সানাউল্লাহ বললেন, হাজার শব্দটা কালি দিয়ে কাটা। তোমার হাতে যখন চিঠি দিয়েছে তখন আমার বন্ধু হাজার কেটে দিয়েছে। এই দেখ।
রেনুকা চোখ বড় বড় করে বলল, অতি বদলোক তো!
সানাউল্লাহ বললেন, বদ লোক না। অতি বুদ্ধিমান লোক। এমন একজন বুদ্ধিমান মানুষকে পাগল হিসেবে তোমরা আটকে রেখেছ। তুমি দশ টাকা নিয়ে বিদেয় হও। আরেকটা কথা, আমার বন্ধুকে তুমি যদি এখন কোনো ঝামেলা কর তাহলে তুমি নিজে বিরাট যন্ত্রণায় পড়বে।
কী যন্ত্রণায় পড়ব?
সেটা এখনো চিন্তা করি নাই। যাই হোক, চা খাবে? চা খেতে চাইলে চা খাওয়াতে পারি।
বেনুকা থমথমে গলায় বলল, চা খাব না।
সানাউল্লাহ বললেন, দশ টাকা পেয়ে তুমি মন বেশি খারাপ করে ফেলেছ। এটা তো মা ঠিক না। এই দশ টাকা রোজগার করতে একজন ভিক্ষুকের চার ঘণ্টা কঠিন পরিশ্রম করতে হয়।
রেনুকা বলল, আমার উপর এত বড় চালাকি কেউ করে নাই।
সানাউল্লাহ বললেন, এতে তোমার খুশি হওয়া উচিত। চালাকের সঙ্গেই মানুষ চালাকি করে। বোকার সঙ্গে করে না। দশ টাকার ঘটনায় প্রমাণিত হলো তুমি বোকা না।
রেনুকা কোনো কথা না বলে ছুটে বের হয়ে গেল।
সানাউল্লাহ ঝিম ধরে বসে আছেন। বন্ধু আবু করিমকে কীভাবে জেল থেকে বের করবেন বুঝতে পারছেন না। ডা. জোহরা খানম কঠিন পনীর অর্থাৎ কঠিন চীজ। বিষয়টা নিয়ে যে আইনুদ্দিনের সঙ্গে পরামর্শ করবেন তাও সম্ভব না। মানুষের জ্বর যেমন মাথায় উঠে যায় আইনুদ্দিনের অংক মাথায় উঠে গেছে। রেনুকা মেয়েটার গা থেকে যেমন ফিনাইলের গন্ধ আসছিল আইনুদ্দিনের গা থেকে এখন অংকের গন্ধ আসছে।
বাবা! তোমার কী হয়েছে?
সানাউল্লাহ চমকে তাকালেন। ভূত-কন্যা ডমরু তার কোলে বসে আছে। এই মেয়েটা তাকে প্রায়ই চমকাচ্ছে। যখন তখন কোলে এসে বসছে। ঘাড় ধরে ঝুলছে। ডমরুকে আজ কুচকুচে কালো দেখাচ্ছে। সানাউল্লাহর চমকে ওঠার এটাও একটা কারণ। মড়ু ডমরু সবসময় এক চেহারায় দেখা দেয় তা-নী। একেক দিন একেক চেহারায় উদয় হয়।
সানাউল্লাহ তাঁর বিপদের কথা বললেন। ডমরু বলল, তুমি হামিদ চাচার কাছে যাও, উনি ব্যবস্থা করে দেবেন।
সানাউল্লাহ ভূত-মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, ইউ নটি ভূত গার্ল। ভালো বুদ্ধি দিয়েছ।
হামিদুর রহমান পরিচিত কাউকে সেইভাবে চিনতে না পারলেও সানাউল্লাহকে চিনলেন। এবং আনন্দিত গলায় বললেন, কেমন আছ? তোমার নাম ভুলে গেছি কিন্তু চেহারা মনে আছে। তুমি জাবিনের বাবা হয়েছে?
জি হয়েছে।
ব্যাটারি চিকিৎসা চলছে তো। এই চিকিৎসায় এখন অনেক সুস্থ আছি। স্মৃতিশক্তি অনেকটাই ফিরেছে।
সানাউল্লাহ বললেন, আপনার কাছে একটা কাজে এসেছি।
হামিদ বললেন, আমার কোনো আত্মীয়স্বজন আমার কাছে কাজে আসবে আর আমি মুখ ফিরিয়ে থাকব— এই ঘটনা কোনোদিন ঘটবে না। বলো কী কাজ?
