আমাদের জন্যে চিন্তা করিস না। আগে ঋণমুক্ত হ। ঋণ আছে না?
আছে।
পারলে তোর মার হাতে কিছু টাকা-পয়সা দিস। আমারই দেয়া উচিত। আমি তো আর পারছি না। টাকা হাতে থাকলে ঐ মহিলার মেজাজ খুব ভালো থাকে। এমনিতে ঘ্যানঘ্যান স্বভাব, তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ঘ্যানঘ্যান করার ইংরেজি কী বল দেখি?
জানি না বাবা।
বলিস কী? তুই না ইংরেজির ছাত্র? তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ঘ্যানঘ্যান করার ইংরেজি হলো সিএআরপি।
তুমি কি এখনো ডিকশনারি মুখস্থ করেই যাচ্ছ।
অসুবিধা কী?
শুধু শুধু ভারি একটা বই মাথায় নিয়ে বসে থাকা। বাবা তুমি আর খেও না। সকালে নাস্তা খেয়ে এতটা খিচুড়ি খাওয়া ঠিক না। শরীর খারাপ করবে।
বৌমার রান্নার হাত ভালো। তোর মার চেয়েও ভালো। খেয়ে মজা পেয়েছি। তোর মা আসলে রান্নাবান্না কিছু জানে না। ঘ্যানঘ্যান করে কূল পায় না রাধৰে কখন? বৌমাকে মনে করে বলিস খেয়ে খুব তৃপ্তি পেয়েছি।
বলব।
বৌমাকে সুখে রাখার চেষ্টা করবি। যে ব্যক্তি মাতি, স্ত্রী এবং কন্যা এই তিন শ্রেণীকে সুখী রাখে আল্লাহপাক তার জন্যে তিনটা রহমতের দরজা খুলে দেন।
নারায়ণগঞ্জ কী জন্যে?
স্যার একটা কাজে পাঠাচ্ছেন। একজনকে কিছু ফলমূল দিয়ে আসতে হবে।
একটু অপেক্ষা কর টিফিন কেরিয়ার ধুয়ে দেই।
খিচুড়ি সব খেয়ে ফেলছ?
হুঁ।
তোমাকে ধুতে হবে না। বাসায় নিয়ে ধুলেই হবে।
ছেলে চলে যাচ্ছে জয়নাল সাহেবের খুবই খারাপ লাগছে। ছেলের সঙ্গে আজ গল্পই হয়নি। কিছুক্ষণ থাকতে বললে অবশ্যই থাকবে। থাকতে বলা ঠিক হবে না। সে একটা কাজে যাচ্ছে। সবচে ভালো হয় ছেলের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ চলে যাওয়া। এক সঙ্গে কিছুক্ষণ ঘুরবেন। তাছাড়া নারায়ণগঞ্জ ভঁর দেখাও হয়নি। নারায়ণগঞ্জ যা-তা শহর না। বাংলার ডান্ডি।
বাবুল।
জি বাবা।
নারায়ণগঞ্জ যাবি কীভাবে? বাসে?
অফিস থেকে আমাকে একটা গাড়ি দিয়েছে।
চিন্তা করছি তোর সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঘুরে আসব কিনা। নারায়ণগঞ্জ কখনো যাইনি। তুই তোর কাজ করলি আমি গাড়িতে বসে থাকলাম।
শফিক বলল, চলো। রেডি হয়ে নাও।
রেডি তো আছিই।
তিনি ডিকশনারি হাতে উঠে দাঁড়ালেন। শফিক বলল, তুমি ডিকশনারি নিচ্ছ কেন?
