লাইব্রেরিয়াম অবাক হয়ে বললেন, ভূতের খাদ্য বিষয়ক বই চাচ্ছেন?
সানাউল্লাহ বললেন, জি। আমরা মানুষরা মূলত তিন ধরনের খাদ্য গ্রহণ করি আমিষ, শর্করা, স্নেহ। ভূতদের কী অবস্থা। আমার বাসায় দুটা ভূতের বাচ্চা আছে। ওদের কী খাওয়া বুঝতে পারছি না। সমস্যায় আছি।
আপনার বাসায় দুটা ভূতের বাচ্চা?
জি। ভাইবোন।
ও আচ্ছা।
ভাইটা বড়! নাম হমডু। ওদের পুষ্টিকর খাবার কী দেয়া যায় তাই নিয়ে চিন্তিত।
লাইব্রেরিয়ান বললেন, স্যার, আপনি বরং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুষ্টি বিজ্ঞানে চলে যান। তারা হয়তো বলতে পারবে।
সানাউল্লাহ বললেন, পুষ্টি বিজ্ঞানে যাবার ইচ্ছা আছে। তবে তারা আমাকে পাগল ভাবে কি-না কে জানে।
পাগল ভাবার সম্ভাবনা আছে। স্যার, চা খাবেন? একটু চা খান। এখানে ভালো সিঙ্গারা পাওয়া যায়। সিঙ্গারা আনিয়ে দেই।
সানাউল্লাহ লাইব্রেরিয়ানের ভুদ্রতায় মুগ্ধ হলেন। চা-সিঙ্গারা খেতে রাজি হলেন। এবং ভদ্রতার কারণেই তার দোকান থেকে একটা বই কিনলেন। ভূতের বই। নাম মধ্যরাতের হাসি! লাইব্রেরিয়ান বললেন, স্যার আমার নাম কাদের। এদিকে যখন আসবেন অবশ্যই আমার দোকানে আসবেন। চা-সিঙ্গারা খেয়ে যাবেন। আপনার বাসায় গিয়ে ভূতের বাচ্চা দেখারও শখ আছে। যদি অনুমতি দেন।
সানাউল্লাহ বললেন, এখন ওদেরকে লুকিয়ে রেখেছি। জানাজানি হলে লোকজন হামলে পড়বে। পত্রিকাওয়ালা, টিভি চ্যানেল। জীবন অস্থির করে ফেলবে।
ঠিক বলেছেন স্যার।
নিউ মার্কেট থেকে সানাউল্লাহ কিছু কেনাকাটা করলেন। হমডুর জন্যে লাল শার্ট, খাকি হাফপ্যান্ট। একজোড়া রাবারের নরম জুতা। ডমরুর জন্যে কিছু কেনা হলো না। তাকে তিনি এখনো চোখে দেখেন নি, তার সাইজ কী তাও জানেন না। কিছু খেলনা কিনলেন। ব্যাটারিতে চলে এমন গাড়ি। একটা মাছ, বোতাম টিপলেই লেজ নেড়ে এগুতে থাকে, পোঁ পোঁ শব্দ করে। বড় একটা গাঢ় হলুদ রঙের বল কিনলেন। ভূতের বাচ্চারা এইসব খেলনা পছন্দ করে কি-না তিনি জানেন না। তারপরেও কেনা থাকল। শিশু হচ্ছে শিশু। ভূতশিশু মানবশিশু আলাদা কিছু না বলেই তার ধারণা। এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কারো সঙ্গে কথা বলতে পারলে ভালো হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাপ্লায়েড ফিজিক্সে তার এক বন্ধু আছেন। প্রফেসর। নাম ড. আইনুদ্দিন। তার সঙ্গে আলোচনা করা যায়।
ড. আইনুদ্দিন সিরিয়াস ধরনের মানুষ। যে-কোনো বিষয় নিয়ে সিরিয়াস কথাবার্তা বলতে পছন্দ করেন। ছাত্রমহলে তিনি গাইনুদ্দিন নামে পরিচিত। গাই নামক নিরীহ প্রাণী যেমন সারাদিন জাবর কাটে গাইনুদ্দিনও নাকি তাই করেন। বিজ্ঞানের জাবর কাটেন।
