সেবারে সম্রাটদের সুরাপাত্র এবং পিকদান দেখেছিলাম। সুরাপাত্র স্বর্ণের থাকবে এটা ধরে নেয়া যায়-থুথু ফেলার সব পাত্রও সোনার হতে হবে? মণি মাণিক্য খচিত হতে হবে? ম্রাটের থুথু এতই মূল্যবান?
যাই হোক, ভ্রমণ প্রসঙ্গে যাই। আমি দলবল নিয়ে নিষিদ্ধ নগরীতে ঢুকলাম। ছোট্ট বক্তৃতা দিলাম অনেক মিউজিয়াম আছে। তোমরা দেখতে পার। দেখার কিছু নেই। কোন সোনার পাত্রে রাজা থুথু ফেলতেন, কোন হীরা মণি মাণিক্যের টাট্টিখানায় হাগু করতেন তা দেখে কী হবে? তাছাড়া খুব বেশি জিনিসপত্র এখানে নেই।
অনেক কিছু লুট করে নিয়ে গেছে ব্রিটিশরা। তারা ব্রিটিশ মিউজিয়াম সাজিয়েছে। দ্বিতীয় দফায় লুট করা হয়েছে (১৯৪৭) চিয়াং কাইশেকের নির্দেশে। তিনি সব নিয়ে গেছেন তাইওয়ানে। সেখানকার ন্যাশনাল প্যালেস মিউজিয়ামের বেশির ভাগ জিনিসপত্রই নিষিদ্ধ নগরীর।
সম্রাটদের প্রাসাদ দেখেও কেউ কোনো মজা পাবে না। সব একরকম। কোনো বৈচিত্র্য নেই। দোচালা ঘরের মতো ঘর। একটার পর একটা। ঢেউয়ের মতো।
আমার নেগেটিভ কথা সফরসঙ্গীদের উপর বিন্দুমাত্র ছাপ ফেলল না। তারা সবাই মুগ্ধ বিস্ময়ে বলল, একী! কী দেখছি! এত বিশাল! এত সুন্দর! এটা না দেখলে জীবন বৃথা হতো।
পরম করুণাময় আমার সফরসঙ্গীদের উচ্ছ্বাস হয়তো পছন্দ করলেন না। তিনি ঠিক করলেন তাঁর তৈরি সৌন্দর্য দেখাবেন। হঠাৎ শুরু হলো তুষারপাত। ধবধবে শাদা তুষার ঝিলমিল করতে করতে নামছে। যেন অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জোছনার ফুল। যেন চাঁদের আলো ভেঙে ভেঙে নেমে আসছে। মুহূর্তের মধ্যে পুরো নিষিদ্ধ নগর বরফের চাদরে ঢেকে গেল। আমি তাকিয়ে দেখি, চ্যালেঞ্জার এবং চ্যালেঞ্জার পত্নী কাঁদছে। আমি বললাম, কাঁদছ কেন?
