তুই কী করে জানলি?
মদনদা বলেছে।
মামলার সময় তুই কোর্টে যেতিস?
রোজ। সব সওয়াল জবাব মনে আছে।
নব দোষ কবুল করেছিল?
না। বার বার শুধু বলত, দোস্তকে দোন্ত কখনও খুন করতে পারে? নীলু আমার জিগির রোস্ত
বৈশম্পায়ন মুখ বিকৃত করে বলে, এ খুনটা না করলেও নব আরও বহু খুন করেছে। সে সবের জন্য ওর সাত বার ফাঁসি হওয়া উচিত।
জয় মাথা নেড়ে বলে, সে ঠিক কথা। কিন্তু নীলুর কেসটায় ওর খুব প্রেস্টিজে লেগেছিল। জজকে বলেছিল, আমার হাতে অনেক লাশ পড়েছে। সে সব কেসে আমাকে জেলে দিন, ফাঁসি দিন, কোই বাত নেহি। কিন্তু নীলুর কেসে আমাকে ঝোলাবেন না। আমি আমার দোস্তকে খুন করিনি।
এখন নব জেল থেকে বেরিয়ে কি সোধ তুলবে নাকি?
জয়ের মুখটা একটু বিবর্ণ দেখায়। তবে গলায় জোর এনে বলে, অতটা কি করবে? কে জানে। তবে নব ক্ষেপে গেলে অনেক কিছু করতে পারে। আজ সকালে খবরটা শোনার পর থেকে মদনদাও একটু ভাবনায় পড়েছে। আর মজা দেখো, গতকালই নবর মা এসেছিল নবর বউয়ের জন্য মদনদার কাছে চাকরি চাইতে।
মদন কি চাকরি দেবে?
মদনদা তো কাউকে না বলে না। চেষ্টা করবে বলে বুড়িকে কাটিয়ে দিয়েছে। পরে আমাকে বলেছে নবর বউকে চাকরি দিলে পলিটিকাল রি অ্যাকশন খারাপ হবে। কিন্তু আজ সকালে খবরটা পাওয়ার পর মদনদা ডিসিসন চেঞ্জ করেছে।
চাকরি দেবে?
চেষ্টা করবে।
রাতারাতি মত পাল্টে ফেলল?
পাল্টানোই ভাল। নব বেরিয়েছে। কখন কী করে বসে ঠিক নেই। জানের পরোয়া নেই তো।
মদন তা হলে ভয় পেয়েছে?
না না। মদনদা অত ডরায় না। কত খুন জখম পার হয়ে এসেছে।
বৈশম্পায়ন মৃদু স্বরে বলল, হ্যাঁ কিন্তু তখন তো এমপি ছিল না।
জয় কথাটার অর্থ ধরতে পারল না। বলল, তা ছাড়া মদনদার নাগাল, পাওয়া কি সোজা? শ্রীমন্তদা আছে, আমরা কাছি, ভি আই পি বোলএ কথা। চাইলেই পুলিশ এসে যাবে। দুদিন বাদেই যাচ্ছে দিল্লি হয়ে অস্ট্রেলিয়া। নব মদনদাকে পাবে কোথায়?
বৈশম্পায়ন চিন্তিত মুখে বলে, শুধু মদনই তো নয়, আরও অনেকের ওপর নবর রাগ আছে।
সবচেয়ে বেশি রাগ মাধবদার ও। মাধরম্বার চোখের সামনেই তা খুটা হয় নিজের ভাইয়ের ব্যাপারে তো মধবুদা স্মিথ্যে স্বাক্ষী দেবে না।
বৈশম্পায়ন মাধব আর নীলর সম্পা জানে। কিন্তু সে কিছু বলল না। ব্যাপারটা মাধর চাপা রাখতে চায়। বাইরের কেউ তেমন জানে না। বৈশম্পায়ন জিজ্ঞেস করে মামলায় দুই ছিলি না?
না। আমি কোর্টে যেতায়।
নব তোকে চিনে রাখেনি তো?
