.
বোকা রাজার গল্প
রাস্তা দিয়ে চলেছে বোকা রাজা, পেছনে পেছনে ঘোড়াটা। ভারি সুন্দর সাদা ঘোড়া। যেমন পছন্দ করত তেমনি ভালোও বাসত রাজা সেই ঘোড়াটাকে। রাজার ছিল এক বন্ধু। ভারি পণ্ডিত সেই বন্ধুটি, আর তেমনি বুদ্ধিমান। রাজ্যের যত লোক সবাই পণ্ডিতের কথা শুনত, তাকে ভালোবাসত ও সমীহ করত। আর এ জন্যই রাজার যত রাগ। রাজা চায় রাজ্যের সবাই তার কথা শুনুক। সে রাজা। কিন্তু প্রজারা শোনে কি না পণ্ডিতের কথা, পণ্ডিতের প্রশংসায় তারা পঞ্চমুখ। হাটেঘাটে সবখানে শুধু পণ্ডিতের গুণগান।
রাজা এবার তেতে উঠল। অনেক খেটেখুটে মাথা থেকে একটু বুদ্ধি বের করল।
রাজা হুকুম দিল, পণ্ডিত, সবাই বলে তুমি খুব বুদ্ধিমান ও শিক্ষিত। তা মানলাম। এবার আমার সাদা ঘোড়াটাকে কথা বলা শেখাও। তবেই বুঝব তুমি কত বড় পণ্ডিত। যদি পার তো মিলবে বকশিশ, না পার তো হয়ে যাবে হাপিস। ধড় থেকে মাথা একেবারে আলাদা।
পণ্ডিত বাড়ি ফিরল। মাথা নুয়ে পড়েছে, মন খারাপ, মুখে হাসির ছিটেফোঁটাও নেই।
দেখে মেয়ে শুধোয়, বাবা। মন খারাপ কেন? কী হয়েছে?
পণ্ডিত বলল, উপায় আর কী, রাজা যা বলেছে, সারা জীবনেও তা আমি করে উঠতে পারব না। শুধু এই জীবনে কেন, সাত জীবনেও কেউ তা পারবে না।
মেয়ে আবার শুধোয়, কী করতে বলেছে তোমায়?
পণ্ডিত তখন মেয়েকে সব কথা বলল। বলে নিঃশ্বাস ছাড়ল লম্বা।
শুনে মেয়ে বলল, দুকখু করো না বাবা। কালই যাও রাজার কাছে। গিয়ে বলো, হ্যাঁ, আপনার ঘোড়াকে কথা বলা শেখাতে তো পারি। কিন্তু ঘোড়া তো মানুষ নয়, তাই সময় লাগবে অনেক দিন। অন্তত সাত বছরের জন্য ঘোড়াটা আমাকে দিন। তাহলে তাকে কথা বলা শেখাতে শুরু করতে পারি।
কী বলছিস তুই মা! সাত বছরেই বা কী করে শেখাব? সাত বছর পর রাজা আমাকে মেরে শেষ করে দেবে।
বাবা, সাত বছর দীর্ঘ সময়। আর কেই বা বলতে পারে এরই মধ্যে কী ঘটে যাবে! হয়তো রাজার সিংহাসনও উলতে যেতে পারে! নয়তো রাজাই যেতে পারে এই পৃথিবী ছেড়ে!
মেয়ের কথা পছন্দ হলো পণ্ডিতের। খেল দেল। ভালো ঘুম হলো রাতে। সকালে উঠে আস্তে আস্তে চলল রাজবাড়ির দিকে। পথের পাশে ফোটা ভুঁইচাঁপা ফুল দেখে তার ভালো লাগল। তার পাশ দিয়ে একটা খঞ্জনা পাখি ছুটে গেল লেজ দুলিয়ে। তাকেও ভালো লাগল। তারপর পণ্ডিত রাজবাড়িতে গিয়ে পৌঁছাল। দরবার তখনো বসে নি। পণ্ডিত অপেক্ষা করতে থাকল।
রাজা এল রাজদরবারে। মন্ত্রী, সেনাপতি, কোটাল সবাই উঠে রাজার নামে জয়ধ্বনি দিল। শুকপাখি বলে উঠল, পণ্ডিত এসেছে।
পণ্ডিত বলল, হ্যাঁ, আমি এসেছি মহারাজ। আমি আপনার ঘোড়াকে কথা বলা শেখাতে রাজি। কিন্তু এজন্য আমাকে সাত বছর সময় দিতে হবে।
রাজা হাসতে হাসতে বলল, দিলাম। নিয়ে যাও ঘোড়া। মনে রেখ, নয়তো যাবে গর্দান।
পণ্ডিত ঘোড়াটিকে নানা কাজে খাটায়। ঘোড়ার কল্যাণে তার অবস্থা ভালো হয়ে গেল। আর পণ্ডিতের বুদ্ধিমতী মেয়ের কথাই ঠিক। সাত বছর শেষ না হতেই বোকা রাজার সিংহাসন গেল উলটে। আর ঘোড়াটাও মরার আগ পর্যন্ত পণ্ডিতের কাছে ছিল, পণ্ডিতকে ধনী করে না দিলেও খাওয়া-পরার অভাব রাখে নি।