সানাউল্লাহ বললেন, ব্যাটারি খাওয়া মানে ব্যাটারির খোসা ছাড়িয়ে পেস্টের মতো যে ক্যামিকেল আছে সেগুলি খেয়ে ফেলা। শুধু কঠিন দন্ডটা খাওয়া যাবে TI
কে খাচ্ছে ব্যাটারি?
আমি খাচ্ছি।
কেন? এটা কি কোনো মেডিসিন?
সানাউল্লাহ বললেন, অবশ্যই মেডিসিন। নানান ধরনের ইলেকট্রলাইট সেখানে থাকে। শরীরের ইলেকট্রলাইট ব্যালেন্সের জন্যে কার্যকর।
হামিদ বললেন, কী কী অসুখে কাজ করে?
বাধর্ক্যজনিত অসুখে।
হামিদ বললেন, ভুলে যাওয়া রোগে কাজে আসবে? ইদানিং সবকিছু ভুলে যাচ্ছি।
সানাউল্লাহ বললেন, খেয়ে দেখতে পারে।
হামিদ বললেন, ডোজ কী? মানে দিনে কয়টা ব্যাটারি খাব?
সানাউল্লাহ বললেন, সাতদিনে একটা করে শুরুতে খেয়ে দেখতে পারেন। A সাইজ ব্যাটরি।
হামিদ বললেন, যা বলার পরিষ্কার করে বলো। অর্ধেক কথা পেটে রেখে দিলে তো বুঝব না। নতুন ব্যাটারি খাব, না-কি চার্জ শেষ হয়ে গেছে এমন ব্যাটারি?
নতুন ব্যাটারি।
হামিদ বললেন, তোমার কাজের ছেলেকে পাঠাও, কিছু ব্যাটারি নিয়ে আসুক। প্রথম ডোজ তোমার সামনেই খাই।
সানাউল্লাহ বললেন, রফিক ব্যাটারি কিনতেই গেছে। একপাতা ব্যাটারি কিনবে। সেখান থেকে আপনি চারটা নিয়ে নেবেন। এক মাসের ওষুধ।
খালিপেটে খেতে হবে?
এরকম কোনো নিয়ম নাই। ভাতের সঙ্গে আচারের মতোও খেতে পারেন।
হামিদ আবার কাগজের দিকে তাকালেন, সেখানে লেখা ডমরু। ডমুরু মানে কী? তিনি নিজে কি লিখতে ভুল করেছেন? ড়ুমুর লিখতে গিয়ে ডমরু লিখেছেন। তারপরেও নিশ্চিত হবার জন্যে বললেন, ড়ুমুর ব্যাপারটা কী?
সানাউল্লাহ বললেন, ড়ুমুর একটা ফল।
তা জানি। ড়ুমুরের ইংরেজিও জানি– Fig. জাবিন ড়ুমুরের বিষয়ে কী জানতে চাচ্ছে বুঝতে পারলাম না। ব্যাটারি খাবার পর ড়ুমুর খেতে হয় এমন কিছু?
সানাউল্লাহ বললেন, খেলে ভালো। না পাওয়া গেলে অন্য ফলও খাওয়া যায়।
ভূতের বাচ্চা বিষয়ে জানতে চেয়েছে। ভূতের বাচ্চার ব্যাপারটা কী?
ভুতের বাচ্চা হচ্ছে অল্পবয়স্ক ভূত। ইংরেজিতে বেবি ঘোস্ট বলা যেতে পারে। ভূতদের মধ্যে যেমন বুড়ো হাবড়া আছে আবার অল্পবয়স্ক ভূতও আছে।
হামিদ বললেন, সেটাই তো স্বাভাবিক। সানাউল্লাহ বললেন, আপনি ভূত বিশ্বাস করেন?
অবশাই করি। ছোটবেলায় তেঁতুল গাছে একটা শাকচুন্নি বসে থাকতে দেখেছি। সে একটা ইতিহাস। এখনো মনে হলে গায়ে কাঁটা দেয়। এই দেখ গায়ে কাঁটা দিয়েছে।
সানাউল্লাহ বললেন, ঘটনাটা বলুন শুনি।
হামিদ বললেন, দাড়াও বলি— ভয়ঙ্কর ব্যাপার। শ্রাবণ মাস। টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছে…
এই বলেই হামিদ থেমে গেলো আর কিছুই তাঁর মনে পড়ছে না। তিনি হতাশ চোখে সানাউল্লাহর দিকে তাকিয়ে বললেন, আর কিছু মনে পড়ছে। তোমাকে বললাম আমার বিস্মরণ রোগ হয়েছে। ব্যাটারি আসুক, খেয়ে দেখি কোনো উপায় হয় কি-না। যে যা খেতে বলছে তাই খাচ্ছি। কোনো উপকার পাচ্ছি না। একজন বলল, ছাগলের লেদা মধু মাখিয়ে চুষে চুষে খেতে। স্মৃতি নষ্টের এটা না-কি ধন্বন্তরী ওষুধ। তাও একবার খেলাম।
উপকার হয়েছিল?
