খেয়ে দেখেছ?
এক চামচ খেয়ে মাথা ঘুরে পড়ে গেছি। দুবোতল বানিয়েছি। একটা বোতল তুমি নিয়ে যেও। তবে না খাওয়াই ভালো। সব আবিষ্কার সমাজের জন্যে মঙ্গলজনক হয় না। যেমন ধর অ্যাটম বোমা। এই বোমা সমাজের কোনো উপকার করে নি। ধ্বংসযজ্ঞ বয়ে নিয়ে এসেছে।
তোমার এই আচারের নাম কী দিয়েছ?
বোমা-আচার।
নাম ভালো হয়েছে, তবে রবি ঠাকুরের কাছ থেকে নাম ধার নিলে ভালো হতো। বিশ্বকবির নামের সঙ্গে আচারের নাম যুক্ত থাকত।
আবু করিম বললেন, আচার নিয়ে কি তাঁর কোনো কবিতা আছে?
সানাউল্লাহ বললেন, আছে নিশ্চয়ই। এত লিখেছেন— আচার নিয়ে কিছু লিখেবন না তা হতেই পারে না। আমার অবশ্যি জানা নেই। রবীন্দ্রভক্তদের কাছ থেকে খোঁজ নিতে হবে। তবে আমসত্ত্ব নিয়ে তাঁর কবিতা যেহেতু আছে, আচার নিয়েও থাকার কথা।
আমসত্ত্ব নিয়ে কবিতা আছে? বলো কী! কী কবিতা?
আমসত্ত্ব দুধে ফেলি, তাহাতে কদলী দলি,
সন্দেশ মাখিয়া দিয়া তাতে–
হাপুস হুপুস শব্দ চারিদিক নিস্তব্ধ,
পিঁপিড়া কাঁদিয়া পাতে।
আবু করিম বললেন, পিঁপিড়া কেঁদে যাচ্ছে বিষয়টা বুঝলাম না। পিঁপিড়া কেন কাঁদবে?
সানাউল্লাহ বললেন, আমি নিজেও বুঝতে পারছি না। কবিগুরু বেঁচে থাকলে জিজ্ঞেস করতাম। উনি মারা গিয়ে সাহিত্যের ক্ষতি তো করেছেনই, আরো অনেক ক্ষতি করেছেন। নতুন নাম পাওয়া যাচ্ছে না। উনি বেঁচে থাকলে মোবাইল টেলিফোনে অচারের নাম জানতে চেয়ে এসএমএস পাঠাতাম। উনি সঙ্গে সঙ্গে নাম দিয়ে দিতেন।
আবু করিম বললেন, তোমার কাছ থেকে রবীন্দ্রনাথের আমসত্ত্বের কবিতাটা শোনার পর থেকে অন্য একটা আচারের আইডিয়া মাথায় ঘুরছে। বানানো ঠিক হবে কি-না বুঝতে পারছি না।
কী আইডিয়া?
পিঁপড়ার আচার।
বলো কী!
আবু করিম বিরক্ত হয়ে বললেন, বলো কী বলে চেঁচিয়ে ওঠার কিছু নেই। পিঁপড়া আমরা সব সময় খাচ্ছি। চিনির সঙ্গে খাচ্ছি। চায়ের সঙ্গে খাচ্ছি। পিঁপড়ার শরীরে একটা অ্যাসিড আছে। অ্যাসিডের নাম ফরমিক অ্যাসিড। এই অ্যাসিডের কারণে পিঁপড়ার স্বাদ হবে টক। বাইরে থেকে কিছু টক দেয়া হবে। এবং কবিগুরুর নামে এই আচারের নাম হবে–পিপিলিকা ক্রন্দন।
পিপিলিকা ক্রন্দন?
হ্যাঁ, পিপিলিকা ক্রন্দন। এবং আচারের বোতলে কবিগুরুর ছবি থাকবে। ছবির নিচে থাকবে— এই আচারের রেসিপি কবিগুরুর রচনা থেকে প্রাপ্ত।
সানাউল্লাহ বললেন, রবীন্দ্রভক্তরা রাগ করতে পারেন।
আবু করিম বিরক্ত গলায় বললেন, রবীন্দ্রনাথ কি শুধু রবীন্দ্রভক্তদের সম্পত্তি? উনি সবার সম্পত্তি। পিঁপড়ার আচারের বিষয়ে আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। এই বিষয়ে আর কথা বলবে না। অন্য কোনো বিষয়ে কথা বলতে চাইলে বলো।
সানাউল্লাহ বললেন, একটা বই লেখার বিষয়ে তোমার সঙ্গে পরামর্শ ছিল।
আবু করিম অবাক হয়ে বললেন, বই লিখছ না-কি!
