সানাউল্লাহ মুগ্ধ হয়ে বললেন, দেখি আরেক চামচ। তিনি দুপুরের মধ্যে বোতল অর্ধেক নামিয়ে ফেললেন।
আবু করিম বললেন, আজ আমার মনটা বিশেষ খারাপ। তোমার আচার খাওয়া দেখে মন খারাপ ভাব সামান্য কমেছে।
মন খারাপ কেন?
আমার চোর অ্যাসিসটেন্টকে তোমার ভাবি তার চেম্বারে চাকরি দিয়েছে।
কাজটা ঠিক হয় নি।
গুন্ডা প্রকৃতির কারো সঙ্গে তোমার পরিচয় আছে?
আছে। আমার খালাতো ভাই হামিদুর রহমান ওয়ার্ড কমিশনার।
তাকে দিয়ে আমার চোর অ্যাসিসটেন্টকে পাবলিকলি কানে ধরে উঠবোস করাতে পারবে? তোমার ভাবির সামনে করালে ভালো হয়।
সানাউল্লাহ বললেন, তার ঠিকানা জানি না। দেখি যোগাযোগ করতে পারি কি-না।
আবু করিম আমিষ আচারের সাফল্যে মুগ্ধ হলেন। সানাউল্লাহ বললেন, জাবিন কাল রাতে আমাকে বিশেষভাবে বলেছে থরো চেকআপ করতে।
আবু করিম বললেন, এখনই করছি, প্রেসার-সুগার সব মেপে দিচ্ছি।
সানাউল্লাহ বললেন, জ্বরের একটা ওষুধ দিও তো।
আবু করিম বললেন, তোমার জ্বর?
আমার না। ডমরুর জ্বর।
ডমরু কে?
সানাউল্লাহ বললেন, ডমরু হলো হমডুর ছোটবোন।
বয়স?
ঠিক বয়স বলতে পারব না। শিশু।
আবু করিম বললেন, শিশুদের আমি জ্বরের জন্যে এনালজেসিক দেবার পক্ষপাতি না। গা স্পঞ্জ করে জ্বর কমানোর ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে কোল্ড শাওয়ার।
সানাউল্লাহ বললেন, তোমার এই আমিষ আচার শিশুরা কি খতে পারবে?
এখনো টেস্ট করা হয় নাই। তবে ঝাল বেশি, এটা একটা সমস্যা। শিশুদের জন্যে আলাদা একটা মিষ্টি ভার্সান করার পরিকল্পনা আছে। বাজারে অনেক কাচামরিচ পাওয়া যায় ঝালের বংশও নাই। তার নির্যাস ব্যবহার করা হবে। সঙ্গে মধু দেয়া হবে। মধুর Fructose শিশুরা পছন্দ করবে। চেটে চেটে খাবে।
সানাউল্লাহ হঠাৎ করে বললেন, তুমি কি ভূত বিশ্বাস কর?
আবু করিম ভুরু কুঁচকে বললেন, ভূতের কথা এল কী জন্যে?
এম্নি জিজ্ঞেস করলাম।
ভূত-ফুত বিশ্বাস করি না। ভূত হচ্ছে দুর্বল মস্তিষ্কের মানুষের কল্পনা।
সানাউল্লাহ বললেন, ঠিক বলেছ।
আবু করিম বললেন, ভূত প্রেত প্রসঙ্গ আমার সামনে তুলবে না। অযথা সময় নষ্ট।
সানাউল্লাহ বলল, অবশ্যই।
তুমি আচারের বোতলটা নিয়ে যাও। ভাতের সঙ্গে খেয়ে দেখ কী অবস্থা।
সানাউল্লাহ বন্ধুর কাছ থেকে আমিষ আচারের বোতল নিয়ে বাসায় ফিরলেন। জাবিন প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই টেলিফোন করল। উদ্বিগ্ন গলায় বলল, বাবা, ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলে?
হ্যাঁ।
ডাক্তার কী বললেন?
বললেন সব ঠিক আছে। ব্লাড় কলোস্টরেল টেস্ট করতে বলেছেন। কাল পরশু করিয়ে ফেলব।
হমডু ডমরুর বিষয়টা বলেছ?
বলেছি। ডমরুর জ্বরের কথা বললাম। উনি কোনো ওষুধ দিতে রাজি হন নি। তবে ওদের জন্যে এক বোতল আচার দিয়ে দিয়েছেন।
কী বললে, এক বোতল আচার দিয়ে দিয়েছেন?