তিনি বললেন, হাতের কাছে থাকল। অসুবিধা কী? সময়ে-অসময়ে চোখ বুলালাম। সব সময় চর্চার ওপর থাকা দরকার।
গাড়িতে উঠে তাঁর খুব ভালো লাগছে। তাঁর মনে হচ্ছে জীবনটা আসলেই সুন্দর এবং তিনি একজন সুখী মানুষ। রাস্তা ভর্তি মানুষজন। তাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগছে। সবাই কেমন সুখী সুখী। বিশেষ করে ফুলওয়ালি মেয়েগুলোকে। তারা বেলি ফুল নিয়ে ছোটাছুটি করছে। কী সুন্দর করেই না বলছে— ফুল নিবেন? ফুল? একটা বেলি ফুলের মালা কিনলে খারাপ হয় না। শফিককে কি বলবেন একটা মালা কিনে দিতে? তাঁর হাত খালি। বালিশের নিচ থেকে টাকাটা আনা হয়নি। শফিকের সামনে টাকা আনতে লজ্জা লাগল বলে আনেননি। এখন মনে হচ্ছে টাকাটা খাকলে ভালো হতো। শূন্য পকেটে ঢাকার বাইরে যাওয়া হচ্ছে এটা ঠিক না। অবশ্যি ছেলে সঙ্গে আছে। ছেলে সঙ্গে থাকা অনেক বড় ব্যাপার। ছেলে পাশে থাকলে বুকে হাতির বল থাকে।
বাবুল।
জি বাবা।
পুলিশ সংক্রান্ত কোনো সমস্যা হলে আমাকে বলবি।
শফিক অবাক হয়ে বলল, পুলিশ সংক্রান্ত সমস্যা হলে তোমাকে বলব কেন? পুলিশের সঙ্গে তোমার কী?
ঢাকা সাউথের পুলিশ কমিশনার আমার ছাত্র।
তাই নাকি?
জয়নাল সাহেব অনিন্দিত গলায় বললেন, মজার ইতিহাস। গত পরশুদিন বিকাল বেলা সায়েন্স ল্যাবরেটরির সামনে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ আমার সামনে ঘাস করে একটা পুলিশের গাড়ি থামল। তাকিয়ে দেখি একজন পুলিশ অফিসার নামছেন। আশপাশের সবাই তটস্থ। আমিও তাকিয়ে আছি। দেখি পুলিশ অফিসার এসে আমার সামনে দাঁড়াল। তারপর কিছু বুঝার আগেই ঝুপ করে আমার পা ছুঁয়ে সালাম। সালাম করতে করতেই বলল, স্যার আমি আপনার ছাত্র। আমি বললাম, কেমন আছ বাবা? সে বলল, স্যার গাড়িতে ওঠেন। আমি আপনাকে বাসায় নিয়ে যাব। আমার স্ত্রীকে আমি আপনার কথা বলেছি। সে বিশ্বাসই করে না কেউ পুরো ডিকশনারি মুখস্থ করতে পারে। আজ প্রমাণ হয়ে যাবে।
গিয়েছিলে বাসায়?
হ্যাঁ। তার স্ত্রীর নাম কেয়া। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে জিওগ্রাফিতে মাস্টার্স করেছে। তাদের একটাই ছেলে। ছেলের নাম টগর। সানবিম নামে একটা ইংরেজি স্কুলে থার্ড গ্রেড়ে পড়ে। খুবই ভালো ছাত্র। প্রতিবার ফার্স্ট হয়। শুধু এইবার থার্ড হয়েছে। পরীক্ষার আগে আগে জ্বর হয়েছে বলে রেজাল্ট ভালো হয়নি।
তুমি দেখি বাড়ির সব খবর নিয়ে চলে এসেছ।
অনেকক্ষণ ছিলাম। রাতে খেয়ে এসেছি। কেয়ার রান্নার হাত ভালো। বেশ ভালো।
ইংরেজি পরীক্ষা দাওনি? দিয়েছি।
কেয়া আর তার স্বামী দুজনেই ডিকশনারি নিয়ে বসেছিল।
কোনো শব্দ মিস করেছ?
আরে না। মিস করব কেন? এর মধ্যে টগরও একটা শব্দ জিজ্ঞেস করল–Violet, আমি ভাব করলাম যে এই শব্দটার মানে জানি না। টগর খুবই খুশি যে আমাকে আটকাতে পেরেছে।
শফিক হাসতে হাসতে বলল, বাবা তুমি সুখেই আছ।
জয়নাল সাহেব আনন্দিত গলায় বললেন, পথে যদি গাড়ি ট্রাফিক সিগন্যালে থামে আর কোন ফুলওয়ালি পাওয়া যায় তাহলে একটা বেলি ফুলের মালা কিনে দিস তো।
মালা দিয়ে কি করবে?
কিনলাম অরি কি? নবীজির হাদিস মনে আছে না—
জোটে যদি শুধু একটি পয়সা
খাদ্য কিনিও ক্ষুধার লাগি।
দুইটি পয়সা জোটে যদি কভু
ফুল কিনে নিও হে অনুরাগী।