চ্যালেঞ্জার বলল, বাচ্চা দুটাকে রেখে এসেছি এত সুন্দর দৃশ্য তারা দেখতে পারল না, এই দুঃখে কাদছি। স্যার, আমি এই দৃশ্য আর দেখব না। হোটেলে ফিরে যাব।
শাওন মূর্তির মতো দাঁড়িয়েছিল। আমি বললাম, ক্যামেরাটা দাও, ছবি তুলে দেই। সে বলল, এই দৃশ্যের ছবি আমি তুলব না। ক্যামেরায় কোনোদিন এই দৃশ্য ধরা যাবে না।
অবাক হয়ে দেখি তার চোখেও পানি। সে আমাকে চাপা গলায় বলল, এমন অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য তোমার কারণে দেখতে পেলাম। আমি সারাজীবন এটা মনে রাখব।
মেয়েরা আবেগতাড়িত হয়ে অনেক ভুল কথা বলে। আমার কারণে যে-সব খারাপ অবস্থায় সে পড়েছে সেসবই তার মনে থাকবে, সুখস্মৃতি থাকবে না। মেয়েরা কোনো এক জটিল কারণে দুঃখস্মৃতি লালন করতে ভালোবাসে।
অন্য সফরসঙ্গীদের কথা বলি। মাজহার তুষারপাতের ছবি নানান ভঙ্গিমায় তুলতে গিয়ে পিচ্ছিল বরফে আছাড় খেয়ে পড়েছে। তার দামি ক্যামেরার এইখানেই ইতি। কমলের কাছে মাজহার হলো গুরুদেব। গুরুদেব আছাড় খেয়েছেন, সে এখনো খায় নি-এটা কেমন কথা! গুরুদেবের অসম্মান। কমল তার মেয়ে আরিয়ানানসই গুরুদেবের সামনেই ইচ্ছা করে আছাড় খেয়ে লম্বা হয়ে পড়ে রইল।
চীন ভ্রমণ শেষে সবাইকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, সবচে’ আনন্দ পেয়েছে কী দেখে? গ্রেটওয়াল? ফরবিডেন সিটি, টেম্পেল অব হেভেন, সামার প্যালেস?
সবাই বলল, নিষিদ্ধ নগরে তুষারপাত।
তুষার সন্ধ্যা নিয়ে লেখা রবার্ট ফ্রস্টের প্রিয় কবিতাটি মনে পড়ে গেল।
STOPPING BY WOODS ON A SNOWY EVENING
Whose woods these are I think I know.
His house is in the village though;
He will not see me stopping here
To watch his woods fill up with snow.
My little horse must think it queer
To stop without a farmhouse near
Between the woods and frozen lake
the darkest evening of the year.
He gives his hamess bells a shake
To ask if there is some mistake.
The only other sound’s the sweep
Of easy wind and downy flake.
The Woods are lovely, dark and deep.
But I have promises to keep,
And miles to go before I sleep,
And miles to go before I sleep.
.
দীর্ঘতম কবরখানা
পৃথিবীর দীর্ঘতম কবরখানার দৈর্ঘ্য কত? পনেরশ মাইল। আরো লম্বা ছিল তিনহাজার নয়শ’ চুরাশি মাইল। বর্তমানে অবশিষ্ট আছে পনেরশ’ মাইল। চায়নার বিখ্যাত গ্রেটওয়ালের কথা বলছি। এই অর্থহীন দেয়াল তৈরি করতে এক লক্ষের উপর শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছে। দেয়াল বলে কবরখানা বলাই কি যুক্তিযুক্ত না।
অর্থহীন দেয়াল বলছি, কারণ যে উদ্দেশ্যে বানানো হয়েছিল, মোঙ্গলদের হাত থেকে সাম্রাজ্য রক্ষা, সে উদ্দেশ্য সফল হয় নি। মোঙ্গলরা এবং মাঞ্চুরিয়ার দুর্ধর্ষ গোত্র বারবারই দেয়াল অতিক্রম করেছে।
গ্রেটওয়াল বিষয়ে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিচ্ছি। পবিত্র কোরআন শরীফের একটি সূরা আছে-সূরা কাহাফ। কাহাফের ভাষ্য অনুযায়ী অনেকে মনে করেন আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট এই প্রাচীর নির্মাণ করেন।
ওরা বলল, ‘হে জুলকারনাইন। ইয়াজুজ ও মাজুজ পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করছে। আমরা এই শর্তে কর দেব যে, তুমি আমাদের এই ওদের মধ্যে এক প্রাচীর গড়ে দেবে।’ (১৮:৯৪)
জুলকারনাইন স্থানীয় অধিবাসীদের শ্রমেই প্রাচীর তৈরি করে দেন।
আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট যে আমাদের নবীদের একজন, এই তথ্য কি পাঠকরা জানেন? জুলকারনাইন হলেন আলেকজান্ডার দা গ্রেট।