আইনুদ্দিন বললেন, এই বিষয়ে চিন্তা করি নি।
সানাউল্লাহ বললেন, ছোটবেলায় শুনেছি রাতে মিষ্টির দোকানে জিনরা উপস্থিত হয়। সব মিষ্টি খেয়ে শেষ করে। এটা কি সম্ভব?
আইনুদ্দিন বললেন, কোনো প্রাণী যদি খাদ্য গ্রহণ করে তাহলে অবশ্যই তাকে খাদ্যের বর্জ বের করে দিতে হবে। জিন মিষ্টি খেলে তাকে হাগু করতে হবে। কেউ কখনো জিনের গু দেখেছে? যেহেতু দেখে নাই সেহেতু জিন মিষ্টি খায় না। একে বলে ডিডাকটিভ লজিক।
সানাউল্লাহ বললেন, তোমার কথায় যুক্তি আছে। যাই হোক, তুমি কি ভূতপ্রেত বিষয়ক কিছু তথ্য আমাকে যোগাড় করে দিতে পারবে?
কী করবে?
সানাউল্লাহ বললেন, রিটায়ারমেন্টে চলে গেছি। কাজকর্ম নাই তো, সময় কাটানো।
সায়েন্সের কিছু সহজ বই দিয়ে দেই। পড়ে সময় কাটাও। ক্যালকুলাসের ইতিহাস বইটা দেব? ক্ষুদ্র সংখ্যার বিজ্ঞান। অসাধারণ জিনিস।
সানাউল্লাহ অনাগ্রহের সঙ্গে বললেন, দাও। আরেকটা কথা জিজ্ঞেস করতে ভুলে গেছি। গুন্ডা প্রকৃতির কোনো ছাত্র কি তোমার আছে? মারামারিতে বিশেষ পারদর্শী এরকম কেউ?
কেন?
একজনকে সবার সামনে চড়-থাপ্পর দেয়া প্রয়োজন।
আইনুদ্দিন বিরক্ত গলায় বললেন, তোমার কাছ থেকে এই ধরনের কথা শুনব কল্পনাও করি নি। আমি আমার ছাত্র ব্যবহার করব গুন্ডামির জন্যে? আমি কি পলিটিক্যাল লিডার। সরি বলো।
সানাউল্লাহ বললেন, সরি।
আইনুদ্দিন তার ব্যক্তিগত লাইব্রেরি ঘেঁটে ক্যালকুলাসের ইতিহাস বইটা বের করলেন।
সানাউল্লাহ ক্যালকুলাসের ইতিহাস বই নিয়ে বাড়ি ফিরলেন। আইনুদ্দিনের স্ত্রীকে আনার জন্যে তার যাবার কথা ছিল। আইনুদ্দিন কিছুতেই শ্বশুরবাড়ির ঠিকানা বা টেলিফোন নাম্বার মনে করতে পারলেন না। কাজেই স্ত্রী ফেরত আনার প্রজেক্ট বাতিল হয়ে গেল।
খাটের নিচে হমডু বসা
খাটের নিচে হমডু বসা। তার হাতে আমিষ আচারের কৌটা। সে কৌটায় চামচ ড়ুবিয়ে দ্রুত খাচ্ছে। খাবার দৃশ্যটা দেখছেন সানাউল্লাহ। তিনি মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসেছেন।
হমডু! তোর খবর কী?
ভালো।
তোর বোনের খবর কী? ডমরু। তার জ্বর কমেছে?
হুঁ।
আচারটা খেতে কেমন?
ভালো।
এর নাম আমিষ আচার। ভিটামিন বি কমপ্লেক্স সমৃদ্ধ। পুরো বোতল একা খেয়ে ফেলেছিস! পেট নেমে যাবে তো। হেগে বাড়ি নষ্ট করবি।
হমডু জবাব দিল না। হেগে বাড়ি নষ্টের ব্যাপারটা মনে হয় সে বুঝতে পারে নি। হয়তো ওদের মধ্যে ঐ সিস্টেমই নেই।
তোর জন্যে শার্ট প্যান্ট এনেছি, দেখেছিস?
হুঁ।
তোর বোনের সাইজ জানি না। তাপরেও একটা ফ্রক অনলাম। ফিটিং হবে কি-না কে জানে।
হমডু বলল, হবে।
দুই ভাইবোন মিলে জামা কাপড় পর। দেখি কী অবস্থা।
হমড়ু বলল, জুতা আনেন নাই?
