এত রাতে যাবি কিভাবে?
মামা আমি ব্যবস্থা করব তোমাকে চিন্তা করতে হবে না।
আমি পৌঁছে দিয়ে যাই।
মামী কোন দরকার নেই।
মঞ্জু নিতান্তই অনিচ্ছার সঙ্গে উঠলেন। মীরার মনে হলো তার মাথা থেকে বিরাট বোঝা নেমে গেছে। বেশ কিছুদিন থেকেই শফিকের মেজাজ খারাপ যাচ্ছে। তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ঝগড়া করছে। নতুন ঝগড়া শুরু করার মতো সুযোগ তৈরি করা ঠিক হবে না। মঞ্জু মামা এসেছিল এই ব্যাপারটা তাকে না জানালেই হবে। ছোট্ট সমস্যা একটা আছে। নিশো। সে কথায় কথায় বলে দিতে পারে। সে কি নিশোকে মঞ্জু মামার বিষয়ে কিছু বলতে নিষেধ করবে? তাকে নিষেধ করা মানে মনে করিয়ে দেয়া। এমনিতে হয়তো কিছু বলবে না, নিষেধ করা হলেই বলবে।
মীরা নিশোর জামা বদলাতে গেল। নিশো বলল, আমরা কি কোনখানে যাচ্ছি?
মীরা বলল, হ্যাঁ যাচ্ছি।
কোথায় যাচ্ছি মা? দাদিমাকে দেখতে?
প্রথমে দাদিমাকে দেখতে যাব সেখান থেকে যাব চাইনিজ রেস্টুরেন্টে। তোমার বাবা আজ আমাদের বাইরে খাওয়াবে।
কেন?
আমরা অনেক দিন বাইরে খাই না তো এই জন্যে।
মা আমরা কী অনেক বড়লোক হয়ে গেছি?
হ্যাঁ হয়েছি।
তাহলে আমাদের বাসায় ফ্রিজ নেই কেন?
ফ্রিজের ব্যবস্থা হবে। সামনের মাসেই হবে। মা একটা কথা মন দিয়ে শোন— আজ যে মঞ্জু মামা আমাদের বাসায় এসেছিলেন এটা বাবাকে বলবে না।
বলব না কেন?
আমি নিষেধ করেছি এই জন্যে বলবে না। ছোট মেয়েদের মার কথা শুনতে হয়।
আচ্ছা বলব না।
প্রমিজ?
প্রমিজ। বাবা কখন আসবে মা?
এক্ষুণি চলে আসবে।
এক্ষুণি মানে কখন?
উফ মা। তুমি এত কথা বল কেন?
গাড়ি চড়ে নিশো খুবই উত্তেজিত। সে চোখ বড় বড় করে বলল, বাবা এটা কি আমাদের নিজের গাড়ি?
মীরা বলল, এটা তোমার বাবার অফিসের গাড়ি।
নিশো বলল, এখন থেকে এই গাড়ি কি আমাদের সঙ্গে থাকবে?
মীরা বলল, আমাদের সঙ্গেই তো থাকে।
স্কুলে যাবার সময় থাকে না কেন? স্কুলে আমি রিকশা করে যাই কেন?
তোমার স্কুলে যাবার সময় তো গাড়ির দরকার নেই। যখন প্রয়োজন হবে তখন গাড়ি পাবে।
কখন প্রয়োজন হবে?
এই যেমন আজ প্রয়োজন হয়েছে। আমরা তোমার দাদুমণির বাসায় বেড়াতে যাচ্ছি। সেখান থেকে একটা চাইনিজ রেস্টুরেন্টে যাব।
আমি কিন্তু স্যুপ খাব না।
বেশ তো খাবে না। যেটা তোমার খেতে ইচ্ছা করবে খাবে।
নিশো তার বাবার দিকে ঝুঁকে এসে বলল, আমরা কি অনেক বড়লোক হয়ে গেছি বাবা?
শফিক জবাব দেবার আগেই মীরা বলল, এত কথা বলবে না তো মা। গাড়িতে এত কথা বলতে নেই।
গাড়িতে এত কথা বললে কী হয়?