হ্যাঁ। আমিষ আচার। ভিটামিন বি কমপ্লেক্স সমৃদ্ধ।
বাবা, তুমি অবশ্যই ঘন ঘন করিম চাচার বাসায় যাবে না। এত বড় একজন ডাক্তার হয়ে যিনি শুধু আচার বানান তার মাথায় সমস্যা আচ্ছে।
সানাউল্লাহ হতাশ গলায় বলেন, শুধু আচার তো বা বানায় না। রান্না করেন। নতুন নতুন রেসিপি আবিষ্কার করেন। তাঁর আবিষার তিতা করলা দিয়ে গরুর মাংস অসাধারণ জিনিস। একবার যে এই জিনিস খাবে তার মুখে অন্য কিছু রুচবে না।
জাবিন বলল, করিম চাচাপ্রসঙ্গে কথা বলতে আর ভালো লাগছে না। বাবা শোন, তুমি তোমার ভূতের বাচ্চাকে টেলিফোন দাও। আমি কথা বলব।
এখন তো দেয়া যাবে না।
কেন দেয়া যাবে না? তারা তোমার সঙ্গে কথা বলতে পারলে আমার সঙ্গেও কথা বলতে পারবে।
ওরা ঘুমাচ্ছে। এরা দিনমায় রাতে জেগে থাকে।
বাবা শোন, তোমার কথাবার্তা আমার কাছে খুবই এলোমেলো মনে হচ্ছে। আমি এক মাসের মধ্যে ঢাকায় এসে তোমার ব্যবস্থা করছি।
কাবেই এলোমেলো মনে হচ্ছে আমিএকমাসের মধ্যে ঢাকায় এসে তোমার ব্যবস্থা করছি।
সানাউল্লাহ আনন্দিত গলায় বললেন, মা চলে আয়। অনেকদিন তোকে দেখি না। কবে আসবি তারিখটা বল, আমি এয়ারপোর্টে থাকব।
জাবিন বলল, আমাকে একটা সত্যি কথা বলো তো বাবা। তুমি ঢাকায় আমাকে আনার জন্যে ভূতের গল্প ফেঁদেছ। তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে এই মনে করে আমি ছুটে যেন চলে আসি। ঠিক বলছি না বাবা?
সানাউল্লাহ চুপ করে রইলেন।
জাবিন বলল, দেখছ আমার কত বুদ্ধি। আমাকে আনার জন্যে ভূতের গল্প ফাঁদার প্রয়োজন নেই বাবা। তোমার জামাই ছুটি পাচ্ছে না বলে আসতে পারছি না। ছুটি পেলেই চলে আসব। আমাকে আর ভূত-প্রেতের গল্প বলবে না। বাবা, ঠিক আছে?
হ্যাঁ ঠিক আছে।
বাবা, টেলিফোন রাখি?
আচ্ছা।
টেলিফোন রেখে সানাউল্লাহ ঘর তালাবন্ধ করে বের হলেন। কয়েকটা জিনিস কেনা দরকার।
হমডু ডমরুর জন্যে নরম পোশাক। কয়েক কৌটা মধু। বিভিন্ন রকমের ফলের জুসও কেনা যেতে পারে। মধু যেহেতু খায় ফলের রসও খাবার সম্বাবনা। নিউ মার্কেতে বইয়ের দোকানে যাওয়া দরকার। ভূত বিষয়ে বইপত্র যদি পাওয়া যায়।
ভূত-প্রেত বিষয়ক অনেক বই পাওয়া গেল। সবই গল্প উপন্যাস। যেমন— রাক্ষস খোক্কস। রক্তহিম ভূতের গল্প। বাঁশগাছের পেত্নী। সানাউল্লাহর দরকার শিক্ষামূলক বই, এইসব না। তিনি লাইব্রেরিয়ানকে বললেন, এর বাইরে কিছু
আছে?
লাইব্রেরিয়ান বললেন, এর বাইরে বলতে কী বুঝাচ্ছেন?
শিক্ষামূলক বই। যেমন, ভূতের খাদ্য। বা ভূতদের সামাজিক বিন্যাস। আমার আসলে প্রয়োজন ভূতদের খাদ্য বিষয়ক বই।