জোহরা খানব বিড়বিড় করে বললেন, Oh God!
হামিদ সানাউল্লাহর দিকে তাকিয়ে হতাশ গলায় বললেন, কী জন্যে অ্যাকশনের ঘোষণা দিয়েছি কিছুই ঘরে নাই। সানাউল্লাহ কানে কানে মনে করিয়ে দিলেন।
জোহরা খানম বললেন,আমি ধৈর্যের শেষ সীমানায় উপস্থিত হয়েছি। পুলিশ ডাকা ছাড়া এখন আর আমার হাতে Optionনাই।
হামিদ বলেন, অবশ্যই পুলিশ ডাকবে। আপনাকে ডাকতে হবে না। আমিই ডেকে দিব। ম্যাডাম, মেয়েছেলেরা অনেক ধৈর্যশীল হয়। আপনার ধৈর্য কম। এর একমাত্র কারণ আপনার গোঁফ। গোঁফের জন্যে আপনার মধ্যে কিছু পুরুষস্বভাব চলে এসেছে। পুরুষদের ধৈর্য কম হয়। হয় আপনি সকালে ঘুম থেকে উঠেভকরে ফেলবেন।ধৈর্য ফিরে পাবার এইটাই একমাত্র পথ।
জোহরা খানম থমথমে মুখে হাতে টেলিফোন নিলেন। নিচু গলায় কিছু কথা বললেন। কী কথা কার সঙ্গে কথা কিছুই বুঝা গেল না। দুটা শব্দ শুধু বুঝা গেল। চাঁদাবাজ এবং সন্ত্রাসী হামিদ মোটেই বিচলিত হলেন না।
হামিদের একজন এ্যাসিসটেন্ট দরজায় উঁকি দিল। খড়খড়া গলায় বলল, ওস্তাদ কিছু লাগবে?
হামিদ বললেন, একটা ওয়ান টাইম ব্লেজার নিয়ে এসে যায় গোঁফ ফেলে দিতে রাজি হয়েছেন। আর বিশেষ পানি লাগবে এক গ্লাস।
অ্যাসিসটেন্ট দ্রুত বের হয়ে গেল। জোহরা বেগম বলনে, থানার সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে দশ মিনিটের মধ্যে পুলিশ চলে আসবে।
হামিদ বললেন, রাস্তায় যেমন যানজট, একঘণ্টার আগে পুলিশ আসবে না। আপনি নিশ্চিন্ত থাকেন। এর মধ্যে লক্ষ্মী মেয়ের মতো গোঁফ ফেলে দিন। আপনার জন্যে পানি আনা হবে। দৈনিক জাত গ্লাস পানি খাওয়া দরকার। পানি যত খাবেন তত ভালো। এর মধ্যে ওসি সাহেবের সঙ্গে আরেকবার যোগাযোগ করে তাড়াতাড়ি আসতে বলুন। আমার নামটা বলুন। আমার নাম কমিশনার হামিদ। বাজারে প্রচলিত নাম চ্যাপ্টা হামিদ। অথচ আমার মধ্যে চ্যাপ্টা কিছুই নাই।
রিসিপশনিস্টের ঘর থেকে বিকট ঝনঝন শব্দ হলো। মনে হচ্ছে টিভি ভাঙা হয়েছে। পিকচার টিউব ফাটলে এমন বিকট আওয়াজ হয়।
ওয়ান টাইম রেজার এবং এক গ্লাস পানি চলে এসেছে। জোহরা খানম দ্বিতীয় দফায় থানায় টেলিফোন করলেন। চ্যাপ্টা হামিদ শব্দ দুটা কয়েকবার শোনা গেল। টেলিফোন বার্তা শেষ হবার পর জোহরা খানমের মুখ ছাইবর্ণ হয়ে গেল। তাঁর কথাবার্তাও খানিকটা জড়িয়ে গেল। তিনি হাতে ওয়ানটাইম রেজার নিতে নিতে বললেন, আপনারা যা বলছেন তা যদি করি তাহলে কি আপনার বিদায় হবেন?