জয় হাসে নব আমাকে এমনিতেই চেনে। তবে নীলু হাজরার ব্যাপারে নয়।
তবু সাবধানে থাকিস।
আমার কোনও ভয় নেই। আজ উঠি। তুমি কিন্তু বিকেল-বিকেল মাধবদার রাড়ি চলে যেয়ো।
জয় চলে গেলে বৈশম্পায়ন কিছুক্ষণ নব হাটি মাধব আর মূদনের কথা ভাবৰুর চেষ্টা করল। কিন্তু বাঁধ ভাঙা ঢেউয়ের মতো এল একটাই চিন্তা আজ আবার ঝিনকের সঙ্গে দেখা হবে।
.
০৭.
একজন এম পির উচিত খুব ভোরবেলা উঠে সূর্যোদয় দেখা। একজন এম পির উচিত কিছুক্ষণ পাখির গান শোনা। একজন এম পির উচিত ভোরবেলা কিছুক্ষণ নিরুদ্বেগ চিত্তে বেড়ানো। গুনগুন করে একটু গানও তার করা উচিত। আর উচিত দিনের মধ্যে কিছুটা সময় একা একা থাকা এ সেই সময় যতটা সম্ভব রেখে ঢেকে একটু আত্ম-বিশ্লেষণ করা। একজন এম পির পক্ষে যদি সম্ভব হয় তবে কিছুক্ষণ তার ভুলে যাওয়া উচিত যে, সে একজন এম পি। যদি সে তা পারে তবে একজন এম পির উচিত সুযোগ পেলেই বাচ্চাদের মুখ ভেঙানো।
মদন সাধারণত সকালে উঠতে পারে না। অনেক রাত জেগ্নে কিছু লেখাপড়া করা তার স্বভাব। বস্তুত চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে একমাত্র রাত বারোটার পর ছাড়া সে এসব করার সময় পায় না। ফলে ভোরবেলা উঠতে প্রায়ই দেরি হয়ে যায় খুব।
আজ ভোরবেলা যখন ঘুম ভাঙল তখনও বেশ অন্ধকার রয়েছে। ঘুম ভেঙেই মদন একেবারে গা-ঝাড়া দিয়ে উঠে বসে। রোজ ঘুম ভাঙার দেড় দুই মিনিটের মধ্যেই তার মনে পড়ে যায় যে, সে একজন এম পি। আজ তা পড়ল না। দিদির রাইরের ঘরের জানালা দিয়ে জাের একটু তাস আসছিল। কাছে পিঠে রুগণ কিছু গাছপালা এখনও আছে। বাতাসে তারই নির্ভুল গন্ধ। রাতে কোনও সময়ে একটু বৃষ্টিও হয়ে গিয়ে থাকবে। ভেজা ভাবটা বাতাসে এখনও রয়ে গেছে। ফলে ভোরবেলাটি খুবই চমৎকার মনে হচ্ছিল মদনের।
সে উঠে টক করে বেসিনে গিয়ে চোখে জলের ঝাপটা মারল কিছুক্ষণ। চোখ কট করে উঠল জ্বালায়। এখনও শরীরে যথেষ্ট ঘুম দরকার। পায়ের দিকে সোফার ওপর কাকের ছেড়ে রাখা ধুতি আর পাঞ্জাবি অভ্যস্ত হাতে এক মিনিটে পরে নেয় মদন। সময় নেই। এই ভোরবেট বৃথা যেতে দেওয়া যায় না।
দিদি, বলে একটা ডাক দিতেই চিরু ঘড়া দেয়, কী রে? বেরোচ্ছিস নাকি?
পার্ক থেকে আসছি একটু ঘুরে। দরজাটা দিয়ে দাও।
বলেই আর দাঁড়ায় না মদন। বেরিয়ে হন হন করে কালীঘাট পার্কের দিকে হাঁটতে থাকে।
আকাশে বাদলার মেঘ কেটে যাচ্ছে। ওই শুকতারা। মদন একটু চেয়ে দেখল। এঝর দেরিতে বড় বেশি বৃষ্টি হচ্ছে উত্তরে আর পুবে। ভেসে যাচ্ছে, সব ভেসে যাচ্ছে। প্রতিবারই ভাসে এবং তার জন্য কেউ কিছু করে না।
আমি একজন এম পি, এ কথাটা এতক্ষণে মনে পড়ল মদনের। নির্জন রাস্তায় সে একটু শব্দ করেই বলে ওঠে, দ্যাখ শালা মদনাকে দ্যাখ। শালা নাকি এম পি! হেঃ হেঃ!