বেশ চলো, আমরা তাহলে যাই। বাবাকে কি একবার হাত নেড়ে বাই বাই বলবে?
না।
ছবিটা তুমি আমার কাছে দাও। এত বড় একটা ছবি তোমার নিতে কষ্ট হচ্ছে।
আমার কষ্ট হচ্ছে না।
প্লেন আকাশে ওঠার পর জাহিন বলল, আমি ছবিটা একটু দেখব মা।
রুবি মোড়ক খুলে ছবিটা মেয়ের হাতে দিলেন। জাহিন শান্ত গলায় বলল, একবার বাবা আমাকে স্কুল থেকে আনতে ভুলে গিয়েছিল। বারোটার সময় ছুটি হয়েছে। বাবা আনতে গেছে তিনটার সময়। বাবাকে দেখে আমি ছুটতে ছুটতে গিয়েছিলাম। সেই ছবিটা বাবা একেঁছে। মা, দেখো।
ছবিতে ছোট্ট একটা মেয়ে দুহাত বাড়িয়ে ছুটে যাচ্ছে। হাওয়ায় তার চুল উড়ছে, স্কুল ব্যাগ উড়ছে। মেয়েটার চোখভর্তি জল।
রুবি অবাক হয়ে ছবিটার দিকে তাকিয়ে আছে। তাঁর কাছে হঠাৎ মনে হলো অপূর্ব এই ছবিটা রঙ দিয়ে আঁকা হয় নি। আঁকা হয়েছে চোখের জলে।
জাহিন চোখ মুছছে। রুবি দুহাতে মেয়েকে কাছে টানলেন। জাহিন ফিসফিস করে বলল, এয়ারপোর্টে বাবা কি রকম একা একা দাঁড়িয়ে ছিল।
রুবি বললেন, সব মানুষই একা রে মা। তারা সংসার, স্ত্রী, পুত্র, কন্যা নিয়ে বাস করে। তার পরেও তারা একা।
.
জাহিন প্লেনের জানালা দিয়ে তাকাল। তার খুব ইচ্ছা করছে অনেক অনেক দূর থেকে বাবাকে একটু দেখবে। কিন্তু প্লেন আকাশে উঠে গেছে। শাদা মেঘের আড়ালে ঢাকা পড়েছে নিচের পৃথিবী।
জাহিন কাঁদছে। কাঁদছে ফ্রেমে বন্দী স্কুলের পোশাক পরা বাচ্চা মেয়েটি।
[সমাপ্ত]