শুরু করে দিয়েছি, চার পৃষ্ঠার মতো লেখা হয়ে গেছে।
বিষয় কী?
সানাউল্লাহ ইতস্তত করে বললেন, ভূত-বিষয়ক একটা বই। যে চার পৃষ্ঠা লিখেছি সঙ্গে করে নিয়ে এসেছি। পড়লেই বুঝবে। সানাউল্লাহ পাঞ্জাবির পকেট থেকে লেখা বের করলেন।
আবু করিম সঙ্গে সঙ্গেই লেখা পড়া শুরু করলেন।
দিনের শেষে ভূতের দেশে
ভূত আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। বাংলাদেশের ছেলেমেয়েদের বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়ার সঙ্গে ভূত যুক্ত। বাংলা ভাষায় ভূত উঠে এসেছে বাগধারায়। যেমন, ভূতের মুখে রামনাম, সর্ষের ভেতর ভূত ইত্যাদি।
দুঃখ এবং পরিতাপের বিষয় এই, ভূত বিষয়ে আমাদের সমক কোনো জ্ঞান নেই।
এই পর্যন্ত পড়েই আবু করিম বললেন, তোমার সমস্যাটা কী? তুমি কি মানসিকভাবে অসুস্থ?
সানাউল্লাহ বললেন, বুঝতে পারছি না। হতে পারে।
আবু করিম বললেন, মানসিক রোগী ছাড়া কারো পক্ষে ভূত নিয়ে গবেষণাধর্মী বই লেখা সম্ভব না। কারণ ভূত কোনো গবেষণার বিষয় না। কেউ কোনোদিন ভূত দেখে নি। তুমি নিজেও দেখ নি। বলো দেখেছ?
সানাউল্লাহ ক্ষীণ গলায় বললেন, হুঁ।
আবু করিম বললেন, হুঁ মানে! দেখেছ ভূত?
দেখেছি।
কোথায় দেখেছ? বাঁশঝাড়ে?
দুটা ভূতের বাচ্চা আমার সঙ্গে বেশ কিছুদিন ধরে বাস করছে। একজনের নাম হমডু। আরেকজনের নাম ডমরু। এরা ভাইবোন।
আবু করিম বললেন, এরা এখনো তোমার বাসায় আছে?
আছে।
আমি গেলে দেখতে পাব?
সানাউল্লাহ বললেন, রাতে গেলে দেখতে পাবে। দিনে তারা ঘুমায়। দেহধারী হয় না বলে দিনে দেখা যায় না। ওরা আবার তোমার আচারের মহাভক্ত। আমিষ আচারের বোতলটা চেটেপুটে খেয়েছে।
ভূত আচার খায়?
খায়। আরো অনেক কিছু খায়। ব্যাটারি খায়। মধু খায়। তবে সলিড় কিছু খায় না। ব্যাটারির কার্বন দণ্ডটা খায় না।
আবু করিম আবার পড়া শুরু করলেন।
মানুষ মরলেই কি ভূত হয়? না-কি ভূত সম্পূর্ণ ভিন্ন এক প্রজাতি? মানুষদের যেমন জন্ম-মৃত্যু আছে, ভূতদেরও কি আছে? তারা কি বংশবৃদ্ধি করে?
মহামতি ডারউইন প্রমাণ করেছেন— selective evolution এর মাধ্যমে মানবজাতি পৃথিবীতে এসেছে। ভূতদের ক্ষেত্রে কি এই তথ্য সত্য?
মানুষের সঙ্গে ভূতের কোন কোন ক্ষেত্রে প্রভেদ? তারা কি আহার গ্রহণ করে? মানুষ যেমন রাজনীতি বিষয়ে আসক্ত তারাও কি তাই? তাদের মধ্যেও কি বিএনপি-আওয়ামী লীগ (কথা প্রসঙ্গে বলছি) আছে?
তাদের শিক্ষা ব্যবস্থাটা কেমন? আমাদের যেমন উচ্চতর শিক্ষার জন্যে বিশ্ববিদ্যালয় আছে, তাদেরও কি আছে? তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কি লালদল, নীলদল, শাদাদলে বিভক্ত? তাদের ছাত্ররাজনীতির অবস্থা কী?