আইনের পরামর্শ নিলেন তিনি। ডাইভোর্স চাইলেই পাওয়া যায় না। এর জন্য কাঠ খড় ছাড়াও সময় এবং অর্থ পোড়াতে হবে। যিনি বিবাহ-বিচ্ছেদ প্রার্থনা করবেন তাঁকে উপস্থিত থাকতে হবে, প্রয়োজনীয় সাক্ষীসাবুদ কোর্টে হাজির করতে হবে।
কতদিন সময় লাগবে? মার্কোপোলো খোঁজ নিয়েছিলেন।
তা কেউ বলতে পারে না। দেড় বছর দু বছরও লেগে যেতে পারে, অ্যাটর্নি বলেছিলেন।
শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়েছিল, কাজের সুবিধার জন্যে সুশানই মামলাটা দায়ের করবে। স্বামীর বিরুদ্ধে সে চরিত্রহীনতার অভিযোগ আনবে। তাতে সুশানের সম্মানও রক্ষা পাবে; আর মার্কোও যা চাইছেন তা পাবেন। সুদূর কর্মক্ষেত্র থেকে তিনি মামলায় কোনো অংশগ্রহণ করবেন না, ফলে সহজেই একতরফা ডিক্রি হয়ে যাবে।
যাবার আগে সুশানের সঙ্গে মার্কো সব আলোচনা করেছিলেন। সুশানের মোটেই ইচ্ছে ছিল না। বিবাহিত ছাপটা থাকলে এ-কাজের সুবিধে হয়। সুশানের হাত দুটো নিজের হাতের মধ্যে চেপে ধরে মার্কো বলেছেন, যদি কোনোদিন তোমাকে ভালোবেসে থাকি তবে তার প্রতিদানে তুমি আমাকে এইটুকু অনুগ্রহ কোরো।
সুশান বলেছে, কিন্তু তোমার বিরুদ্ধে চরিত্রহীনতার কী অভিযোগ আনব? তোমার নামের সঙ্গে কার নাম জড়াব?
মাথায় হাত দিয়ে বসেছেন মার্কো। এমন কোনো মহিলা আছেন, যিনি ডাইভোর্স মামলায় কো-রেসপনডেন্ট হতে রাজি হবেন?
শেষ পর্যন্ত সুশান বলেছে, লিজাকে বলে দেখতে পারি। ওর তো সমাজে সম্মান হারানোর ভয় নেই। তাছাড়া, এক সময় ওর অনেক উপকারও করেছি।
কয়েকদিন পরে সুশান বলেছে, লিজার সঙ্গে কথা বলেছি। সে বলেছে, যার সঙ্গে গোপন অভিসারের অভিযোগ আনবে তাকে একটু দেখে রাখতে চাই!
ভোরবেলায় সুশানকে সঙ্গে করে মার্কো লিজার বাড়িতে হাজির হয়েছেন। সারারাত জেগে থেকে, লিজা তখন সবেমাত্র ঘুমোতে আরম্ভ করেছিল। ওদের ডাকে সে ঘুম থেকে উঠল।
দুজনকে একসঙ্গে দেখে খিলখিল করে হেসে উঠেছে, ও-বাবা, পতিব্রতা স্ত্রী এবং চরিত্রহীন স্বামী জোড়ে হাজির!
