এক সময় পুলিশ আসে। অভিমানী শিশুকে বাড়ি পৌঁছে দেয়। বাড়িতে যে দৃশ্যের অবতারণা হয়তো নিশ্চয়ই খুব সুখের নয়। অথচ শিশুদের জন্যে আইন কানুন খুবই কড়া। শিশুদের মারধর করলে চাইল্ড এবিউজ আইনে বাবা-মা’র জেল-জরিমানা দুইই হয়ে যাবে।
প্রসঙ্গক্রমে চাইল্ড এবিউজ মামলার একটি গল্প বলি। ঘটনার স্থান ওয়াশিংটনের সিয়াটল। একটি ভারতীয় পরিবার। তাদের সর্ব কনিষ্ঠ শিশুটি খাট থেকে পড়ে হাত ভেঙে ফেলেছে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। ডাক্তাররা প্লাস্টার করে দিলেন।
কিছুদিন পর আবার বাচ্চাটিকে হাসপাতালে আনা হলো–সে গরম পাতিলে হাত দিয়ে হাত পুড়িয়ে ফেলেছে। চিকিৎসা করে সুস্থ করা হলো।
কিছুদিন পর আবার সমস্যা। শিশুটি দোতলার সিঁড়ি থেকে গড়িয়ে পড়ে পা ভেঙে ফেলেছে।
ডাক্তাররা চিকিৎসা করে পা ঠিক করলেন কিন্তু বাচ্চাটিকে বাবা-মার কাছে ফেরত দিলেন না। বললেন, তোমরা শিশু মানুষ করার জন্যে উপযুক্ত নও। একে পালক দিয়ে দেয়া হবে।
ফোস্টার প্যারেন্টস (পালক বাবা-মা) একে মানুষ করবে। সরকার থেকে মামলা দায়ের করা হলো।
.
এখানে আমি প্রায়ই গাড়ি দেখি যার পেছনে স্টিকার তুমি কি তোমার শিশুকে আজ জড়িয়ে ধরেছ?
এই স্টিকারের তেমন কিছু মূল্য আছে কি? আমেরিকায় শিশু জন্ম হার আশংকাজনকভাবে কমে যাচ্ছে।
বাবা-মা’রা শিশু মানুষ করার কঠিন দায়িত্বে যেতে চাচ্ছেন না। শিশু মানুষ হয় পরিবারে সেই পরিবারই ভেঙে পড়ছে–কে নেবে শিশুর যন্ত্রণা? জীবনকে উপভোগ করতে হবে। আনন্দ খুঁজে বেড়াতে হবে। শিশু মানেই বন্ধন।
বিয়ে এখনকার তরুণ সমাজে খুব আকর্ষণীয় কিছু নয়। কারণ সেখানেও বন্ধন। একটি মাত্র তরুণীর সঙ্গে জীবন কাটিয়ে দিতে হবে–কি ভয়ংকর। তারচে’ অনেক ভালো লিভিং টুগেদার। একটি এ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া করে পছন্দের তরুণ তরুণীরা একত্রে বসবাস। যদি কোনো কারণে বনিবনা না হয় জিনিসপত্র ভাগাভাগি করে সরে পড়ে দু’দিকে। সাধু ভাষায় বলা চলে–গেল ফুরাইল। মোকদ্দমা হইল ডিসমিস। এখানে সবাই দ্রুত মামলা ডিসমিস করতে চায়। মামলা বাঁচিয়ে রাখতে চায় না।
আজ হ্যালোইন
আজ হ্যালোইন।
হ্যালোইন এদের একটি চমৎকার উৎসব। উৎসবের উৎপত্তি কোথায় জানি না।
কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করেছি কিছু বলতে পারেনি। আমেরিকানদের সাধারণ জ্ঞান সীমাবদ্ধ। খুবই সীমাবদ্ধ। হ্যালোইন ব্যাপারটি কি জিজ্ঞেস করা মাত্র অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে বলে–ও হ্যালোইন হচ্ছে ফান নাইট। খুব ফান হয়। বাচ্চারা নানা রকম ভূতের মুখোশ পরে বের হয়। বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলে–Treat or tricks’ তখন ওদের চকলেট-লজেন্স এইসব দিতে হয়। বাড়ি সাজাতে হয়–কুমড়ো দিয়ে।
এর সবই জানি, আমার প্রশ্ন ছিল এই উৎসবটা শুরু হলো কিভাবে? হঠাৎ আমেরিকানদের কেন মনে হলো ভূতপ্রেতের জন্যে একটা রাত থাকবে? কেউ ডানে না।
বইপত্র ঘেঁটে দেখলাম অক্টোবরের ৩১ তারিখে সন্ধ্যায় এই দিবস উদযাপন করা হয়। এটি একটি ধর্মীয় উৎসব, All saint’s day (Allhallows}-র পূর্ব দিবস। সব সিরিয়াস বিষয় নিয়ে রসিকতা করা আমেরিকানদের মজ্জাগত। এই দিনটিকে ওরা রসিকতার দিন করে নিয়েছে। সেই রঙ্গ-রসিকতা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে তার উদাহরণ দেয়া যাক–হ্যালোইনের ফান পরিপূর্ণ করার জন্যে নিউইয়র্কে প্রতি বছর কিছু দরিদ্র মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। কিছু বাড়িঘরে আগুন দেয়া হয়। এই হলো ফানের নমুনা।
আমাদের বাড়িতে বাচ্চাকাচ্চারা ভূত সেজে আসবে তা মনে হয়নি তবু কিছু চকলেট কিনে রেখে দিলাম। যদি আসে?