সানাউল্লাহ বললেন, এই চিঠিটা একটু পড়েন ভাইজান।
হামিদ চিঠি পড়ে বললেন, কে আছ গাড়ি বের কর। Action Action Direct Action. আমি জাবিনের বাবাকে নিয়ে জিপে করে যাব। পেছনে আসবে মাইক্রোবাস। মাইক্রোবাসে যারা সবসময় থাকে তারা থাকবে। শুধু রব্বানি যেন না যায়। এর মাধা অতিরিক্ত গরম। একে যতবার নিয়ে গেছি বিপদে পড়েছি।
ডা, জোহরা খানমের সামনে হামিদুর রহমান এবং সানাউল্লাহ বসা। জোহরা খানম চোখ সরু করে তাকিয়ে আছেন। তিনি খবর পেয়েছেন ক্লিনিকের গেটের দুজন দারোয়ান কিছুক্ষণ আগে দৌড়ে পালিয়ে গেছে। ক্লিনিকের ভেতর একটা মাইক্রোবাস ঢুকেছে। বাসভর্তি সন্দেহজনক চরিত্রের লোকজন। রিসিপশনে যে মেয়েটা বসে ছিল সে জানালা খুলে লাফ দিয়ে পালাতে গিয়ে পা ভেঙেছে। তাকে তিন নম্বর কেবিনে রাখা হয়েছে। জোহরা খানম ব্যাপার কিছুই বুঝতে পারছেন না। তিনি শীতল গলায় বললেন, আপনারা কী চান?
হামিদ বললেন, আপনার ক্লিনিকের নামডাক শুনেছি। ভর্তি হওয়ার জন্যে এসেছি। আমাকে একটা ভিআইপি কেবিন দিন। আমি ভিআইপি পারসন। রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
জোহরা খানম বললেন, ভর্তি হতে চাইলেই তো ভর্তি হওয়া যায় না। আপনার সমস্যা কী, কেন ভর্তি হতে চাচ্ছেন, তা জানতে হবে।
হামিদ বললেন, আমার ব্যাটারি খাওয়া রোগ হয়েছে। সকালে নাশতার সঙ্গে একটা ব্যাটারি খাই। দেশী কিংবা চায়নিজ ব্যাটারি খেতে পারি না। স্টমাক আপসেট হয়। তবে আমেরিকান বা জার্মান ব্যাটারিতে সমস্যা হয় না।
জোহরা খানম বললেন, পরিষ্কার বুঝতে পারছি আপনারা আমাকে ভয় দেখাতে এসেছেন। ভয়টা কেন দেখাতে চাচ্ছেন বুঝতে পারছি না। চাদা চান? যে প্রতিষ্ঠান মানসিক রোগীদের সমস্যায় নিবেদিত, তার কাছ থেকেও চাদা তুলবেন?
সানাউল্লাহ বললেন, ম্যাডাম, চাঁদা তুলতে আসি নি। আপনার প্রেসার মাপার যন্ত্রটা দিন। প্রেসার মাপার যন্ত্রে হাত দিয়ে বলব, ইহা সত্য। আমার প্রেসারের সমস্যা আছে। কাজেই প্রেসার মাপার যন্ত্রে হাত রেখে মিথ্যা বলব না।
হামিদ বলল, চড়-থাপ্পড় দেয়ার জন্যেও আসি নাই। মেয়ে হচ্ছে মাতৃজাতি। মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত। হাদিসের কথা।
তাহলে চান কী?
হামিদ বললেন, কী চাইতে এসেছি এখন ভুলে গেছি। বেশিক্ষন আমার কোনো কথা মনে থাকে না। যদিও ব্যাটারির চিকিৎসা চলছে। তবে এই চিকিৎসার ফল বেশিক্ষণ থাকে না। অবশ্যি চিন্তার কিছু নাই। আমার ভাই সঙ্গে আছে, সে আমাকে মনে করিয়ে দিবে। এবং যথাসময়ে Action নেয়া হবে। Action Action Direct Action. ম্যাডাম, কিছু মনে নিবেন আমি মাঝে মাঝে স্লোগান দিব। পলিটিক্যাল লোক তো। স্লোগান না দিয়ে বেশিক্ষণ থাকতে পারি না।