গরমের মধ্যে পোলাও করবি? আচ্ছা ঠিক আছে। তোর শ্বশুর-শাশুড়িকে এখন কাছে এনে রাখ। বিরাট বাড়ি।
বাবা-মাতে আমাদের সঙ্গেই থাকেন। তাদের আলাদা ঘর আছে।
তারা কোথায়?
আমার শাশুড়ি নিউ মার্কেটে গেছেন নিশোকে নিয়ে। নিজে পছন্দ করে বিছানার চাদর কিনবেন।
তোর শ্বশুর কই?
উনি কোথায় জানি গিয়েছেন।
বাসা খালি?
কাজের মেয়েটা আছে।
মীরা লক্ষ্য করল মঞ্জু মামা এক-দৃষ্টিতে তার নাভির দিকে তাকিয়ে আছেন। মীরা ঠিক করে ফেলল সে বাথরুমে ঢুকে শাড়িটা আরেকটু নিচু করে পরবে। যাতে মঞ্জু মামা ভালোমতো নাভি দেখতে পারেন। মীরা তার কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়াবে যাতে মঞ্জু মামা তার পেটে হাত রাখতে পারেন। তখন মীরা কষে একটা চড় লাগাবে। চড় খাবার পর মামার মুখের ভাব কেমন হয় এটা মীরার অনেক দিনের দেখার শখ।
মঞ্জু মামা সিগারেট ধরাতে ধরাতে বললেন, তুই কাছে এসে বস গল্প করি। তোর শ্বশুর থাকলে ভালো হতো। জমিয়ে গল্প করতে পারতাম। ইন্টারেস্টিং মানুষ।
গত চারদিন ধরে জয়নাল সাহেব নারায়ণগঞ্জে আছেন। লায়লার এক তলা বাড়ির ছাদের ঘরে তাঁকে থাকতে দেয়া হয়েছে। তিনি আনন্দে আছেন। ছাদের ঘরটা বেঙ্গল হোটেলের ২৩ নম্বর ঘরের চেয়ে ছোট। জানালাও ছোট। তবে জানালা খুললে আকাশ দেখায়। তার ঘরে কোনো সিলিং ফ্যান নেই। নীতু টেবিল ফ্যান ফিট করে দিয়েছে। ফ্যানে প্রচুর হাওয়া হয়। শেষ রাতে তাকে চাদর গায়ে ঘুমুতে হয়। নীতু লায়লার মেয়ে। জয়নাল সাহেবের ধারণা নীতুর মতো রূপবতী মেয়ে বাংলাদেশে আর একজনও নেই।
রূপবতীরা অহংকারী হয়। তিনি এই মেয়ের মধ্যে অহংকারের অ এখন পর্যন্ত পাননি। তার ধারণা এই মেয়েকে দশে দশ চোখ বন্ধ করে দেয়া যায়। নীতু তাঁকে ডাকে ডিকশনারি চাচা। দিনের মধ্যে সে বেশ কয়েকবার ছাদে আসে। জয়নাল সাহেবের ঘরে টোকা দিয়ে বলে, ডিকশনারি চাচা দরজা খুলুন আপনার সঙ্গে ঝগড়া করতে এসেছি। এই মেয়ে ঝগড়া করার নানা অজুহাত নিয়ে আসে। জয়নাল সাহেবের বড়ই মজা লাগে। নীতুর সঙ্গে তাঁর সর্বশেষ ঝগড়া হয়েছে নীতুকে দশে দশ দেয়া নিয়ে।
ডিকশনারি চাচা আপনি আমাকে দশে যেন কত দিয়েছেন?
দশে দশ।
আমি ছাড়া আর কেউ কি আপনার কাছে দশে দশ পেয়েছে?
শফিক পেয়েছে।
শফিক কে?
আমার ছেলে।
নিজের ছেলে বলে দশে দশ দিয়েছিলেন।
মাগো শফিক খুবই ভালো ছেলে।
সব বাবা-মার কাছে নিজের ছেলে খুবই ভালো। যে ছেলে প্রতিদিন ফেনসিডিলি খায় তার বাবাও বলে, আমার ছেলের ঐ একটা দিক সামান্য খারাপ। ঐটা ছাড়া তার মতো ছেলে হয় না। ডিকশনারি চাচা আপনার ছেলে কি ফেনসিডিল খায়?
আরে না ফেনসিডিলি খাবে কেন?