সানাউল্লাহ বললেন, তোর জন্যে রবারের জুতা এনেছি। ডমরুর পায়ের মাপ জানি না তারটা আনা হয় নি। পায়ের মাপ দিয়ে দিস নিয়ে আসব। তোরা এখন খাটের নিচ থেকে বের হ। আমি তোষক পেতে দেই। তোষকে আরাম করে ঘুমাবি। শিমুল তুলার তোষক। মাখনের মতো মোলায়েম।
সানাউল্লাহ তোষক পাতলেন। তোষকের ওপর চাদর বিছালেন। দুটা ছোট বালিশ এবং একটা কোলবালিশ কিনেছিলেন, সেগুলি সাজাতে সাজাতে বললেন, তোদের কি পানি খাবার অভ্যাস আছে? পানির গ্লাস জগ রাখব?
হমড়ু বলল, না। মধু রেখে দিন।
খেলনা কিনেছি। খেলনা দিয়ে খেলবি?
খেলব।
ব্যাটারি অপারেটেড খেলনা। বোতাম টিপবি খেলনা চলবে! বোতাম টিপতে পারিস?
না।
এই তো আরেক যন্ত্রণা। ঠিক আছে, সব সমস্যার সমাধান আমার কাছে আছে। যখন খেলতে ইচ্ছা করবে আমাকে বলবি আমি বোতাম টিপে দেব। চলবে না।
চলবে।
প্রথম কোনটা দিয়ে খেলতে চাস? মাছটা ছাড়ব? বোতাম টিপলেই মাছ লেজ নাড়তে নাড়তে তোর দিকে যাবে। ছাড়ব?
আচ্ছা।
বোতাম টিপে মাছ ছাড়তেই এক কাণ্ড হলো। হমডু ভয়ে চেঁচিয়ে উঠল। ডমরুও চেঁচাতে লাগল। সানাউল্লাহ প্রথমবারের মতো ডমরুর গলা শুনলেন। তিনি তাড়াতাড়ি মাছ আটকালেন? ভূতের বাচ্চারা যে সামান্য মাছ দেখে এতটা ভয় পাবে তিনি ভাবেন নি। ভাইবোন দুজনই কাঁদছে। ভাইটাকে দেখা যাচ্ছে। বোনকে দেখা যাচ্ছে না। তার কান্নার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।
সানাউল্লাহ বললেন, ভয় নাই। আর ভয় নাই। এই দেখ ব্যাটারি খুলে ফেললাম। এখন খুশি?
হমডু হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়তে নাড়তে চোখ মুছল। সে ব্যাটারি ছুঁয়ে দেখল। সানাউল্লাহ বললেন, এই দুটা হলো ব্যাটারি। এখান থেকে কারেন্ট তৈরি হয়। কারেন্ট খেলনা চলে। তুই একটা হাতে নে। বোনের হাতে একটা দে। ভয় কাটুক।
কলিংবেল বাজছে। সানাউল্লাহ উঠে দাঁড়ালেন। তাঁর বাসায় কেউ আসে না। কে এসেছে বুঝতে পারছেন না। রাত আটটা বাজে তাঁকে হোটেলে খেতে যেতে হবে।
দরজা খুলে তিনি হতভম্ব। রফিক দাঁড়িয়ে আছে। তার হাতে একটা ইলিশ মাছ। রফিককে কী বলবেন বুঝতে পারছে না। কঠিন ধমক দেয়া উচিত। চুরি করে ভেগেছে এখন ইলিশ মাছ নিয়ে উপস্থিত। বদের বাচ্চা। সানাউল্লাহ ধমক দেবার প্রস্তুতি নিলেন। কয়েকবার খাকাড়ি দিয়ে গলা পরিষ্কার করলেন। যখন ধমক দিতে যাবেন তখন রফিক বলল, স্যার কেমন আছেন?
তিনি বললেন, ভালো।
রাতে খাওয়াদাওয়া হয়েছে?
না।
খান কই? হোটেলে?
হুঁ।
ইলিশ মাছ নিয়া আসছি। বেগুন দিয়ে বাঁধি। স্যার, ঘরে কি বেগুন আছে? জানি না। খুঁজে দেখ।
রফিক রান্নাঘরে ঢুকে গেল। সানাউল্লাহ ধমক জমা করে রাখলেন। সুবিধামতো সময়ে ধমক দিলেই হবে। তাড়াহুড়ার কিছু নাই। রাতে তাকে আজ হোটেলে খেতে যেতে হবে না। এই আনন্দেই তিনি অস্থির। আনন্দের সময় ধমক আসতে চায় না। তবে এর মধ্যে রফিক যদি নিজ থেকে ক্ষমা চেয়ে ফেলে তাহলে ভিন্ন কথা। ক্ষমা চাওয়ার পরে অপরাধ থাকে না। তিনি রান্নাঘরে ঢুকলেন।