নাই বা হল, তাতে ওদের কিছু যায় আসে না।
তুমি তো সব ভাল দেখো। আমার মনে হয় ওদের সম্পর্কটা খুব কোল্ড।
তুমি জানো না।
ওরা স্বামী স্ত্রী আলাদা খাটে শোয়। জানো?
জানি! ওটাই আজকালকার ফ্যাশন।
একসঙ্গে না শুলে আবার স্বামী স্ত্রীর ভালবাসা কী? আমি তা কিছুতেই পারব না।
একসঙ্গে শোওয়াটাই কি ভালবাসা?
তা নয়। তবে ভালবাসা থাকলে আলাদা শোওয়ার কথা ভাবাই যায় না।
তোমার সব অদ্ভুত যুক্তি। বৈশম্পায়ন একটু হাসে, খাট আলাদা বলেই কি মনও আলাদা?
শর্মিষ্ঠা রেগে গিয়ে বলে, তোমরা পুরুষরা কিছু বোঝে না। কেবল তত্ত্ব দিয়ে সব জিনিসকে বিচার করো। মানুষ তো থিয়োরি নয়। তার অনেক ব্যাপার আছে। আমি কাল পুনমের সঙ্গে কথা বলেও বুঝলাম, ওদের সম্পর্ক তেমন ভাল নয়।
গোয়েন্দাগিরি করছিলে?
একে গোয়েন্দাগিরি বলে না। ওদের ফ্ল্যাটটা অত সুন্দর, অত সাজানো, ওদের অত টাকা, দেখলে মনে হয় ভাগ্য যেন ঢেলে দিয়েছে। কিন্তু বেশি ভাল তো ভাল নয়। তাই ভাবছিলাম কোথাও একটু গোলমাল আছেই।
তাই ঝিয়ের কাছে খোঁজ নিচ্ছিলে?
খোঁজ আবার কী? কথা বলছিলাম। বলতে বলতে অনেক কথা ফাঁস হয়ে গেল।
কী কথা ফাঁস হল?
মাধববাবু নাকি আজকাল খুব মদ খায়।
বরাবরই খেত।
আজকাল বেশি খায়।
না, বরং ঝিনুকের শাসনে আজকাল কমিয়েছে।
তুমি জানো না।
আমি তোমার চেয়ে বেশি জানি।
শর্মিষ্ঠা আপস করে বলল, আচ্ছ সে না হয় মানলাম। কিন্তু ঝিনুক নাকি একদম বাসায় থাকতে চায় না। সারাদিন ঘুরে ঘুরে বেড়ায়।
তাতে কী?
বোঝো না কেন? অত সুন্দর ফ্ল্যাটেও ওর মন বসে না কেন এটা তো ভাববে?
ও বরাবরই উড়নচণ্ডী।
আচ্ছা বাবা। তুমি যে বিনকের পক্ষ নেবে তা জানতাম। যা ড্যাব ড্যাব করে দেখছিলে ওকে।
বৈশম্পায়ন একটা ধমক দেয়, বাজে বোকো না। কাল আমার যা শরীরের অবস্থা ছিল তাতে মেরিলিন মনরোর দিকেও তাকানোর মেজাজ ছিল না।
শর্মিষ্ঠা সাবিত্রীকে কাজ-টাজ বুঝিয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেল।
একা হয়ে বৈশম্পায়ন উঠল। স্টিলের আলমারির মাথায় একটা অব্যবহৃত অ্যাটাটি কেস আছে তার। সব সময়ে চাবি দেওয়া থাকে। সেইটে নামিয়ে খুলল বৈশম্পায়ন। একটা পুরনো মনিব্যাগের খোপ থেকে সোয়া দুই ইঞ্চি বর্গ মাপের ফটোটা বের করে।
ঝিনুক! কী সুন্দর!
যে ভইগল্যান্ডার ক্যামেরায় ছবিটা তোলা সেটাও বহুকাল আগে চুরি হয়ে গেছে। ঝিনুক পরস্ত্রী।
ছবিটা তবু কত জীবন্ত! সাদা ফ্রক পরা ঝিনুক ডান হাত তুলে কোমরের বেল্টটা ঠিক করছে। বা ধারে ঝুলছে বইয়ের ব্যাগ। বব করা চুলে রিবন বাবা। পিছনে লায় বাড়ির দেয়ালে ইটের খাঁজে খাঁজে সালে রোদ আর ছায়ার চৌখুপি। একটা জব চারা। এই তত যেন গত কালকের কথা।
মেজদা!