অবশ্যই খায়। আপনি জানেন না। আপনার ছেলে তো আর আপনাকে জানিয়ে খাবে না। আসুন লজিকে আসুন। আপনার ছেলে কি আপনাকে জানিয়ে ফেনসিডিলি খাবে, মদ খাবে?
তা খাবে না। তবে খেলে আমি টের পেতাম।
কিভাবে টের পেতেন। আপনি তো ছেলের সঙ্গে থাকেন না। আপনি থাকেন হোটেলে। যে ছেলে বাবাকে হোটেলে ফেলে রাখে তাকে আপনি কীভাবে দশে দশ দেবেন?
আমার ছেলে তো আমাকে হোটেলে ফেলে রাখে নাই। আমি নিজের ইচ্ছায় হোটেলে থাকি। যখন সে বড় বাসা নিবে তখন তার সঙ্গে থাকব।
আপনার ছেলে কি হোটেলে প্রতি সপ্তায় আপনাকে দেখতে যেত?
তা যেত না। কাজেকর্মে থাকে, প্রতি সপ্তাহে আসা তো সম্ভব না। মাসে একদুবার করে আসত।
অসুস্থ বৃদ্ধ বাবা হোটেলে একা পড়ে থাকে তাকে দেখার জন্যে যে ছেলে আসে মাসে একবার তাকে কি দশে দশ দেয়া যায়? ডিকশনারি চাচা আপনি তাকে নতুন করে নাম্বার দিন।
তুমিই দাও গো মামা।
আমি তাকে দিলাম দশে তিন। ফেল মার্ক। গ্রেস দিয়েও তাকে পাস করাতে পারবেন না। ঠিক আছে?
ঠিক আছে।
এখন আপনি নিচে আসুন। আমার এক বান্ধবী এসেছে রুমা নাম। তার সঙ্গে আমার একশ টাকা বাজি হয়েছে। সে দশটা কঠিন কঠিন ইংরেজি শব্দ লিখে এনেছে। আপনি যদি দশটা শব্দের মানে বলতে পারেন রুমা বাজিতে হারবে। আর যদি একটা মিস করেন আর্মি হারব। তখন আমাকে একশ টাকা দিতে হবে। সেই টাকা আমি দেব না। আপনি দেবেন।
আমার কাছে একশ টাকা নাই গো মা।
আপনি আপনার দশে তিন পাওয়া ছেলের কাছ থেকে এনে দেবেন। আপনি চাইলে সে আপনাকে একশ টাকা দেবে না?
তা দিবে।
তাহলে আসুন দেখি। আর শুনুন রুমা বাজিতে হারলে যে একশ টাকা দেবে তার পুরোটাই আপনার।
আমার টাকা লাগবে না মা।
অবশ্যই লাগবে, আপনার হাত খালি না?
নীতুর সঙ্গে যতবারই তাঁর কথা হয় ততবারই মনে হয় যার সঙ্গে এই মেয়ের বিয়ে হবে সে হবে পৃথিবীর সৌভাগ্যবান পুরুষদের একজন। অতি রূপসীদের বিয়ে হয় না সেই কারণে নীতুর বিয়ে নাও হতে পারে এটা নিয়েও জয়নাল সাহেব চিন্তিত। এই মেয়েটির বিয়েতে তিনি উপস্থিত থাকতে চান এবং পুরনো দিনের মতো একপাতার ছাপা উপহার দিতে চান। উপহার লেখা হবে ইংরেজিতে। তিনি নিজেই লিখবেন। কয়েকটা লাইন ইতিমধ্যেই মাথায় এসেছে–
An Angel was she
For her Greetting from me.
Her happy wedding today
And I want to say,
No one is like she.
নীতুর বিয়ে নিয়েই সমস্যা। এখানকার এক ওয়ার্ড কমিশনার নীতুকে বিয়ে করতে চাচ্ছে। তার নাম লোকমান। সবার কাছে সে পরিচিত আঙুল কাটা লোকমান নামে। ছুরি চালাচালি করতে গিয়ে তার বাঁ হাতের দুটা আঙুল কাটা পড়েছে বলেই এই নাম। আগে সে আওয়ামীলীগের বিরাট কর্মী ছিল। বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর কঠিন বিএনপি হয়েছে। বিএনপির টিকেটে ইলেকশন করে ওয়ার্ড কমিশনার হয়েছে।