জানি তর্কে ফাঁক আছে। জীবজগতে অনেক প্রাণী আছে যাদের বেলায় উল্টো নিয়ম–একটি মেয়ে প্রাণীর পেছনে থাকে এক ঝাক পুরুষ, যেমন রানী মৌমাছি।
তর্কে জেতার অনিন্দ আছে তবু মনটা একটু খারাপ হলো কারণ অয়োময়ে বহু বিবাহকে সহজ এবং স্বাভাবিক নিয়মে উপস্থিত করা হয়েছে। তার জটিলতাকে তুলে ধরা হয় নি। এই নাটক দেখলে যে কোনো পুরুষ ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে ভাবতে পারেন–দুটি বৌ থাকা তো মন্দ না।
একজন আধুনিক মানুষ হিসেবে এই জাতীয় ধারণাকে আমি অবশ্যই প্রশ্রয় দিতে পারি না।
আমেরিকানরা খুব জরিপের ভক্ত
আমেরিকানরা খুব জরিপের ভক্ত।
সব কিছুরই জরিপ হয়ে যাচ্ছে। জরিপ চালাচ্ছে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। টাকার বিনিময়ে তারা জরিপ করে দেবে। হেন বিষয় নেই যার ওপরে তারা জরিপ করে নি। প্রেসিডেন্ট বুশ এই কাজটি করেছেন এতে তাঁর জনপ্রিয়তা বাড়ল না কমল? কতটুক বাড়ল বা কতটুক কমল? হয়ে গেল জরিপ। কিছু মজার জরিপের উদাহরণ দিচ্ছি।
ক) শতকরা ৪ ভাগ আমেরিকান মহিলা প্যান্টি পরে না।(১)
খ) শতকরা ৪ ভাগ আমেরিকান মহিলার কোনো ব্রা নেই।(২)
গ) শতকরা ৫ ভাগ আমেরিকান রাতে একা বাড়িতে থাকতে ভয় পায়।(৩)
ঘ) শতকরা ৬ ভাগ আমেরিকান মহিলা সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে ঘুমুতে যান।(৪)
ঙ) শতকরা ১৬ ভাগ আমেরিকান মনে করে ফুসফুস হচ্ছে পরিপাক যন্ত্র।(৫)
চ) শতকরা ২৫ ভাগ আমেরিকান মনে করে সূর্য হচ্ছে একটি গ্রহ।(৬)
ছ) শতকরা ৮৩ ভাগ আমেরিকান মনে করে বাচ্চাদের শক্ত মার দিয়ে মাঝে মাঝে শাসন করা উচিত।’(৭)
১-২. [এই দুটি জরীপ করেছেন Fair child সংস্থা। The costomer speaks about her werdrobe Fair child publication, 1978]
৩. [Public opinion February/March, 1986]
8. [The Harper index, 1987]
৫. [A national survey of public peraptions of Digestive health anol Diseaes. National Digeotive disease education program, 1984]
৬. [Contemporary cosmological Beliefs social studeies of scieva, 1987)
৭. [General social sarveys, 1972-1987, University of Chicago.]
সবার ধারণা আমেরিকানরা খুব বকবক করে। এই ধারণা হয়েছে আমেরিকান ট্যুরিস্টদের দেখে। টুরিস্টরা সত্যি সত্যি বকবক করে। এরা বাড়ি থেকে বের হয়ে দেশ-বিদেশে ঘুরে ফান করার জন্যে। এই বকবকানি সম্ভব ফানের অংশ। ওদের নিজ ভূমিতে ওরা মুখবন্ধ জাতি। অন্তত আমার তাই মনে হয়। অপ্রয়োজনের কোনো কথা বলবে না। বেশির ভাগ কথাবার্তাই আজকের আবহাওয়া অসাধারণ’-এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তর্ক করতে এরা তেমন পছন্দ করে না। কোনো প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলার সময় হঠাৎ যদি ওরা কথা বন্ধ করে দেয় তাহলে বুঝতে হবে ওরা এই মত সমর্থন করছে না।
ওরা নিতান্ত আপনজনের কাছেও খুলে কিছু বলে না বলেই আমার ধারণা। একা একা থাকতে হবে। ব্যক্তিসত্তার বিকাশ করতে হবে। যৌথ বলে কিছু নেই। ব্যক্তিসত্তা নামক সোনার হরিণ খুঁজতে খুঁজতে এক সময় ভয়াবহ নিঃসঙ্গতার শিকার এদের হতে হয়। দেখা দেয় মানসিক সমস্যা। ছুটে যায় কাউন্সিলারদের কাছে। কাউন্সিলার হচ্ছে সাইকিয়াট্রিস্ট। কাউন্সিলার কি করেন? তেমন কিছুই করেন না। মন দিয়ে রুগীর কথা শুনেন এবং মোটা অংকের টাকা নেন। এতেই রুগীর রোগ সেরে যায়। কথা বলতে হয় টাকা দিয়ে। সাইকিয়াট্রিস্টদের ব্যবসা এই দেশে রমরমা। যতই দিন যাচ্ছে ব্যবসা বাড়ছে। সবারই সমস্যা।
সমস্যা হবে নাইবাকেন?
