জি না। স্যার আমার কাজটা কি যদি বলেন।
বারান্দায় বসে থাকবে। বসে থাকাও কাজ। বেশ কঠিন কাজ। তবে তোমাকে আমি কাজ দেব। বিনা কাজে বেতন দেয়া আমার স্বভাব না। কাজটা তুমি পারবে কি পারবে না সেটা দেখারও ব্যাপার আছে। আমি তোমাকে পরীক্ষা করছি। ঠিক আছে তুমি এখন যাও।
শফিকুল করিম বারান্দায় বসে রইল। বড় সাহেব এর মধ্যে তাকে ডাকলেন। দুপুরে নিচে গেল খাবারের জন্যে। খেতে পারল না। দুকাপ চা তিনটা সিগারেট টেনে আবারও বারান্দায় এসে বসে থাকল। বড় সাহেব তার পরীক্ষা নিচ্ছেন। এটা কী রকম পরীক্ষা? সে বারান্দায় বসে আছে। পরীক্ষক ঘরে বসে টিভি দেখছেন। রাত সাড়ে আটটায় বাবুর্চি গনি এসে বলল, এখন চলে যান। স্যার চলে যেতে বলেছেন।
শফিক বাসায় ফিরল একটা ইলিশ মাছ নিয়ে। রাত নটার পর নিউমার্কেট কাঁচাবাজারে হঠাৎ হঠাৎ মাছ খুব সস্তা হয়ে যায়। শফিকের হাতের মাঝারি সাইজের ইলিশটার দাম নিয়েছে মাত্র একশ টাকা। মাছটার পেটে ডিম আছে। খেতে তেমন স্বাদ হবে না। তবে ইলিশ মাছের ডিম মীরার অতি পছন্দের খাবার। কোনো এক বিচিত্র কারণে মেয়েরা পুরুষদের মতো খাদ্য-রসিক হয় না। মীরাও হয়নি শুধু ইলিশ মাছের ডিমের ঝোল হলে ভিন্ন কথা। এই সময় তার চোখ চকচক করে। মীরার কথা মনে করেই শফিককে সব সময় ডিমওয়ালা ইলিশ কিনতে হয়।
শফিকের হাত একেবারেই খালি। এই অবস্থায় একশ টাকা হুট করে খরচ করা যায় না। যে চাকরি শুরু করেছে তার ওপর ভরসাও করা যাচ্ছে না। বড় সাহেব তাকে পরীক্ষা করছেন। পরীক্ষায় পাস করতে হবে। পাশ করা যাবে কিনা তা সে জানে না। তারপরও মাছটা কিনে তার ভালো লাগছে। মাছ দেখে মীরা খুশি হবে। বাসায় অনেক দিন মাছ-মাংস যাচ্ছে না। প্রায় প্রতিদিনের মেনু আলুভাজি, ডাল-ভাত। মাঝে মধ্যে নিশোর জন্যে একটা ডিম-ভাজি। গত পরশু নিশোর ডিম-ভাজির একটা অংশ মীরা শফিকের পাতে তুলে দিয়ে ভালো সমস্যা বাধিয়ে ছিল। শফিক খাওয়া বন্ধ করে হাত গুটিয়ে বসে কঠিন গলায় বলল, এটা কেন করলে?
মীরা বলল, কী করলাম?
নিশোর ডিমের অর্ধেকটা আমার পাতে তুলে দিলে কেন?
তুমি খাবে এই জন্যে তুলে দিয়েছি। এমন তো না যে তুমি ডিম খাও না।
শফিক গভীর গলায় বলল, মীরা শোনো, তুমি এই কাজটা করেছ আমাকে অপমান করার জন্যে। আমাকে তুমি চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে চেয়েছ যে, আমি অপদার্থ শ্রেণীর একজন মানুষ। যে স্ত্রী-কন্যার জন্যে সামান্য খাবারও জোগাড় করতে পারে না।
মীরা বলল, শুধু শুধু চিৎকার করে না তো!
