রফিক বিপুল উৎসাহে কাজে লেগে পড়েছে। এখন মাছ কুটছে। রফিক বলল, বেগুন ঘরে নাই স্যার। আলু আছে। আলু দিয়া ঝোল করি, আর এক পিস ভাইজা দেই। ঠিক আছে স্যার?
হুঁ।
এখন কি এককাপ চা বানায়া দিব?
দে। আচ্ছা শোন, তুই ভূত বিশ্বাস করিস?
রফিক বলল, ভূত অবশ্যই বিশ্বাস করি। আমি তো বেকুব না যে ভূত বিশ্বাস করব না।
ভূত কখনো দেখেছিস?
আমার বাপজান দেখেছেন। আমরার বাড়ির সামনে একটা তেঁতুল গাছ ছিল। সেই তেঁতুল গাছে পেততুনি থাকত। হের স্বভাব চরিত্র ছিল জঘন্য।
কী করত?
মাইনষের গায়ে ছেপ দিয়া হি হি কইরা হাসত। কাপড়চোপরও ঠিকমতো পরত না। বাপজান অনেক দিন দেখেছে গাছে লেংটা বসা।
পরে তোর বাপজান কি করলেন?
তেঁতুল গাছ কাটায়া ফেললেন। পেততুনি বিদায়।
সানাউল্লাহ বললেন, গাছ কাটার সঙ্গে সঙ্গে চলে গেল?
রফিক বলল, সাথে সাথে যায় নাই। কিছুদিন বাড়ির আশেপাশে ঘুর ঘুর করছে। ঢিল মারছে। তারপর চইল্যা গেছে।
কোথায় গেছে জানিস না?
অন্য কোনো তেঁতুল গাছে গিয়া উঠছে। পেততুনি তেঁতুল গাছ ছাড়া থাকতে পারে না।
সানাউল্লাহ বললেন, ভূতের খাদ্য কী জানিস নাকি?
রফিক বলল, জানি। গজার মাছ পুড়ায়া দিলে আরাম কইরা খায়। কাচা মাছও খায়, তয় টাটকা হইতে হয়। বিলের আশেপাশে এরা মাছের সন্ধানে ঘুরে। স্যার ঘরে গিয়া বসেন চা বানায়া আনতেছি।
শোবার ঘরে ঢুকতেই হমডু বলল, ব্যাটারি খাব।
সানাউল্লাহ অবাক হয়ে দেখেন এরা ব্যাটারি দুটাই খেয়ে ফেলেছে। কার্বনটা পড়ে আছে।
তোরা ব্যাটারি খেয়েছিস?
হুঁ। খুব মজা।
বলিস কী। ভূত ব্যাটারি খায় এটা তো জানতাম না।
হমড়ুর পাশ থেকে চিকন গলায় ডমরু বলল, বাবা। ব্যাটারি খাব।
সানাউল্লাহ চমকে উঠে বললেন, এই মেয়ে আমাকে বাবা ডাকছে না-কি?
হমদু বলল, হুঁ।
সানাউল্লাহ বললেন, বাবা ডাকছে কেন?
হমড়ু বলল, জানি না।
সানাউল্লাহ বললেন, বাবা ডাকার দরকার নাই। স্যার ডাকলেই হবে।
ডমরু বলল, আমি বাবা ডাকব। বাবা ডাকব। বাবা ডাকব।
সানাউল্লাহ হতাশ গলায় বললেন, ঠিক আছে। বাবা ডাকতে চাইলে ডাক অসুবিধা কিছু নাই। ব্যাটারি খেতে চাস কাল কিনে আনব। ব্যাটারি খাওয়া ঠিক হচ্ছে কি-না তাও তো বুঝছি না।
রফিক চা নিয়ে এসেছে। হমডু ফুরুৎ করে খাটের নিচে ঢুকে গেছে। সানাউল্লাহ ঠিক করতে পারলেন না রফিকের সঙ্গে ভূতের বাচ্চা দুটার ব্যাপারে আলাপ করবেন কি না। এক বাড়িতে যেহেতু বাস আলাপ করাই উচিত। তবে তাড়াহুড়ার কিছু নাই। রফিক নিজ থেকে আবিষ্কার করুক সেটাই ভালো হবে।
জাবিনের টেলিফোন এসেছে। জাবিন আদুরে গলায় ডাকল— বাবা!
সানাউল্লাহ বিস্মিত গলায় বললেন, তোর বাবা ডাক আর ডমরুর বাবা ডাক একই রকম। তোদের দুজনের গলায় অদ্ভুত মিল।
জাবিন বলল, ডমরু কে?