মীরা বলল, এসি গাড়ি। দরজা-জানালা বন্ধ। কথা বললে কথা কানে বেশি বাজে। মাথা ধরে।
আমার তো মাথা ধরেনি।
আমাদের ধরেছে। আমার ধরেছে। তোমার বাবার ধরেছে।
আচ্ছা তাহলে আর কথা বলব না।
নিশো চুপ করে গেল। শফিক বলল, তোমার মেয়ে তো কথাকুমারী হয়ে গেছে। সুন্দর গুছিয়ে কথা বলা শিখেছে।
মীরা বলল, গুছিয়ে কথা বলার জন্য ও যে সিনেমার অফার পেয়েছে সেটা তো তোমাকে বলা হয়নি।
শফিক বলল, সিনেমায় অফার পেয়েছে মানে কী?
আমরা গার্জিয়ানরা তো সবাই স্কুলের বাইরে অপেক্ষা করি। একজন গার্জিয়ান গত সোমবার আমাকে বললেন, আপনার মেয়ে দেখতে খুবই সুন্দর। কুট কুট করে কথা বলে, ওকে সিনেমায় দেবেন? ঐ ভদ্রমহিলার ভাই ফিল্ম মেকার। তিনি একটা ছবি বানাচ্ছেন। ছবির নাম ঝরা বকুল। তিনি একজন শিশু শিল্পী খুঁজছেন। যে ঝরা বকুলের নায়িকার বোন। নায়িকার সঙ্গে তার একটা গান আছে।
তুমি কী বলেছ?
বলাবলির কী আছে? আমার মেয়ে সিনেমা করবে নাকি?
শফিক হালকা গলায় বলল, শুনে তো আমার কাছে ইন্টারেস্টিং লাগছে।
তুমি কি চাও মেয়ে সিনেমা করুক? তুমি চাইলে আমি ওনার সঙ্গে আলাপ করতে পারি।
শফিক জবাব দিল না। নিশো মার পাশে জানালার দিকে বসেছিল সেখান থেকে উঠে এসে বাবার কোলে বসল।
মীরা বলল, আজ আমার খাটনি অনেক বাঁচল।
শফিক বলল, খাটনি বাঁচল মানে কি?
সেজেগুজে বের হয়ছি। তোমার জন্যে নিশি রাতে সাজতে বসতে হবে না।
শফিক বলল, সাজতে ভাল লাগে না? আমার তো ধারণা সব মেয়ে সাজতে পছন্দ করে।
মীরা বলল, আমিও সাজতে পছন্দ করি; কিন্তু একটা বিশেষ কারণে সাজছি ভাবতে ভাল লাগে না।
আচ্ছা আর সাজতে বলব না।
মীরা বলল, আমার অভ্যাস হয়ে গেছে, তুমি না বললেও আমি সাজব।
নিশো বলল, মা তুমি আমাকে কথা বলতে নিষেধ করেছ আমি কথা বলা বন্ধ করেছি। তুমি কিন্তু কথা বলেই যাচ্ছি। এটা কি ঠিক হচ্ছে?
মীরা বলল, এটা ঠিক হচ্ছে না। আমরা আর কথা বলব না।
চাইনিজ রেস্টুরেন্টে তো কথা বলতে কোন সমস্যা নেই। তাই না মা?
না সেখানে কোন সমস্যা নেই।
আমি কিন্তু স্যুপ খাব না মা।
একবার তো বলেছ সুপ খাবে না বারবার বলার দরকার নেই। আমার মনে আছে।
শফিক বলল, প্রচণ্ড ক্ষিদে লেগেছে। আজ আর মাকে দেখতে যাবার দরকার নেই। চলো সরাসরি রেস্টুরেন্টে যাই।
মীরা বলল, তুমি যা বলবে তাই হবে। তবে মাকে দেখতে গেলে মা খুশি হতেন।
শফিক ছয় মাস পর এই প্রথম সবাইকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে খেতে এসেছে। প্রতিজ্ঞা করেই এসেছে সে হাসিখুশি থাকবে। উঁচু গলায় কথা বলবে না। মেজাজ থাকবে পুরো কনট্রোলে। এই প্রতিজ্ঞার পেছনের কারণ হলো যতবারই সে রেস্টুরেন্টে খেতে এসেছে মীরার সঙ্গে কোন একটা ঝামেলা হয়েছে। মীরা মাঝ পথে খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আজ তার জন্মদিন উপলক্ষে খাওয়া। এতে কোনো ঝামেলা হওয়া উচিত না। শফিককে অনেক সাবধান থাকতে হবে।