আরো দুঃসংবাদ আছে। গলফও চাইনিজদের আবিষ্কার করা খেলা। গলফের নাম [Chui Wan) (মারের লাঠি), চুই ওয়ান খেলার আরেক নাম বু ডা (bu da)। এর অর্থ হাঁট এবং পেটাও।
এক হাজার বছর আগে চায়নিজ কবি ওয়াং জিয়ানের (টেং ডায়ানেস্টি) কবিতায় বু ডু খেলার যে বর্ণনা পাওয়া যায় তা আধুনিককালের গলফ।
দাবা চায়নিজদের আবিষ্কার করা খেলা। ভারতীয়রাও অবশ্যি এই খেলা আবিষ্কারের দাবিদার।
প্রথম ক্যালকুলেটার চায়নিজদের। নাম এ্যাবাকাস। হট এয়ার বেলুন, প্যারাসুট চায়নিজদের কীর্তি।
অঙ্কে ডেসিমেল সিস্টেম এখন সারা পৃথিবীতেই ব্যবহার করা হয়। কম্পিউটারে ব্যবহার করা হয় বাইনারি সিস্টেম। ডেসিমেল সিস্টেম এখন ভাল ভাত, অথচ মানবজাতিকে দশভিত্তিক এই অঙ্কে আসতে শতবৎসর অপেক্ষা করতে হয়েছে। নিওলিথিক সময়ে (৬০০০ বছর আগে এই ডেসিমেল সিস্টেম চায়নিজরা জানত এবং ব্যবহার করত। সাংহাই শহরে মাটি খুঁড়ে পাওয়া পটারিতে ১০,২০ ৩০ এবং ৪০ সংখ্যার চিহ্ন পাওয়া গেছে, যা সেই সময়ের মানুষের ডেসিমেল সিস্টেমের জ্ঞানের কথাই বলে।
সিসমোগ্রাফ কাদের আবিষ্কার চায়নিজদের আবার কার? প্রাচীন সিসমোগ্রাফের একটি ছবি পাঠকদের কৌতূহল মেটানোর জন্যে দেয়া হলো। এই
আবিষ্কার করা হয় Han dynasty–র সময়।
এবার আসি ধাতু বিদ্যায়।
আকর থেকে লোহা এবং লোহা থেকে ইস্পাত চায়নিজদের আবিষ্কার। তামা এবং পরে ব্রোঞ্জও তাদের।
মাটির নিচ থেকে পেট্রোলিয়াম বের করা এবং ব্যবহার করার পদ্ধতিও তাদের আবিষ্কার। তারাই প্রথম খনি থেকে কয়লা তোলা শুরু করে।
ও সিল্কের কথা তো বলা হলো না। সিল্ক চায়নিজদের। চা চায়নিজদের। চা শব্দটাও কিন্তু চাইনিজ। চিনিও চাইনজিদের।
আমি আমার এই লেখার শিরোনাম দিয়েছি মহান চীন’! চীনকে মহান চীন বলছি চীনাদের এই আশ্চর্য উদ্ভাবনী ক্ষমতার জন্যে। চীন একটি বিশাল দেশ এই জন্যে না। চীনে গ্রেটওয়াল আছে এই জন্যেও না।
আমি লেখক মানুষ। বই ছাপা হয়। যে কাগজে লিখছি সেই কাগজ চায়নিজদের আবিষ্কার। যে ছাপাখানায় বই ছাপা হয়, সেই ছাপাখানাও তাদের আবিষ্কার। চীনকে মহান চীন না বলে উপায় আছে।
চীনে গিয়েছিলাম রাইটার্স ব্লক কাটাতে। সেই ব্লক কীভাবে কাটল সেটা বলে চীন ভ্রমণের উপর এলোমেলো ধরনের লেখাটা শেষ করি।
চীন ভ্রমণের শেষদিনের কথা। সবাই আনন্দ-উল্লাসে ঝলমল করছে। আজ শেষ মার্কেটিং। যে জিনিস আজ কেনা হবে না সেটা আর কোনোদিনও কেনা হবে na। ভোর আটটা বাজার আগেই সবাই তৈরি। আমি হঠাৎ বেঁকে বসলাম। আমি গম্ভীর গলায় বললাম, আজ আমি কোথাও যাব না। (আমার একটা বইয়ের নাম।)
শাওন বলল, যাবে না মানে?
আমি বললাম, যাব না মানে যাব না।
কেন?
আমার ইচ্ছা।
কী করবে? সারাদিন হোটেল বসে থাকবে?