সানাউল্লাহ আমতা আমতা করতে লাগলেন। জাবিন তীক্ষ্ণ গলায় বলল, তোমার ঐ ভূতের বাচ্চাটা না-কি?
সানাউল্লাহ বললেন, ঠাট্টা করছি রে মা। ঠাট্টা। মনটা ভালো তো এই জন্যেই ঠাত্রী তামাশা।
মন ভালো কেন?
রফিক চলে এসেছে। কাজকর্ম শুরু করেছে। আলু দিয়ে ইলিশ মাছের ঝোল রান্না করেছে। ইলিশ মাছ সে নিজেই কিনে এনেছে। মিডিয়াম সাইজ।
জাবিন কড়া গলায় বলল, চোরটা ফিরে এসেছে আর তুমি তাকে বহাল করেছ? আবার তো চুরি করবে। এক্ষুনি বিদায় কর। এই মুহূর্তে।
সানাউল্লাহ বললেন, অবশ্যই বিদায় করব। চোর পুষব না-কি? আমি চোর পোষার লোক না।
জাবিন বলল, আমি টেলিফোন ধরে আছি। তুমি ওকে ডাক। বিদায় কর। আমি যেন শুনতে পাই।
এখন তো মা ডাকা যাবে না। তাকে একটা বিশেষ কাজে পাঠিয়েছি। ব্যাটারি কিনতে পাঠিয়েছি। সানাউল্লাহ মিথ্যা বলতে পারেন না তবে মেয়ের সঙ্গে হড়বড় করে মিথ্যা বলছেন। তাঁর নিজেরই অবাক লাগছে।
ব্যাটারি কিনতে পাঠিয়েছ?
হুঁ। দুটা ব্যাটারি ছিল ওরা খেয়ে ফেলেছে।
কারা খেয়ে ফেলেছে। ঠিক করে বলো বাবা। ব্যাটারি কে খেয়েছে? তোমার ঐ ডমরু?
আরে না। ডমরুর কোনো অস্তিত্ব আছে না-কি যে ব্যাটারি খাবে।
তাহলে কে খেয়েছে?
আমিই খেয়েছি। টেস্ট করে দেখলাম।
তুমি ব্যাটারি খেয়েই মানে! তুমি কেন ব্যাটারি খাবে?
সানাউল্লাহ হতাশ গলায় বললেন, ঠাট্টা করছি রে মা। ঠাট্টা। প্লেন এন্ড সিম্পল ঠাট্টা। বিদেশে দীর্ঘদিন থেকে তুই ঠাট্টা তামাশা ভুলে গেছিস এটা দুঃখজনক।
জাবিন বলল, তুমি ঠাট্টা করছ এমন মনে হচ্ছে না। ব্যাটারি নিয়ে কিছু একটা অবশ্যই ঘটেছে। সেটা কী আমি জানতে চাই।
সানাউল্লাহ আয়োজন করে মিথ্যা বলা শুরু করলেন— হয়েছে কি মী। আমি একটা মাছের খেলনা কিনেছি। বোতাম টিপলে মাছটা লেজ নাড়তে নাড়তে আগায়। কোনো কিছুর সঙ্গে ধাক্কা খেলে আবার ফিরে আসে। পোঁ পোঁ শব্দ করে। ঐ খেলনার জন্যে ব্যাটারি কিনতে পাঠিয়েছি।
খেলনা কার জন্যে কিনেছ?
আমার জন্যে।
তুমি মাছের খেলনা দিয়ে খেলবে?
হুঁ মানে? তুমি মাছের খেলনা দিয়ে খেলো?
সানাউল্লাহ বললেন, সব সময় তো খেলি না। ঘুমুতে যাবার আগে কিছুক্ষণ খেলি।
জাবিন বলল, ঠিক আছে বাবা। পরে তোমার সঙ্গে এই বিষয়ে ডিটেল কথা হবে। ঘুমের ওষুধ খেয়ে তুমি ঘুমাও। সকালে হামিদ আঙ্কেল যেন তোমার সঙ্গে দেখা করে সেই ব্যবস্থা করছি।
সানাউল্লাহ বললেন, খামাখা উনাকে যন্ত্রণা দেবার আমি তো কোনো প্রয়োজন দেখি না।
তুমি প্রয়োজন দেখ না, আমি দেখি। সামথিং ইজ ভেরি রং উইথ ইউ।