একটু চমকে বৈশম্পায়ন তাকিয়ে দেখে, ঘরের দরজায় জয়। ভারী লজ্জা পেয়ে ছবিটা বালিশের নীচে লুকিয়ে ফেলতে গিয়ে আরও ধরা পড়ে যায় সে। জয় অবাক হয়ে তাকিয়ে তার বটুকু অপকর্ম লক করল। তবে কোনও প্রশ্ন করল না।
কী খবর? আজ অফিসে যাসনি?
তুমিও তো যাওনি।
আমার শরীরটা ভাল নেই।
পাজামা আর গেরুয়া পাঞ্জাবি পরা জয় ঘরে ঢুকে একটা মোড়ায় বসে বলে, কাল মদনদা এসেছে।
জানি।
কাল থেকে মদনদার সঙ্গে ঘুরছি। ওঃ, কত মিটিং, কত কনফারেন্স, আর কী সব লোক! জয়ের চোখে একটা সম্মোহিত ভাব!
জয় যে মদনের একজন চামচা তা বৈশম্পয়ান জানে এবং মোটেই ভাল চোখে দেখে না। একটু বিরক্ত হয়েই বলে, ওর পিছনে ঘুরছিস কেন?
মদনদাই বলল, জয় আমার সঙ্গে একটু থাক!
তাই থাকলি? তোর কাজকর্ম নেই?
কাজকর্ম আবার কী? অফিস তো? তা সেই অফিসের চাকরিও তো মদনদাই করে দিয়েছে। ও চাকরি যাবে না। মদনদার সঙ্গে ঘুরলে খুব তাড়াতাড়ি ফিড ক্রিয়েট হয়।
বৈশম্পায়ন একটু অবাক হয়ে বলে, কীসের ফিল্ড?
পলিটিক্যাল ফিন্ড! গতকাল স্টেট সেক্রেটারির সঙ্গে মুখোমুখি বসে কথা হল। ওয়েস্ট বেঙ্গলে আমাদের পার্টি আবার কেশ শক্ত হয়ে উঠছে। অবশ্য অপোজিশনও আছে। নিত্য ঘোষ মদনদার লিডারশিপ মানতে চাইছে না।
জয় হয়তো ভবিষ্যতে এম পি বা মিনিস্টার হতে চায়। ভেবে বৈশম্পায়ন একটু দীর্ঘশ্বাস ফেল। ভাইদের মধ্যে এই জয়টাই সবচেয়ে গবেট। মাঝপথে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছে, বুদ্ধিশুওি তেমন নয়। সু ওই হয়তো একদিন মীটী হয়ে বসবে। কিছুই অসম্ভব নয়। বৈশায়ন কিছু বলার খুঁজে না পেয়ে গম্ভীর মুখে ভ্রূ কুঁচকে বলল, ভাল।
তোমাকে বলতে এলাম, মদনা তোমার সঙ্গে একটু দেখাতে চেয়েছে।
কেন?
বলল, কী দরকার আছে। বহুকাল দেখা হয় না। আজ বিকেলে কেয়াতলায় মাধবদার বাড়িতে রাত্রে তোমার খাওয়ার নেমন্তন্ন। ওখানে মদনদাও আসবে।
মাধবের বাড়িতে! বলে আবার ভ্রূ কোঁচকায় বৈশম্পায়ন। কিন্তু তার বুকের মধ্যে ধক ধক করে ধাক্কা লাগে। ঝিনুক! কী সুন্দর।
একটা খবর শুনেছ মেজদা?
কী খবর?
নব হাটি জেল থেকে পালিয়েছে
সামান্য চমকে উঠে বৈশম্পায়ন বলে, সেই ডেঞ্জারাস ছেলেটা না? যে নীলুকে খুন করেছিল?
হ্যাঁ, একসময় মদনদার হয়ে খুর খাটত। পরে বিট্রে করে।
কী করে পালাল?
জেলখানার লোকদের হাত করেছিল বোধ হয়। মামলার সময় কোর্টেই বলেছিল, জেল থেকে বেরিয়ে প্রত্যেককে দেখে নেবে।
কাকে দেখে নেবে?
যারা ওকে খুনের মামলায় ফাঁসিয়েছে। বলে জয় একটু দ্বিধায় পড়ে গিয়ে বলে, কেউ-কেউ বলে বটে যে, নব খুনটা করেনি। তবে আমি জানি, করেছিল।