কী উপকার হবে! বমিটমি করে সর্বনাশ। জীবনের উপর বিতৃষ্ণা ধরে গেছে। ভোটার আই ডি করতে গিয়েছি। জিজ্ঞেস করল, স্যার আপনার বাবার নাম? কিছুতেই বাবার নাম মনে করতে পারলাম না। চিন্তা কর অবস্থা। বাবার নাম ভুলে গেছি। স্বীকারও করতে পারছি না।
তখন কী করলেন?
চট করে মাথায় বুদ্ধি এসে গেল। বললাম, বাবার নাম আদম। বাবা আদম আমাদের সবারই বাবা, সেই হিসাবে বললাম, আদম। বুদ্ধি ভালো বের করেছি না?
অবশ্যই।
রফিক একপাতা ব্যাটারি করে এসেছে। সেখান থেকে একটা ব্যাটারির অর্ধেকের কিছু বেশি হামিদ খেয়ে ফেললেন। মুক বিকৃত করে বললেন, অতি অখাদ্য।
সানাউল্লাহ বললেন, অখাদ্য তো হবেই। ওষুধ তো খাদ্য না।
তাও ঠিক। মেড ইন চায়না ব্যাটারি, এই নিয়ে একটু চিন্তা লাগছে। চায়নিজরা দুধের মতো শিশুখাদ্যে বিষাক্ত মেলামিন দিয়েছে। ব্যাটারিতে এরকম কিছু দিয়েছে কি-না কে জানে।
হামিদ এক গ্লাস ঠান্ডা পানি খেয়ে ক্রমাগত ঢেঁকুর তুলতে লাগলেন। বিড়বিড় করে বললেন। ঢেঁকুরের সঙ্গে পিসাবের মতো গন্ধ আসছে।
সানাউল্লাহ বললেন, আপনি অ্যামোনিয়ার গন্ধে পাচ্ছেন। ব্যাটারি থেকে অ্যামোনিয়ার গন্ধ আসে।
বুক ধড়ফড় করছে।
সানাউল্লাহ বললেন, কিছুক্ষণ শুয়ে থাকবেন?
বুঝতে পারছি না। চায়নিজ ব্যাটারি খাওয়াটা ভুল হয়েছে। আমেরিকা বা ইউরোপের ব্যাটারি খাওয়া উচিত ছিল।
হামিদের চখ-মুখ কিছুক্ষণের মধ্যে উজ্জ্বল হয়ে উঠল। কারণ ছেলেবেলায় শাকচুনি দেখার গল্পটা তার পুরোপুরি মনে পড়েছে। ব্যাটারি ওষুধের ক্ষমতায় তিনি মুগ্ধ। তিনি বললেন, চায়নিজ ব্যাটারি হলেও পাওয়ার খারাপ না। শাকচুন্নির ঘটনাটা মনে পড়েছে। বলব?
বলুন শুনি।
শ্রাবণ মাস। টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছে। মাগরেবের নামাজ শেষ হয়েছে। আমি মূল বাড়ি থেকে বাংলাঘরে যাচ্ছি। বাংলাঘরের দক্ষিণে একটা তেঁতুল গাছ। হঠাৎ তাকিয়ে দেখি তেঁতুল গাছের ডালে পা ছড়িয়ে একটা শাকচুন্নি বসে আছে। আমি বললাম, এটা কে? শাকচুন্নিটা বলল, তুই হামিদ না? তুই আমারে চিনস না? তোরে ধইরা একটা আছাড় যদি না দিছি।
বলেই সে দুটা লম্বা হাত আমার দিকে বের করল। আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলাম।
একবারই দেখেছেন, না আরো কয়েকবার দেখেছেন?
আমি একবারই দেখেছি। তবে আমাদের বাড়ির অনেকেই কয়েকবার করে দেখেছে। তেঁতুল গাছ কাটাবার কথা উঠল। তখন মা বললেন, ভিটাতে যেমন বাস্তুসাপ থাকে সেরকম বাস্তুভূতও থাকে। এদের তাড়ানো ঠিক না। সে থাকুক তার মতো। ক্ষতি তো তেমন করছে না। ছোট পুলাপানকে ভয় দেখায় আর টিনের চালে ঢিল মারে। এর বেশি কিছু তো করে না।