অনেক দূর?
হুঁ। মেয়ে ডাক্তারি করে, আর মেয়ের জামাই একটা ইনজিনিয়ারিং ফার্মে কাজ করে।
হমডু বলল, ওদের ছেলেমেয়ে নেই?
সানাউল্লাহ বললেন, জাবিন পড়াশোনা করছে তো এইজন্যে বাচ্চা নিচ্ছে না। পড়াশোনা শেষ করেই বাচ্চা নিবে। তখন আমিও চলে যাব। শেষ বয়সে নাতীনাতনীর সঙ্গে থাকা খুবই আনন্দের। জাবিন চেষ্টা করছে আমার যেন ইমিগ্রেশন হয়। কাগজপত্র জমা দিয়েছে।
হমডু বলল, ইমিগ্রেশন কী?
সানাউল্লাহ বললেন, অন্যদেশে থাকার অনুমতি। তোদের তো এই সমস্যা নেই। যখন যেখানে ইচ্ছা চলে যেতে পারিস, তাই না?
হমডু বলল, হুঁ।
সানাউল্লাহ ধমক দিয়ে বললেন, হুঁ কী? বল, জি।
হমডু বলল, জি।
সানাউল্লাহর ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসতে শুরু করেছে। তিনি পানির গ্লাস শেষ করে বালিশে মাথা ছোঁয়াতেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলেন। খাটের নিচে চুকচুক শব্দ হচ্ছে। শব্দটাও শুনতে ভালো লাগছে।
ডা. আবু করিম
ডা. আবু করিম ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিনের প্রাক্তন শিক্ষক। ছাত্রজীবনে তিনি গোল্ড মেডেল পেয়েছেন। চিকিৎসক কিংবা অধ্যাপক কোনোটাতেই তেমন সুবিধা করতে পারেন নি। তাঁর অনেক ছাত্র তাকে ডিঙিয়ে ফুল প্রফেসর হয়েছে। তিনি হতে পারেন নি। প্রাইভেট প্রাকটিস করতে গিয়েছেন, সেখানেও কিছু হয় নি। ডাক্তারদের চেম্বার থাকে রোগীতে ভর্তি। কয়েকজন অ্যাসিসটেন্ট রোগী সামলাতে হিমশিম খায়। তাঁর চেম্বার খালি। মাছিও উড়ে না। কারণ তার চেম্বার অতি পরিচ্ছন্ন চেম্বার। মাছিরা পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করে না।
ভালো বেতন দিয়ে তিনি একজন অ্যাসিসটেন্ট রেখেছিলেন। নাম্বার দেয়া প্লাস্টিকের কার্ডের ব্যবস্থা করেছিলেন। ওয়েটিং রুমে ৪২ ইঞ্চি ফ্ল্যাট স্ক্রিন টিভি রেখেছিলেন। রোগীর নাম্বার ফ্ল্যাট স্ক্রিনে উঠবে তখন রোগী ঢুকবে। তার আগে না। প্লাস্টিক নাম্বার কার্ডে তিনি অনেক বুদ্ধি খাটিয়ে কিছু নির্দেশও লিখেছিলেন। নমুনা—
রোগী নাম্বার ১৪
ক) TV screen-এ নাম্বার না দেখা পর্যন্ত শান্ত হয়ে অপেক্ষা করুন।
খ) আপনার রোগ নিয়ে পাশের রোগীর সঙ্গে আলাপ আলোচনা থেকে বিরত থাকুন।
গ) পেছনের নাম্বার আগে আনার তদবির করবেন না।
ঘ) মোবাইল টেলিফোনে উচ্চস্বরে আলাপ করবেন না।
ঙ) আপনাদের সময় কাটানোর জন্যে অনেক ম্যাগাজিন রাখা আছে। ম্যাগাজিন পড়ুন। তবে দয়া করে বাড়িতে নিয়ে যাবেন না।
আবু করিমের অ্যাসিসটেন্ট তিন মাস কাজ করার পর অর্থাৎ তিন মাস চুপচাপ বসে থাকার পর এক সন্ধ্যায় চারটা থার্মোমিটার, প্রেসার মাপার যন্ত্র, কান দেখার যন্ত্র এবং পাঁচটা ওরস্যালাইনের প্যাকেট নিয়ে ভেগে চলে গেল। ডা. আবু করিম চেম্বার উঠিয়ে দিলেন।