মার্কো তখন লিজাকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলেছেন! লিজা বলেছে, বোঝাতে হবে না। একটা পরীক্ষায় আগেই পাস করে এসেছি। আমার নিজের ডাইভোর্স কেষ্টা তো এই কোর্টেই হয়েছিল।
সুশান বলেছে, আইনের অত মারপ্যাচ বুঝি না। কী করতে হবে বলে দাও।
মার্কো এবার লিজাকে বললেন, সুশান আদালতে অভিযোগ আনবে যে সে-ই আপনার সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল।
সরু গলায় লিজা খিলখিল করে হেসে উঠেছিল। সেটা তো মিথ্যে নয়।
ও-ই তো আপনার সঙ্গে আমার আলাপ করিয়ে দিলে।
মার্কোপোলো বললেন, তারপর কয়েকটা বিশেষ দিনে-ধরুন চার কিংবা পাঁচদিন—সুশান দিনগুলো তোমার নোটবুকে লিখে নাও, আমাকে এইখানে.. পরের কথাগুলো বলতে মার্কোর সঙ্কোচ হচ্ছিল।
রাত্রিবাস করতে দেখা গিয়েছিল? এই তো, লিজা এবার হাসতে হাসতে বিছানায় গড়িয়ে পড়ল।
আর আপনাকে আমি কয়েকটা চিঠি লিখব, উকিলের সঙ্গে পরামর্শ করে। আপনি তার ভাষা সম্বন্ধে কিছু মনে করবেন না। শুধু চিঠিগুলো পেয়েই খামসমেত সুশানের কাছে পাঠিয়ে দেবেন। ওইগুলোই হবে প্রয়োজনীয় প্রমাণ। আর আপনি যদি আমাকে দু একটা লেখেন তাহলে তো খুবই ভালো হয়। আর কোনো চিন্তারই কারণ থাকে না। মার্কো কোনোরকমে বললেন।
আর কিছু? লিজা সিগারেট ধরিয়ে জিজ্ঞাসা করলে।
আর, কোনো রেস্তোরাঁয় যদি আমাদের কিছুক্ষণ একসঙ্গে দেখা যায়, মন্দ হয় না। মার্কোপোলো মুখ বিকৃত করে বললেন।
লিজার হাসি এবার বীভৎস রূপ ধারণ করল। হাসতে হাসতে সে আবার বিছানায় গড়িয়ে পড়ল। বালিসে মুখ গুঁজে সে হাসি চাপা দেবার চেষ্টা করতে লাগল। তারপর কাশতে কাশতে বলল, পুরো অভিনয়। ভেরি ইন্টারেস্টিং!
উত্তর না-দিয়ে মার্কো গম্ভীরভাবে মাটির দিকে তাকিয়ে রইলেন।
লিজা বললে, বেশ, আজই সন্ধেতে দুজনে কিছুটা সময় কাটানো যাবে।
মার্কো বললেন, অসংখ্য ধন্যবাদ। আমি এবং আমার স্ত্রী দুজনেই আপনার কাছে চিরদিন কৃতজ্ঞ থাকব।
লিজা এবার সোজা হয়ে বসল। কী যেন ভাবল। তারপর থিয়েটারি কায়দায় বললে, হে কৃতজ্ঞ পুরুষোত্তম, তুমি কি অনুগ্রহ করে এক মিনিটের জন্য এই অধমা নারীর ঘরের বাইরে অপেক্ষা করবে? তোমার সর্বগুণান্বিতা সাধ্বী স্ত্রী মুহূর্তের মধ্যেই তোমার অনুগামিনী হবেন।
দরজার বাইরে মার্কো কিছুক্ষণ পাথরের মতো দাঁড়িয়ে রইলেন। এক মিনিটের জায়গায় প্রায় দশ মিনিট কেটে গেল। তারপর সুশান ঘর থেকে
বেরিয়ে এল।
বাড়িতে এসে সুশান জিজ্ঞাসা করল, কত টাকা তুমি খরচ করতে পারবে?।
আমার আর্থিক অবস্থার কথা তোমার তো কিছু জানতে বাকি নেই। মার্কোপোলো বললেন।
লিজা টাকা চাইছে। বলছে, শুধু শুধু এই সব গণ্ডগোলে সে কেন যাবে? সুশান বললে।
মার্কো কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। তারপর অত্যন্ত সঙ্কোচের সঙ্গে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার পক্ষে কোনোরকম সাহায্য করা।
সুশান রেগে উঠল। তুমি আমার মত জানো। তুমি করাচিতে রইলে, আমি এখানে-বিচ্ছেদ তো এমনিই হল। তা সত্ত্বেও তুমি যদি ডাইভোর্সের লাক্সারি উপভোগ করতে চাও, তাহলে তোমাকেই টাকা খরচ করতে হবে।
কত টাকা চাইছে? মার্কো জিজ্ঞাসা করেছেন।
দু হাজার।
এমন অবস্থায় কোনোদিন যে তাকে পড়তে হবে, মার্কো কখনও ভাবেননি। বিকেল বেলায় একটা রেস্তোরাঁয় বসে বসে মার্কো গোটা কয়েক কাল্পনিক গোপন চিঠি লিখেছেন লিজাকে। পৃথিবীতে আইনের নামে কী হয়, ভাবতে মার্কোর দেহটা রি রি করে উঠেছে।