ঢাকায় আবার কী কাজকর্ম?
জাবিন বলল, তুমি ভুলে গেলে! তোমার জমিটা ডেভেলপারকে দিতে হবে? ওদের সঙ্গে চুক্তি করতে হবে না?
সানাউল্লাহ বললেন, তাই তো। তাই ভো। ভুলে গিয়েছিলাম।
তুমি আছ কেমন বাবা?
আমি ভালো আছি। হমড়ু ডমরু ভালো আছে। হমডু গতকাল বৃষ্টিতে ভিজছে বলে ক্রমাগত হাঁচি দিচ্ছে। এমন অবাধ্য হয়েছে। বললাম বৃষ্টিতে ভিজবি না।
আবার হমডু-ডমরু?
আচ্ছা থাক হমডু-ডমরুর কথা। আর কিছু জানতে চাস?
আবু করিম চাচার শরীরের অবস্থা কেমন?
খুবই ভালো।
হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন?
যেভাবে ছাড়া পাবার কথা সেভাবে ছাড়া পায় নি। আমি আর তোর হামিদ আংকেল আমরা ধমকাধমকি দিয়ে তাকে হাসপাতাল থেকে বের করে নিয়ে এসেছি।
কী বলছ এসব?
সানাউল্লাহ বললেন, পুলিশ তোর হামিদ আংকেলকে অ্যারেস্ট করে নিয়ে গেছে। এই নিয়ে সামান্য ঝামেলা হয়েছে। তোর হামিদ আংকেল অ্যারেস্টের সময় বিএনপির পক্ষে একটা জ্বালাময়ী ভাষণ দিয়েছেন। তিনি ভুলে গেছেন যে এখন তিনি আওয়ামী লীগের। অ্যারেস্টের সময় সাংবাদিকরা ছিল তো। সব পত্রিকায় ছবিসহ ছাপা হয়েছে। আওয়ামী নেতারা অত্যন্ত বিরক্ত হয়েছেন। তারা। এক বিবৃতিতে বলেছেন, এটা বিএনপির একধরনের কারসাজি। তারা হামিদকে আওয়ামী লীগের কর্মী বলে প্রচার করতে চাচ্ছে, আসলে তিনি কখনো আওয়ামী লীগে ছিলেন না।
অদ্ভুত অদ্ভুত সব কথা বলছ বাবা।
সানাউল্লাহ বললেন, অদ্ভুত কথা কিছু বলছি নারে মা। পুলিশ আমাকেও খুঁজছে।
কী বলছ তুমি?
তোর হামিদ আংকেলের সঙ্গে আমিও তো ছিলাম। তবে তোর চিন্তার কিছু নাই। পুলিশ আমাকে খুঁজে পাচ্ছে না। আমি পলাতক।
কোথায় পালিয়ে আছ?
সেটা তো মা তোকে বলা যাবে না। শেষে পুলিশের চাপে তুই বলে ফেলবি। রিমান্ডে নিয়ে গেলে কথা বলা ছাড়া উপায় নেই। জেলে যেতে আমার কোনো সমস্যা নেই। হমভূ-ডমরুকে নিয়ে সমস্যা। বিনা কারণে ওরা কেন আমার সঙ্গে জেল খাটবে? আরে শোন, তুই কোনো চিন্তা করবি না। বাসায় রফিক আছে।
বলেই সানাউল্লাহ টেলিফোন রেখে দিলেন। এখন কথা বাড়ানো মানেই ঝামেলা।
নরুন্দ সাহেব কঠিন চোখে তাকিয়ে আছেন। রাগে গনগন করছেন। কথাও ঠিকমতো বলতে পারছেন না। কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। মুখে থুথু এসে পড়ছে।
নরুন্দ বললেন, আপনি কী মনে করে চার লোক নিয়ে আমার বাড়িতে এসে উঠলেন? কোন সাহসে এই কাজটা করলেন। আমার বাড়িটা কি সরাইখানা?