এখন তিনি একা থাকেন। তার স্ত্রী (তিনিও ডাক্তারী শায়লা আলাদা থাকেন। তিনি বলেন, অর্ধ উন্মাদের সঙ্গে বাস করা সম্ভব না। ডাক্তার হিসেবে শায়লা অত্যন্ত সফল। তার চেম্বার সব সময় রোগীতে ভর্তি থাকে।
ডা. আবু করিমের এখন সময় কাটে টিভিতে রান্নার অনুষ্ঠান দেখে দেখে বিভিন্ন খাবার তৈরিতে। তিনি আচার বানানোতেও বিশেষ পারদর্শীতা লাভ করেছেন। তাঁর নিজস্ব উদ্ভাবন নিম পাতার তিক্ত আচার। জাতীয় আচার প্রতিযোগিতায় তাঁর তৈরি নিম পাতার তিক্ত আচার পঞ্চম পুরস্কার পেয়েছে। সাজিনা গাছের ছালের আচার পেয়েছে অনারেবল মেনশান। বাণিজ্যিকভাবে তিনি এই দুই ধরনের আচার তৈরির বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন।
ডা. আবু করিমের একমাত্র বন্ধু সানাউল্লাহ। আবু করিম রোগী দেখা ছেড়ে দিয়েছেন, তবে সানাউল্লাহর ব্যাপারে অন্য কথা। সানাউল্লাহ শুধু যে তার রোগী তা-না, আচার টেস্টার। বন্ধুর আচার প্রতিভায় সানাউল্লাহ মুগ্ধ।
সকাল দশটার আগে কাউকে দেখতেই আবু করিম খুশি হন না। আজ সানাউল্লাহকে দেখে অতিব আনন্দ পেলেন। গত সাতদিনের চেষ্টায় নতুন একটি আচার তৈরি হয়েছে। আমার জগতের বিপ্লব বলা যেতে পারে। কারণ এই আচারের নাম আমিষ আচার। গরুর মাংসের নির্যাসের সঙ্গে কাচামরিচ, শুকনা মরিচ এবং নাগা মরিচের নির্যাস প্রথমে মেশানো হয়েছে। টকভাব আনার জন্যে দেয়া হয়েছে অ্যাসিটিক অ্যাসিড। জেলিভাব আনার জন্যে তার সঙ্গে মিশানো হয়েছে Agar Agar, প্রতিটি আচারের বোতলে একটি করে বিশ মিলিগ্রামের ভিটামিন B কমপ্লেক্স মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। পুষ্টিমান ঠিক রাখার ব্যবস্থা।
সানাউল্লাহ চায়ের চামচে এক চামচ আমিষ আচার খেয়ে কিছুক্ষণ ঝিম ধরে থেকে বললেন, জিনিসটা মনে হচ্ছে বিষাক্ত।
আবু করিম বিরক্ত হয়ে বললেন, বিষাক্ত হবে কোন দুঃখে? তুমি চামচ ভর্তি করে সিরাপের মতো করে খাচ্ছ বলে এরকম লাগছে। চেটে চেটে খাও।
সানাউল্লাহ তাই করলেন এবং বললেন, মন্দ না।
আবু করিম বললেন, মন্দ না শব্দটা আমার সামনে দ্বিতীয়বার উচ্চারণ করবে। মন্দ না হচ্ছে একটা নন কমিটেল টার্ম। লাইফে কমিট করতে হয়। বলবে মন্দ অথবা ভালো। মন্দ না কখনোই না।
সানাউল্লাহ বললেন, ভালো, তবে একটু ইয়ে।
ইয়ে মানে? স্পষ্ট করে বলো।
স্পষ্ট করে বলতে পারছি না। আরেক চামচ খেয়ে দেখি।
যত ইচ্ছা খাও। অতি উপকারী আচার। প্রোটিনের বিল্ডিং ব্লক অ্যামিনো অ্যাসিডে ভর্তি। এর সঙ্গে হয়েছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। আগার আগার দেয়াতে কোষ্টকাঠিন্যও কাজ করবে। নাগা মরিচ এবং কাচামরিচের রস ব্লান্ড থিনারের কাজ করবে, থ্রম্বোসিস হবে না।