাবা?
মদন হাসল, খুন তো করেছে নব, ওর বউ তো নয়। বলব। তবে আমি দিল্লি হলে যতটা পারতাম এখানে ততটা তো পারি না। তবু বলে দেখব। কারখানার মালিক কে জানেন?
কানোয়ার না কী যেন।
এই যে লম্বা চওড়া ছেলেটা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল ওই শ্ৰীমন্ত। রাস্তায় আছে, একটু খুঁজে নিয়ে তার কাছে সব লিখিয়ে দিয়ে যান। আপনার বউমার নামও।
আচ্ছা।
প্রেস ক্লাব থেকে দুপুরে একটা ফোন করল মদন।
মাধব?
আরে মদনা? কোত্থেকে?
মালদার ইনটিরিয়ারে বান দেখতে গিয়েছিলাম।
দেখলি?
দেখলাম। মেলা জল।
ফি বছরই অক্রুর সংবাদ। এখানে জল, সেখানে জল, মরছে ভাসছে গৃহহারা হচ্ছে। তোরা করছিস কী?
দিল্লিতে বসে মোচ তাওড়াচ্ছি। কী করার আছে? ভেসে যাক, সব ভেসে যাক।
দে ভাসিয়ে তবে শালা, দে ভাসিয়ে। কোথায় উঠেছিস?
আবার কোথায় উঠব। মনোহরপুকুর।
দিদির হাত ছাড়িয়ে আমার গাড়ায় চলে আয়। কদিন আছিস?
পুজোটা থেকে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। হচ্ছে না। দিল্লি থেকে ডেকে পাঠিয়েছে, আবার এক ডেলিগেশনে অস্ট্রেলিয়া যেতে হবে।
ভ্যানতারা রাখ। তোর ডেলিগেশনও চিনি, তোর অস্ট্রেলিয়াও চিনি। কদিন আছিস তাই বল।
আমি নেই রে। পরশুদিন চলে যাচ্ছি।
তা হলে আজ চলে আয়।
পাগল! আজ দিদি ত্রিশ টাকা কিলোর চিংড়ি আনিয়েছে।
তা হলে কাল?
দেখি। বিনুক কেমন আছে?
ঝিনুক ঠিক ঝিনুকের মতো আছে। ক্যাপটিভ ইন হার ওন শেল।
আমি বাবা তোদের সাইকোলজিক্যাল প্রবলেমগুলো একদম বুঝি না। মানুষের খাওয়া পরার সমস্যা আছে, আধিব্যাধি আছে, দুঃখ টুঃখও আছে, তবে তোদের সব সৃষ্টিছাড়া ব্যাপার।
তোর সব কিছু বোঝার দরকার কী? তুই যেমন দেশ কি নেতা মদনকুমার হয়ে আছিস তাই থাক না।
মদন খুব হো হো করে হেসে বলে, ইয়েস, মদন ইজ দেশ কি ন্যাতা। মদনাকে খুব সমঝে চলবি, বুবলি!
আর সমঝাতে হবে না বাবা। ন্যাতাদের খুব ভক্তি মান্যি করি। ভাত কাপড় না দিক, কিলটাও আবার না বসায়।
বটেই তো। মদন গম্ভীর হয়ে বলে। তারপর গলাটা এক পা নামিয়ে বলে, আরে শোন। নব হাটির মা এসেছিল আজ। ছেলের বউয়ের জন্য চাকরি চায়।
ওপাশ থেকে মাধবের সাড়াশব্দ কিছুক্ষণ পাওয়া গেল না। বেশ একটু ফাঁক দিয়ে আস্তে করে বলল, ছেলের বউয়ের জন্য চাকরি চায়? নবর বউ সেই গৌরী না?
হাঁ। মদন একটা চাপা শ্বাস ছেড়ে বলে, খুব টেটিয়া বুড়ি। নব জেলে যাওয়ায় ওর বউ বাচ্চা নিয়ে নাকি বুড়ি বিপদে পড়েছে।
মাধব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, যা পারিস করিস। ওদের দোষ কী?
পাগল নাকি? অনেক ব্যাপার আছে।
কী ব্যাপার?
পলিটিকস করতে গেলে সব দিক বিবেচনা করে ডিসিশন নিতে হয়।
তুই কি নবর বউকে চাকরি দেওয়ার মধ্যে পলিটিক্যাল গেইন খুঁজছিস নাকি?
আই অলওয়েজ ওয়ান্ট টু প্লে ইট সেফ, দেখতে হবে মতলবখানা কী। আমাকে ফাঁসাতে চায় কি না।
ধুস শালা। খেতে পাচ্ছে না, তাই তোকে মাতব্বর ধরেছে। এর মধ্যে অন্য মতলবের প্রশ্ন আসছে কোত্থেকে?
পাবলিকের মন সবসময়েই ভারী সরল। আমাদের বুদ্ধি একটু প্যাঁচালো।
এই যে একটু আগে বললি মানুষের মনের ঘোরপ্যাঁচ বুঝিস না!
একেবারেই যে বুঝি না তা নয়। একটু একটু বুঝি, তবে তোর বা ঝিনুকের কথা আলাদা, তোদের তো কোনও বাস্তব সমস্যা নেই। তোরা কুঁথে কুঁথে সমস্যা তৈরি করছিস।
আমাদের ঘোরতর একটা বাস্তব সমস্যা রয়েছে। আমাদের কোনও বাচ্চা নেই!
আঃ হাঃ, সে তো আমারও নেই।
তোর নেই কে বলল?
তা হলে আছে বলছিস?
থাকতেই পারে। লেজিটিমেট না তো ইলেজিটিমেট, বিয়ে তো কলি না স্রেফ ভয়ে। পাছে বউ এসে পলিটিক্যাল ক্যারিয়ার তৈরি করায় বাগড়া দেয়।
বিয়ের বয়স যায়নি ব্রাদার। নাউ আই অ্যাম এ মোর এলিজিবল ব্যাচেলর।
ধুস শালা। এম পি একটা পাত্তর নাকি? আজ আছে কাল নেই।
কেন, লোকের মুখে শুনিসনি, পাঁচ বছর এম পি থাকতে পারলে সাত পুরুষ পায়ের ওপর পা দিয়ে চলে যায়।
তা বটে। তা হলে কাল তোকে এক্সপেকট করছি!
দেখা যাক।
দেখা যাক নয়। আমি আর ঝিনুক কাল বাসায় থাকব তোর জন্য।
খুব চেষ্টা করব, না পারলে ফোন করব, তোর বাসার ফোন ঠিক আছে তো?
কপালজোরে আছে। গত মাসেও পনেরো দিন বিকল ছিল, কালও যে থাকবে না তা বলা যায় না।
জীবনের উজ্জ্বল দিকগুলোর কথাই আমাদের ভাবা উচিত।
মাধব একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, তোর মতো গাড়লরা গদিতে বসলে কী করে মানুষ উজ্জ্বল দিক নিয়ে ভাববে?
খুব হেসে মদন বলল, আচ্ছা, আজ এ পর্যন্ত।