সানাউল্লাহ হাসি হাসি মুখে বললেন, এরা সবাই সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, একজন ডাক্তার। বাকি দুজনের পরিচয় এখনো জানি না। এই দুজন এখনো ঘোরের মধ্যে আছেন। ঘোর কাটলেই পরিচয় পাব। তবে এই দুজনও বিশিষ্ট ব্যক্তি।
বিশিষ্ট ব্যক্তির আমি কেঁথা পুড়ি।
সানাউল্লাহ বললেন, শুধু শুধু কথা পুড়বেন কেন স্যার? আমরা একটা ঘরে সবাই থাকব। কথায় আছে না, যদি হয় সুজন তেঁতুল পাতায় নজন। আমরা মাত্র পাঁচজন।
আমি আপনার সুজন।
আপনার কথা বলছি না স্যার। আমরা পাঁচ বন্ধু সুজন। আমাদের একটা ঘর। দিলেই চলবে। আর কিছু লাগবে না। মেঝেতে পার্টি পেতে সবাই শুয়ে থাকব।
আমার ঘর কোথায় যে থাকবেন?
বসার ঘরে শুয়ে থাকব। এবং তার জন্যে পেইং গেস্ট হিসেবে আপনাকে টাকা দেব।
এই কথায় নরুন্দ খানিটা নরম হলেন। বিরক্ত গলায় বললেন, পার পারসন কত করে দেবেন।
সেটা স্যার আপনি ঠিক করে দিন। ফুড এন্ড লজিং। বাইরে হোটেলে খাওয়া আমাদের জন্যে সমস্যা। খাওয়া নিয়ে চিন্তা করবেন না। যা খেতে দিবেন তাই খাব। সিম্পল ডাল-ভাতও চলবে। আমাদের কাছে নানা ধরনের আচার আছে। আচার দিয়ে খেয়ে ফেলব।
জনপ্রতি প্রতিদিন একহাজার করে টাকা দিতে হবে। রাজি আছেন কিনা বলুন। এক পয়সা কম হবে না।
সানাউল্লাহ বললেন, আমি রাজি। শুধু একটা অনুরোধ, আমার সঙ্গে দুটা ভূতের বাচ্চা থাকবে। ওদের ফ্রি করে দিতে হবে।
নরুন্দ হতভম্ব গলায় বললেন, ফাজলামি করছেন?
সানাউল্লাহ বললেন, ফাজলামি করব কেন স্যার? এই যে এরা দুজন আপনার সামনেই আছে। দুই ভাইবোন। ভাইটার নাম হমডু, বোনটার নাম ডমরু। এই তোমরা সালাম দাও। ইনি বিখ্যাত ভূত বিশেষজ্ঞ নরুন্দ সাহেব।
নরুন্দ চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছেন। সানাউল্লাহ বললেন, স্যার, এরা আপনাকে সালাম দিয়েছে।
নরুন্দ বললেন, আপনার চেহারা দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই যে আপনি বিরাট এক ফাজিল লোক। মায়ের কাছে মাসির গল্প ফেঁদেছেন। আমার কাছে ভূতের বাচ্চার গল্প।
সানাউল্লাহ বললেন, এই মুহূর্তে আপনি ওদের দেখতে পারছেন না কারণ এরা দেহধারণ করে নি। আপনার উগ্র মেজাজ দেখে ভয় পেয়েছে। ভয় পেলে এরা দেহধারণ করতে পারে না।
নরুন্দ হুঙ্কার দিলেন, Stop your cheater.
সানাউল্লাহ চুপ করে গেলেন। হমডু ডমরু ভালো ভয় পেয়েছে। দুজনই লাফ দিয়ে সানাউল্লাহর কোলে উঠে পড়েছে। ডমরু নানা ভঙ্গিমায় নন্দ সাহেবকে ভেংচি দিচ্ছে। রক্ষা যে তিনি সেই ভেংচি দেখছেন না। দেখতে পেলে তাঁর খবর হয়ে যেত।
পত্রিকায় সানাউল্লাহর হাসি হাসি মুখের ছবি ছাপা হয়েছে। ছবির ওপরে লেখা–
এঁকে ধরিয়ে দিন।
সমাজের উপকার করুন।
বিজ্ঞাপন দিয়েছেন ডাক্তার জোহরা খানম এবং তাকে ধরিয়ে দেবার জন্যে নগদ দশ হাজার টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করেছেন। পত্রিকায় ঘটনার বিবরণ হিসেবে বলা হয়েছে সানাউল্লাহ নামের এই লোক ক্লিনিকে শুধু যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে তা-না, ক্লিনিকের প্রতিটি সদস্যকে কমোডের নোংরা পানি খেতে বাধ্য করেছে। ক্লিনিকের তিনজন ভয়ঙ্কর মানসিক রোগীকেও নিয়ে পালিয়ে গেছে।