হ্যাঁ।
তুমি হোটেলে বসে থাকার জন্যে এত টাকা খরচ করে চীনে এসেছ?
হ্যাঁ।
তুমি কি জানো, তুমি না গেলে তোমার সফরসঙ্গীরা কেউ যাবে না? সবাই যার যার ঘরে বসে থাকবে।
কেউ ঘরে বসে থাকবে না। সবাই যাবে। দুইশ ডলার বাজি।
আচ্ছা ঠিক আছে, সবাই যাবে। কিন্তু মন খারাপ করে যাবে। তুমি শেষ দিনে সবার মন খারাপ করিয়ে দিতে চাও?
মাঝে মাঝে মন খারাপ হওয়া ভালো। এতে লিভার ফাংশন ঠিক থাকে।
তুমি না গেলে আমিও যাব না।
তুমি থাকতে পারবে না। হোটেলে আমি একা থাকব।
শাওনের গলা ভেঙ্গে ভেঙ্গে যাচ্ছে। তার দিকে তাকালেই চোখের পানি দেখা যাবে। আমি আবার চোখের পানির কাছে অসহায়। কাজেই তার দিকে না তাকিয়ে চোখ-মুখ কঠিন করে জানালার দিকে তাকিয়ে রইলাম। সে প্রায় ছুটেই ঘর থেকে বের হয়ে গেল।
আমি ব্যাগ খুলে কাগজ কলম বের করলাম। লিখতে শুরু করলাম। আমার রাইটার্স ব্লক কেটে গেছে। কলমের মাথায় ঝর্ণাধারার মতো শব্দের পর শব্দ আসছে। কী আনন্দ! কী আনন্দ! একসময় চোখে পানি এসে গেল। কিছুক্ষণ লেখার পর পাতা ঝাপসা হয়ে যায়। চোখ মুছে লিখতে শুরু করি।
কতক্ষণ লিখেছি জানি না। একসময় বিস্মিত হয়ে দেখি, শাওন আমার পেছনে? সে কি হোটেল থেকে যায় নি! সারাক্ষণ কি হোটেল ঘরেই ছিল? আমার কিছুই মনে নেই।
আমি লজ্জিত গলায় বললাম, হ্যালো।
সে বলল, তোমার রাইটার্স ব্লক কেটে গেছে, তাই না?
আমি বললাম, হ্যাঁ।
সে বলল, আমি কী সুন্দর দৃশ্যই না দেখলাম! একজন লেখক কাঁদছে আর লিখছে। কাঁদছে আর লিখছে।
খুব সুন্দর দৃশ্য?
আমার জীবনে দেখা সবচে’ সুন্দর দৃশ্য।
আমি বললাম, নিষিদ্ধ নগরীতে তুষারপাতের চেয়েও সুন্দর?
একশ’গুণ সুন্দর।
আমি অবাক হয়ে দেখি, তার চোখেও অশ্রু টলমল করছে।
চীন ভ্রমণে আমার অর্জন একজন মুগ্ধ তরুণীর আবেগ এবং ভালোবাসার শুদ্ধতম অশ্রু। মিং রাজাদের ভাগ্যে কখনো কি এই অশ্রু জুটেছে? আমার মনে হয় না।
স্বর্গ, না অন্যকিছু?
স্বর্গ, না অন্যকিছু?
কোথায় যাচ্ছি?
সুইজারল্যান্ড।
কেন যাচ্ছ?
খেলতে।
কী খেলা?
নাটক নাটক খেলা।
পাঠকরা নিশ্চয়ই ধাঁধায় পড়ে গেছেন। ধাঁধা ভেঙে দিচ্ছি। আমি নাটকের এক দল নিয়ে যাচ্ছি সুইজারল্যান্ড। এই উর্বর বুদ্ধি আমার মাথা থেকে আসে নি। এতে বুদ্ধি আমার নেই।
আমি (স্বল্পবুদ্ধির কারণেই হয়তো মনে করি না টিভি নাটক করার জন্যে দেশের বাইরে যেতে হবে। বাংলাদেশে সুন্দর জায়গার অভাব পড়েনি। পাহাড় আছে, সমুদ্র আছে, হাওর আছে, বন-জঙ্গল আছে, চা-বাগান আছে, রাবার বাগান আছে। মরুভূমি অবশ্যি নেই। ক্যামেরার সামান্য কারসাজিতে পদ্মার ধু-ধু বালির চরকে মরুভূমি দেখানো জটিল কিছু না, কয়েকটা উট ছেড়ে দিতে হবে। বাংলাদেশে এখন উটও পাওয়া যায়।