না আসারই কথা। বাড়ির উঠোনে কোনো কুমড়ো সাজানো নেই। এর মানে এই বাড়িতে এমন কেউ থাকে যে হ্যালোইন সম্পর্কে জানে না।
তবু দেখি দুটি ছোট ছোট বাচ্চা এসে উপস্থিত। একজন সেজেছে কচ্ছপ অন্য একজন ডাইনী বুড়ি। প্রত্যেকের হাতে চকলেট সংগ্রহের জন্যে তিনটি ব্যাগ। ব্যাগের রং লাল, সাদী এবং সবুজ। ওর গম্ভীর মুখে বলল–Treat or tricks আমি চকলেট দিলাম। ওরা দু’জন মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছে। ছোট জন বলল, কোন রঙের ব্যাগে নিব, সাদাটায়? বড় জন বলল, না লালটায়। জিজ্ঞেস করে জানলাম–সবুজ রঙের ব্যাগে ওরা নেয় পরিচিত মানুষদের দেয়া চকলেট। যাদের খুব ভালো করে চেনে। যাদের অল্প চেনে তাদের চকলেট সাদা রঙের ব্যাগে। যারা একেবারেই অপরিচিত তাদেরগুলি থাকবে লাল রঙের ব্যাগে। এই ব্যাগের চকলেট খাওয়া যাবে না। বাবা-মা’রা প্রথম পরীক্ষা করে দেখবেন। পরীক্ষার পর যদি বলেন–খাও। তাহলেই খাওয়া। অধিকাংশ সময়ই খেতে দেন না। ডাস্টবিনে উপুড় করে ফেলে দেন।
এই সাবধানতার কারণ আমেরিকা হলো বিচিত্র এবং ভয়ংকর মানসিকতার লোকজনদের বাস। সাধারণ মানুষদের মধ্যে লুকিয়ে আছে পিশাচ শ্রেণীর কিছু মানুষ। পাঠক-পাঠিকারা নিশ্চয়ই বিরক্ত হয়ে ভাবছেন পিশাচ শ্রেণীর লোকজন শুধু আমেরিকায় থাকবে কেন? সব দেশেই আছে। ভয়াবহ ক্রাইম তো বাংলাদেশেও হয়। ঐ তো বিরজাবালা’ পরিবারকে হত্যা করা হলো। যে মানুষটি করল সে কি পিশাচ নয়?
অবশ্যই পিশাচ।
তবে এখানে যেসব কাণ্ডকারখানা হয় তা সব রকম ব্যাখ্যার অতীত। পিশাচরাও এসে লজ্জা পেয়ে যায়।
সম্প্রতি নিউইয়র্কে ঘটে গেছে এমন একটি ঘটনা বলি। ৯১১ নাম্বারে একটি টেলিফোন এলো। এটি পুলিশের নাম্বার। এই নাম্বারে টেলিফোন পেলেই পুলিশ সচকিত হয়ে ওঠে। এক ভদ্রলোক কাঁদতে কাঁদতে টেলিফোন করেছেন। তার শিশু বাচ্চাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দোলনায় ঘুমুচ্ছিল। হঠাৎ দেখা গেল সে নেই।