নিশোর স্বভাব হলো, মায়ের প্রতিটি কথা তার নকল করতে হবে। নিশো তার বাবার দিকে তাকিয়ে বলল, বাবা শুধু শুধু চিক্কার করবে না।
মীরা বলল, শান্ত হয়ে ভাত খাও।
নিশো বলল, বাবা খুব শান্ত হয়ে ভাত খাও।
শফিক শান্ত হয়েই খাওয়া শেষ করল, একবার শুধু বলল, মীরা শোনো মেয়েরা সবচে আনন্দ কখন পায় জানো? সবচে আনন্দ পায় স্বামীকে অপমান করে। মেয়েদের কাছে এই আনন্দ Sexual প্লেজারের কাছাকাছি।
মীরা বলল, তথ্যটা জানা ছিল না। এখন জানলাম।
নিশো বলল, বাবা! মা এখন জেনেছে।
শফিক বাড়ির দরজায় ধাক্কা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টি শুরু হলো। বৃষ্টি যেন অপেক্ষা করছিল। শফিক দরজায় ধাক্কা দিল সঙ্গে সঙ্গে বজ্রপাত হলো। একই সঙ্গে বৃষ্টি। হুড়মুড় টাইপ বৃষ্টি।
দরজা খুলে মীরা প্রথম কথা যেটা বলল সেটা হচ্ছে, এই তুমি তো গোসল করবে। বাথরুমে এক ফোঁটা পানি নেই। বৃষ্টিতে গোসল করে ফেল। করবে?
শফিক বলল, হুঁ।
মীরা বলল, তাহলে তাড়াতাড়ি করো। ঝুম বৃষ্টি বেশিক্ষণ থাকবে না।
নিশো ঘুমুচ্ছে।
হুঁ। তোমার জন্যে অনেকক্ষণ জেগেছিল। কিছুক্ষণ আগে ঘুমিয়েছে। ডেকে তুলব?
না।
মাছ কীভাবে রান্না করব? ভাজি করব না তরকারি?
দুটাই করো।
তরকারি কী দেব? ঘরে কচুমুখি আছে। মুখি তো আবার তুমি পছন্দ করো না।
পছন্দ করি না তা না, গলায় ধরে।
কোনো তরকারি না হয় না দিলাম। শুধু ঝোল থাক।
থাক।
শফিকের বাসায় বৃষ্টির পানিতে গোসলের ভালো ব্যবস্থা আছে। বারান্দার দক্ষিণ অংশে ছাদ থেকে গড়িয়ে আসা বৃষ্টি বড় ধারায় নেমে আসে। বাবুল গোসলে নেমেছে। গোসলের ফাঁকে ফাঁকে বাথরুমের প্লাস্টিকের বালতিগুলো পানিতে ভরে রাখছে। কাল সকালে মীরাকে পানি ভরতে হবে না।
মীরা মাছ কুটতে বারান্দায় এসেছে। মাছ কোটার চেয়ে সে বেশি আগ্রহ বোধ করছে স্বামীর সঙ্গে কথাবার্তা চালাতে। মাছ এবং বঁটি নিয়ে সে বারান্দায় চলে এসেছে, সে বারান্দায় বসে মাছ কুটবে, স্বামীর সঙ্গে গল্প করবে। একটা ছোট্ট সমস্যা, বারান্দায় আলো নেই বললেই হয়। তবে ইলিশ মাছ কুটতে আলো লাগে না। মীরা বলল, পানি ঠাণ্ডা?
শফিক বলল, বরফ গলা পানি। দেখ না ঠাণ্ডায় কাঁপছি।
উঠে পড়ো।
ঠাণ্ডা খারাপ লাগছে না।
আজ তো প্রথম চাকরি করলে। বস কেমন?
ইঁদুর টাইপ।
মীরা অবাক হয়ে বলল, ইদুর টাইপ মানে?
ব্যাটাকে দেখে মনে হয় একটা সাদা ইঁদুর। লুঙ্গি-ফতুয়া পরে মাথায় ক্যাপ দিয়ে চেয়ারে বসে দুলছে। শালা বুড়া ভাম।
গালাগালি করছ কেন?
বকরবকর বকরবকর করেই যাচ্ছে। গা থেকে বের হচ্ছে বোটকা আতরের গন্ধ। একটা থাপ্পড় দিতে পারলে…
এ রকম করে কথা বলবে না। প্লিজ। তোমার মুনিব অন্নদাতা।
হেন বিষয় নাই যে সে কথা বলবে না।
একা থাকে, কথা বলার লোক নেই। তোমার কাজটা কী?