সানাউল্লাহ নিজের বাসায় না ফিরে আইনুদ্দিনের ফুলার রোডের বাসার দিকে রওনা হলেন। দুপুরের খাওয়া তার ওখানেই সারবেন। খেতে খেতে ভূত বিষয়ক আলোচনা করবেন। তাকে বাসায় না পাওয়া গেলেও সমস্যা নেই। আইনুদ্দিনের কাজের ছেলে রহমত তাকে ভালোই চেনে। আইনুদ্দিন এবং তার স্ত্রী রুবার ঝগড়া মিটমাট করার জন্যে তাকে অনেকবার এ বাড়িতে আসতে হয়েছে। তাদের ঝগড়া ধারাবাহিক নাটকের মতো হয়ে যাচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে দুবার করে হচ্ছে। দুজনের বয়সের বিরাট ব্যবধান একটা কারণ হতে পারে।
আইনুদ্দিন বাসায় ছিলেন। সানাউল্লাহকে দেখে তিনি অতি বিরক্ত গলায় বললেন, তোমার সমস্যা কী? আইনুদ্দিনের এই বাক্য মুদ্রাদোষের মতো। যেকোনো মানুষের সঙ্গে দেখা হলেই তিনি বিরক্ত মুখে জিজ্ঞেস করেন, সমস্যা কী?
সানাউল্লাহ বললেন, ভাবি বাসায় নেই?
না।
আবার ঝগড়া?
আইনুদ্দিন বললেন, ঝগড়া টগড়া কিছু না। ইদানিং লক্ষ করছি আমি যা-ই বলি সে বিরক্ত হয়। গতকাল রাতে ঘুমাতে যাবার সময় আমি তাকে বললাম, Photo electric eftect-এর জন্যে আইনস্টাইনকে নোবেল পুরস্কার দেয়া তাকে অপমান করার মতোই। রুবাকে বুঝানোর জন্যে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে একটা তুলনামূলক আলোচনায় গেলাম। তাকে বললাম রবীন্দ্রনাথকে যদি তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে উঁকি মারে আকাশে শুধুমাত্র এই কবিতাটার জন্যে নোবেল পুরস্কার দেয়া হতো তাকে অপমান করা হতো। কথা শেষ করার আগেই তোমার ভাবি বিছানা থেকে নামতে নামতে বলল, বিদায়। আমি বললাম, বিদায় মানে কী? কাকে বিদায় বলছ? আইনস্টাইনকে না বরীন্দ্রনাথকে? তোমার ভাবি কোনো জবাব না দিয়ে পাশের ঘরে দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়ল। সকালে উঠে দেখি চলে গেছে। টেলিফোন করি টেলিফোন ধরে না। তুমি এসেছ ভালো হয়েছে। তুমি আমার শ্বশুরবাড়িতে যাবে। তোমার ভাবির সঙ্গে কথাবার্তা বলে তাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে নিয়ে আসবে।
সানাউল্লাহ বললেন, অবশ্যই নিয়ে আসব। দুপুরে তোমার এখানে খাব। রান্নাবান্না কি হয়েছে?
জানি না। রহমতকে জিজ্ঞেস কর। বাজারের টাকা নিতে এসেছিল, ধমক দিয়ে বিদায় করেছি। মনে হয় না সে কিছু বেঁধেছে।
রহমত রান্না করেছে। ভাত ডাল এবং শুকনা মরিচের ভর্তা। খাবার টেবিলে সানাউল্লাহ ভূত বিষয়ক আলাপ তুললেন।
তোমাদের সায়েন্স কী বলে? ভুত বলে কিছু আছে?
আইনুদ্দিন বললেন, সায়েন্স এই বিষয়ে কিছু বলে না। সায়েন্স হচ্ছে পরীক্ষা নির্ভর শাস্ত্র। ভূত বিষয়ে কোনো পরীক্ষা হয় নি।
হয় নি কেন?
প্রয়োজন হয় নি বলে পরীক্ষা হয় নি।
সানাউল্লাহ বললেন, তোমার কি মনে হয়? ভূতের অস্তিত্বের কোনো সম্ভাবনা কি আছে?