হামিদ দরাজ গলায় বললেন, অবশ্যই। আমি ওয়ান ওয়ার্ড ম্যান। এক কথার মানুষ।
সানাউল্লাহ বললেন, আমরা শুধু যাওয়ার সময় আপনাদের একজন পেশেন্টকে সঙ্গে নিয়ে যাব। পেশেন্টের নাম আবু করিম।
জোহরা খানম বাথরুমে ঢুকে গেলেন। বাথরুম থেকে বের হবার পর তাঁকে অদ্ভুত দেখাতে লাগল। হামিদ বললেন, গোঁফ থাকা অবস্থাতেই তো ভালো ছিল। এখন উনার চেহারায় বার বাদর ভাব চলে এসেছে। যখন গোফ ছিল তখন সবাই তাকিয়ে থাকত গোঁফের দিকে। এখন গোঁফ ফেলে দেবার কারণে পুরো মুখ একসঙ্গে চোখে পড়ছে বলে এই অবস্থা। যাই হোক, ম্যাডাম গ্লাসের পানিটা এক চুমুকে খেয়ে ফেলুন। আমরা বিদায় হই।
বিনাবাক্য ব্যয়ে জোহরা খানম পানির গ্লাস শেষ করলেন। হামিদ উঠে দাড়াতে দাড়াতে বললেন, আপনাকে দেয়া হয়েছিল কমোডের পানি। এটা আমার শাস্তির একটা অংশ। মেয়েছেলের গায়ে তো হাত তুলতে পারি না। কমোডের এক গ্লাস পানি খাইয়ে দেই। সপ্তাহখানিক কিছু খেতে পারবেন না। ক্রমাগত বমি করবেন। তারপর ইনশাল্লাহ ঠিক হয়ে যাবে।
হামিদের কথা শেষ হবার আগেই জোহরা খানম টেবিল ভাসিয়ে বিকট শব্দে বমি করলেন। রিসিপশনিস্টের ঘরের টেলিভিশনের পিকচার টিউব ফাটার সময় যে আওয়াজ হয়েছিল তারচেয়েও বড় আওয়াজ হলো।
শব্দ কী কারণে হয়েছে দেখার জন্যে ভীত চোখে যে নার্স উঁকি দিল তার নাম রেনুকা।
সানাউল্লাহ আনন্দিত গলায় বললেন, রেনুকা! মা কেমন আছ?
রেনুকা জবাব দিল না। আতঙ্কে তার চোখ ছাইবর্ণ হয়ে গেল। সানাউল্লাহ বললেন, আমার বন্ধু আবু করিমের মতো রোগী এখানে কয়জন আছে ঠিকমতো বলো। পাগল না অথচ পাগল বানিয়ে চিকিৎসা হচ্ছে।
রেনুকা বলল, তিনজন।
সানাউল্লাহ বললেন, এই তিনজনকে দ্রুত ছাড়ার ব্যবস্থা কর। আমাদের মাইক্রোবাস আছে, মাইক্রোবাসে তুলে দাও। অর্ডার তোমার ম্যাডামই দিতেন। উনি বৃমির ওপর আছেন। অর্ডার দেয়ার মতো অবস্থা তাঁর না।
রেনুকা তাকালো জোহরা খানমের দিকে। জোহরা খানম কিছু একটা বলতে গিয়ে আবারো বিকট শব্দে বমি করলেন।
হামিদ বললেন, এই ক্লিনিকে যারা কাজ করছে সবাই দোষী। প্রত্যেককেই বিশেষ পানি খাওয়া উচিত। অপরাধের শাস্তি। রেনুকা মা! তোমাকে যা করতে বলা হয়েছে তা কর। তারপর তুমি নিজেই কমোড থেকে এক কাপ পানি তুলে খেয়ে ফেলবে। তোমাকে মা ডেকে ফেলেছি এইজন্যে কনসেশন। আমার সামনে পানি তুলবে, আমার সামনে খাবে। ঠিক আছে লক্ষ্মী মা আমার?
জাবিন দুবাই এয়ারপোর্ট পর্যন্ত চলে এসেছে
জাবিন দুবাই এয়ারপোর্ট পর্যন্ত চলে এসেছে। সেখান থেকে খুশি খুশি গলায় বাবাকে টেলিফোনে জানিয়েছে, বাবা, আর মাত্র বারো ঘণ্টার মধ্যে তোমার সঙ্গে দেখা হবে।
সানাউল্লাহ বললেন, একা আসছিস না-কি জামাইও সঙ্গে আছে?
জাবিন বলল, ওকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছি। ঢাকায় অনেক কাজকর্ম, তাকে সেইসব দেখতে হবে।