আমাদের গোপন কথা বা দুঃখের কথা বলার কত অসংখ্য মানুষ আছে। মা বাবা আছেন, খালা-খালু আছেন, চাচা-চাচি আছেন। বন্ধুবান্ধবরা তো আছেই। ওদের তো এসব কিছু নেই। নিজের বাড়িতেই এদের শিকড় নেই আর খালার বাড়ি।
আমাদের একটি টিনএজার ছেলে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেলে আমরা তেমন মাথা ঘামাই না। কারণ আমরা জানি সে কোথায় গেছে–মামার বাড়ি গেছে আর যাবে কোথায়? আসুক ফিরে তারপর ধোলাই দেয়া হবে।
থোলাই দেয়া হয় না। কারণ ঐ ছেলে বাড়িতে একা ফিরে না, বড় মামাকে সঙ্গে নিয়ে ফিরে যাতে শাস্তির হাত থেকে বেঁচে যেতে পারে।
ছেলের মামা গম্ভীর গলায় বলেন, ছেলে মানুষ একটা অপরাধ করে ফেলেছে, বাদ দিন দুলাভাই।
ছেলের বাবা হুংকার দিয়ে ওঠেন, না না এইসব বলবে না, এই হারামজাদাকে আজকে আমি খুন করে ফেলব। কত বড় সাহস বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়।
আহা থাক না–ছেলেমানুষ।
ছেলেমানুষ ছেলেমানুষ বলবে না পনেরো বছরের ধাড়ি কুলাঙ্গার। বলতে বলতে বাবা রাগ সামলাতে না পেরে ছেলের গালে চড় বসিয়ে দিলেন। ছুটে এলেন ছেলের মা, ছুটে এলো বোনেরা। ভাইকে আগলে ধরল। ইতিমধ্যে খবর পৌঁছে গেছে। আত্মীয়স্বজন পাড়া-প্রতিবেশী জড় হচ্ছে। বিরাট কেতলিতে চা বসানো হয়েছে। বাবাকে দেখা যাচ্ছে অসময়ে কোট গায়ে দিয়ে কোথায় যেন যাচ্ছেন।
মা বললেন, এই অবেলায় কোথায় যাচ্ছ?
বাবা জবাব দিলেন না কারণ তিনি যাচ্ছেন নিউ মার্কেট। পাবদা মাছ কিনতে। টমেটো দিয়ে পাবদা মাছ তার ছেলের বড়ই পছন্দ।
এ ধরনের মানবিক দৃশ্য কি এখানে কল্পনা করা যায়?
কখনোই না। এখানে অসংখ্য ছেলে রাগ করে বাড়ি ছেড়ে বের হয়ে যায়। ন’বছর দশ বছর বয়স-অভিমানী শিশু। যাবে কোথায় যাবার জায়গা নেই। কোনো পার্কে, কোনো শপিং মলের কোনে দাঁড়িয়ে চোখ মুছতে থাকে। পথচারীরা তাকে কিছু জিজ্ঞেস করে না। জিজ্ঞেস করলেও লাভ নেই–ক্রন্দনরত শিশু অপরিচিত কাউকে কিছুই বলবে না। কারণ অতি অল্প বয়সেই তাকে শেখানো হয়েছে–Never talk to strangers অপরিচিত কারো সঙ্গে কথা বলবে না।